ব্রেকিং

x

আখাউড়ায় শনিবার কেল্লা বাবার মাজারে ৭ দিনব্যাপী ওরশ শুরু

শুক্রবার, ০৯ আগস্ট ২০১৯ | ১১:০৪ অপরাহ্ণ

আখাউড়ায় শনিবার কেল্লা বাবার মাজারে ৭ দিনব্যাপী ওরশ শুরু

আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে হযরত শাহ পীর কেল্লা শহীদ (রহ:) মাজারের ৭দিন ব্যাপী পবিত্র ওরশ মোবারক।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া খড়মপুর গ্রামে অবস্থিত হযরত শাহ সৈয়দ আহাম্মদ গেছুদারাজ (রহ:) প্রকাশ্য হযরত শাহ পীর কেল্লা বাবার মাজার শরীফের এই ওরশ মুসলমানদের জন্য অন্যতম একটি উৎসব।


ওরশ উপলক্ষে আজ শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই সারা দেশ থেকে আগত লাখো মানুষের ঢলে মুখরিত হয়ে উঠেছে খড়মপুর মাজার শরীফ এলাকা।

এদিকে ওরশকে কেন্দ্র করে আখাউড়া খড়মপুর মাজার শরীফ এলাকা আইনশৃংখলা বাহিনীর নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে।

শনিবার সকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে হযরত শাহ পীর কেল্লা বাবার পবিত্র ওরশ। এই লক্ষ্যে প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে মাজার কমিটির সহ-সভাপতি ও আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা জানিয়েছেন।

আখাউড়া থানার অফিসার ইনর্চাজ রসুল আহমদ নিজামী বলেছেন, পবিত্র ওরশকে কেন্দ্র করে মাজার শরীফ এলাকা আইনশৃংখলা বাহিনীর নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে। মাজারমুখী ভক্ত-আশেকানদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশসহ সব বাহিনীর সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেউ আইন লঙ্ঘন করতে চাইলে বা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

তিনি আরো জানান, ওরশ উপলক্ষে মাজার শরীফের গুরুত্বপুর্ণ ৬০ এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। মাজারের চারপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা তদারকি থাকবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। পবিত্র ওরশ চলাকালীন খড়মপুরের সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক সালেহ নোয়াজ খান জানান, ৭দিন ব্যাপী পবিত্র এই ওরশের প্রথম দিন কাল শনিবার ১০ আগষ্ট থেকে প্রতিদিন রওজা শরিফে গিলাফ চড়ানো, মিলাদ শরিফ, ফাতেহা শরিফ, কোরানখানি ও জিকির-আজকার হবে। ১৪ আগষ্ট বুধবার মধ্যরাতে আখেরি মোনাজাত ও বাদ ফজর শিরনি বিতরণ হবে এবং ১৬ আগষ্ট ৭ দিনব্যাপী এই ওরশের সমাপ্তী ঘটবে।

এদিকে ওরশের একদিন আগে থেকেই জনতার ঢল নেমেছে আখাউড়া খড়মপুর মাজার শরীফে। ইতোমধ্যে মাজারের আশপাশের প্রায় সবকটি জায়গাই লোকে লোকারণ্য। মাজারকে কেন্দ্র করে মানুষের এই ঢল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইন শৃংখলা বাহিনী। পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ সাত শতাধিক আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত থাকবে বলেও জানাগেছে।

এদিকে পবিত্র ওরশকে ঘিরে আজ শুক্রবার থেকেই ভক্ত-আশেকানদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মাজার প্রাঙ্গণ। ওরশের মূল আনুষ্ঠানিতা কাল সকাল থেকে শুরু হলেও আজ শুক্রবার বিকাল থেকেই শুরু হচ্ছে ওরশের প্রাথমিক অনুষ্ঠান। ওরশ উপলক্ষে পীর ফকিরের শত শত আস্থানাকে নতুন করে সাজানো হয়েছে।

১১৮ নম্বর আস্থানা বা কাফেলার কিসমত শাহ চিশতী ও আব্দুর রশিদ জানায়, কেল্লা বাবার মাজার শরীফের নির্দিষ্ট ইতিহাস কেউ জানে না। তবে স্থানীয় ভাবে প্রচারিত যা আছে তা হল তৎকালীন সময় খড়মপুরের জেলেরা তিতাস নদীতে মাছ ধরত । একদিন চৈতন দাস ও তার সঙ্গীরা উক্ত নদীতে মাছ ধরার সময় হঠাৎ তাদের জালে একটি খন্ডিত শির আটকা পড়ে যায় । তখন জেলেরা ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে এবং খন্ডিত শিরটি উঠাতে গেলে আল্লাহর কুদরতে খন্ডিত শির বলতে থাকে ‘‘একজন আস্তিকের সাথে আর একজন নাস্তিকের কখনো মিল হতে পারে না। তোমরা যে পর্যন্ত কলেমা পাঠ করে মুসলমান না হবে ততক্ষণ আমার মস্তক স্পর্শ করবে না ।’’ খন্ডিত মস্তকের এই কথা শুনে মস্তকের কাছ থেকে কলেমা পাঠ করে চৈতন দাস ও সঙ্গীরা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে যায় । মস্তকের নির্দেশ মোতাবেক ইসলামী মতে খড়মপুর কবরস্থানে মস্তক দাফন করে । ধর্মান্তরিত জেলেদের নাম হয় শাহবলা, শাহলো, শাহজাদা, শাহগোরা ও শাহর ওশন । তাঁরাই এই মাজারের আদিম বংশধর । এই মাজারে খ্যতি ধীরে ধীরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে । এ থেকেই শাহ পীর সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ (রহ:) প্রকাশ্য শাহ পীর কেল্লা বাবার পবিত্র মাজার শরীফ নামে পরিচিতি লাভ করে । ২৬০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত মাজার শরীফের জায়গা তৎকালীন আগরতলা রাজ্যের মহারাজা দান করেন ।

বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন যে, আওলিয়া হজরত শাহ জালাল (রঃ) এর সঙ্গে সিলেটে যে ৩৬০ জন অলি এসেছিলেন হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ ছিলেন তাঁদের অন্যতম । তরফ রাজ্যেও রাজা আচক নারায়নের সঙ্গে হজরত শাহজালালের প্রধান সেনাপতি হজরত সৈয়দ নাসিরউদ্দিন যে যুদ্ধ পরিচালনা করেন সে যুদ্ধে হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ শহীদ হন এবং তাঁর মস্তক তিতাস নদীর স্রোতে ভেসে আসে। প্রতি বছর ওরশে কেল্লা বাবার মাজারে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!