ব্রেকিং

x

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারে নাম স্বজনের, ফোন নম্বর চেয়ারম্যানের

রবিবার, ২৮ জুন ২০২০ | ১০:৪৭ অপরাহ্ণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারে নাম স্বজনের, ফোন নম্বর চেয়ারম্যানের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের মুসলেম খানের ছেলে শাহাদাৎ খানের নাম প্রধানমন্ত্রীর ২৫০০ টাকা অর্থ সহায়তার তালিকায় রয়েছে। তবে ওই নামের পাশে দেওয়া আছে খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কবির আহমেদ খাঁনের ফোন নম্বর। একই উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের অর্থ সহায়তার তালিকায় রয়েছে প্রবাসী, মেম্বারদের স্বামী-সন্তান, সরকারি চাকুরিজীবীর নাম। পশ্চিম ইউনিয়নে তালিকায় তোলা হয়েছে পৌরসভার বাসিন্দার নাম। পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু জাহের দিয়েছেন বিত্তশালী স্বজনদের নাম।


প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ২৫০০ টাকা প্রাপ্তির ওই জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তালিকায় রয়েছে আরো অনেক অনিয়ম। এসব অনিয়মের কথা উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে গত ২১ জুন কাউন্সিলর মো. আবু জাহের, ২২ জুন কসবা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মানিক মিয়া, ২৩ জুন খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কবির আহম্মেদ খান এবং ২৪ জুন বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়। পাশাপাশি কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অনুলিপিও দেওয়া হয়।


আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন করে আরও ৯৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত

কসবা পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আবু জাহেরে বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগে ১১টি নাম দিয়ে এদের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া তাঁদের মধ্যে একাধিক বিত্তশালী আছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

আত্মীয়করণ, বিত্তশালী, নিজের অনুসারী, পৌরসভার বাসিন্দা, ভুল তথ্য দিয়ে নাম অন্তর্ভূক্ত করণসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে কসবা পশ্চিম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে। অভিযোগের সঙ্গে ৩৪ জনের নামের তালিকাও দেওয়া হয়।

খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ৩৩ জনের নাম তালিকায় উঠানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। স্বজনের নামের পাশে নিজের মোবাইল ফোন নম্বর, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি, বিত্তশালীদের নাম তিনি অন্তর্ভূক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: আখাউড়ায় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নতুন করে আরও ৭ জন করোনায় আক্রান্ত

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আনা হয়েছে, বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল-মামুন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। তিনি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ১২০ জনের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি প্রবাসী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বিত্তশালীদের নাম রয়েছে।

কসবার পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মানিক মিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের তালিকা নিয়ে একটি অভিযোগ হয়েছে শুনেছি। তবে অভিযোগে যে পাঁচজনের স্বাক্ষর রয়েছে তাঁরা ভোটার আইডিতে টিপসই দেন। তাঁরা বলেছে অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সানু নামে একজন কাগজে কলমে পৌরসভার বাসিন্দা হলেও ছোট বেলা থেকেই সে পশ্চিম ইউনিয়নে থাকে। এ ছাড়া আমার যে আত্মীয় স্বজনের কথা বলা হচ্ছে তারা খুব গরীব। যতটুকু সময় পাওয়া গেছে এর মধ্যেই যাচাই-বাছাই করে তালিকা জমা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: একই ঘরে থেকেও কোলের সন্তানকে আদর করছে না ইউএনও, মাকে না পেয়ে কাদছে রইফি

খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কবির আহমেদ বলেন, শাহাদাত খানের নামের সঙ্গে যে আমার ফোন নম্বর গেছে সেটা আমি জানি না। সে আমার আত্মীয়, খুব গরীব। কিন্তু আমার নম্বর কেন দিলো বুঝতে পারছি না। তালিকা তৈরি নিয়ে আমার কোনো ধরণের স্বজনপ্রীতি ছিলো না। আমি শুরুতেই তালিকা টানিয়ে দিয়েছি। আমার কারণে সারাদেশে অনেককে তালিকা টানিয়ে দিতে বাধ্য হয়। যদি কোনো মেম্বার তালিকা দিতে গিয়ে স্বজনপ্রীতি করে থাকে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আল-মামুন ভূঁইয়া বলেন, তালিকায় আমার কোনো আত্মীয় স্বজন নেই। মেম্বারদের মাধ্যমে নাম এনে সকলে সিদ্ধান্ত নিয়ে তালিকা দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই-বাছাই করে। যদি তখন আমাকে জানানো হতো তাহলে বাদ দিয়ে দিতে পারতাম। তবে নজরে আসার পর একজন মেম্বারের স্বামী, আরেকজন মেম্বার ছেলের নাম বাদ দিয়েছি।

আরও পড়ুন: আখাউড়ার করোনা যোদ্ধা ইউএনও রেইনা করোনায় আক্রান্ত

ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আবু জাহের বলেন, আমার আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী, আপন ভাগিনাসহ একেবারে কাছের স্বজনদের নাম দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। হান্নান নামে আমার ভাই থাকলেও তাঁর স্ত্রীর নাম রিনা বেগম না। এ ছাড়া মেয়র যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই তালিকা হয়েছে। তিনিই তালিকায় নাম দিয়েছেন বেশি। আমার কাছ থেকে মাত্র ২০-২৫টি নাম নেওয়া হয়েছে। মেয়রের পক্ষের কাউন্সিলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় সেগুলোকে ঢাকতে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমার আপন কেউ তালিকায় থাকাটা প্রমাণ করতে পারলে আমি কাউন্সিলর থেকে পদত্যাগ করবো।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!