বিশ্বজিৎ পাল বাবু:
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শাহনাজ রশীদ করোনা পরিস্থিতিতে বিনা অনুমতিতে সাত মাস ধরে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু দায়িত্ব পালন না করলেও তিনি বেতন তুলছেন নিয়মিত। শুধু কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে কারণ দর্শানোর জবাবে ডা. শাহনাজ রশীদ উল্লেখ করেছেন, তিনি একজন অ্যাজমা রোগী। এ কারণে গণহারে রোগী দেখা তাঁর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া শুরুর দিকে লকডাউনে পরিবহনের ব্যবস্থা না করতে পারায় আসতে পারেননি বলেও এক চিঠিতে উল্লেখ করেন।
এদিকে ডা. শাহনাজ রশীদ আগামী ৮ অক্টোবর কর্মস্থলে যোগদান করছেন এমন খবরে বিব্রতবোধ করছেন অন্য চিকিৎসকরা। মানুষের বিপদের সময় পাশে না থাকায় এখন তাঁর সঙ্গে দায়িত্ব পালনেও অনীহা প্রকাশ করেছেন অনেক চিকিৎসক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে গত ২৪ মার্চ ডা. শাহনাজ রশিদ তিন দিনের ছুটির আবেদন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকায় গিয়ে করোনার পরীক্ষা করালে নেগেটিভ আসে। তবে এরপর আর কর্মস্থলে আসেননি তিনি। পরে ১৮ এপ্রিল, ৬ মে ও ১ জুলাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো আলাদা তিনটি চিঠিতে অসুস্থতা জন্য ছুটির আবেদন করেন। তবে একটি আবেদনও মঞ্জুর হয়নি বলে নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে গত রবিবার মোবাইল ফোনে ডা. শাহনাজ রশীদ বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বেশি থাকায় আমার পক্ষে দায়িত্ব পালন সম্ভব ছিল না। আগে থেকেই আমার হাঁপানি আছে। ফলে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি আক্রান্ত হতাম তাহলে আমার দায়িত্ব কে নিত? আমি আসতে না পারার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এখন তারা আমার ছুটি দেবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার। এখন সংক্রমণ কমে যাওয়ায় আগামী ৮ অক্টোবর কর্মস্থলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ নিয়মিত বেতন তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমেই বেতন উত্তোলন করেছি। এখন যদি স্বাস্থ্য বিভাগ আমার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে চায়—তাহলে নিতে পারে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক এক চিকিৎসক বলেন, মানুষের বিপদের সময় হাসপাতালের অন্য সব চিকিৎসক জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কিন্তু ডা. শাহনাজ রোগীদের পাশে ছিলেন না। তাই এখন তাঁর সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে অনেকেই বিব্রতবোধ করছেন।
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুর রহমান বলেন, ‘ওই চিকিৎসককে যোগদান করানো যাবে না। অনুপস্থিত সময়ে তিনি কী ধরনের ছুটিতে ছিলেন বা কিভাবে অনুপস্থিত ছিলেন—সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা হবে। সেখান থেকে পাওয়া নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ বলেন, ‘বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত ওই চিকিৎসককে একাধিকবার কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় এখন তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com