ব্রেকিং

x

ফেসবুকের কল্যাণে নয় বছর পর সোহেল ফিরে পেলো পরিবার

মঙ্গলবার, ২৩ জুন ২০২০ | ১১:২০ অপরাহ্ণ

ফেসবুকের কল্যাণে নয় বছর পর সোহেল ফিরে পেলো পরিবার

বিশ্বজিৎ পাল বাবু:
দিন যায়, মাস যায়, যায় বছর। সোহেল ফিরে না। সোহেল মারা গেছেন- এমনটাই ধরে নিয়েছিলো পরিবার। তবে পরিবার নিয়ে সোহেলের ভাবনা নেই। সোহেল মানসিক ভারসাম্যহীন। নইলে কি আর পঁচে যাওয়া আম কুড়িয়ে খায়। তবে সেই আম কুঁড়িয়ে খাওয়া-ই বদলে দিয়েছে সোহেলের জীবন।


নাটোরের সিংড়া উপজেলার শতকুঁড়ি গ্রামের সোহেল রানা প্রায় নয় বছর পর ফিরে পেয়েছেন পরিবারকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে তাঁর এ ফিরে পাওয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আম কুড়িয়ে খাওয়ার দৃশ্য ফেসবুকে ছড়াছড়ি হলে বদলে যায় সোহেলের জীবন।



বৃদ্ধ বাবা-মা, ছোট্ট সন্তান থেকে শুরু করে পরিবারের সবাই যেন আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো। ভিডিওতে সোহেলকে দেখে সবার চোখ ছলছল করে উঠে। এরপর যখন মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে কথা হয় তখন তো অনেকেই বাকরুদ্ধ।

১৩ জুন বিকেল। প্রকৃতিতে বৃষ্টির রেশ। সম্প্রতি ভেঙ্গে ফেলা সুপার মার্কেটের খালি জায়গায় স্তুপ করে ফেলে রাখা পঁচা আম খাচ্ছিলেন মাঝ বয়সি ব্যক্তি। চোখ যায় তরুণ ব্যবসায়ি ও সেবামূলক সংগঠন জাগো ফাউন্ডেশন এর অংগ সংগঠন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার স্বেচ্ছাসেবক তারেক আজিজের। ছুটে গিয়ে এক কেজি আম কিনে দেন।

আরও পড়ুন: আখাউড়ায় বাজারের সভাপতিসহ ৪ ব্যবসায়িকে জরিমানা

তারেক আজিজ জানান, ওই ব্যক্তিকে ভাত না খাওয়াতে পারার যন্ত্রণা তাড়া করছিলো তাকে। প্রতিদিনই ওই ব্যক্তিকে খোঁজে বেড়ান। ১৮ জুন রাতে দেখা মিললে সুযোগ হাত ছাড়া করেন নি। এরই মধ্যে কথায় কথায় জানতে পারেন ওই ব্যক্তির বাড়ি নাটোর।
এর পরই শুরু হয় তারেক আজিজের প্রচেষ্টা। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে ভিডিও দেয়ার পাশাপাশি লেখালেখি শুরু করেন। নাটোরে কর্মরকত সংশ্লিষ্টদের মোবাইল ফোন নম্বর যোগাযোগ করে স্থানীয়ভাবে সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ করেন। অনেকের কাছে ভিডিওটি পাঠান।

তারেক জানান, স্থানীয় এক যুবক ওই ব্যক্তিকে চিনতে পেরে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখনই জানা যায় ওই ব্যক্তি নয় বছর ধরে নিখোঁজ। পরিবারের সদস্যরা ভিডিও কলে দেখে সোহেলের পরিচয় নিশ্চিত করেন। তখন আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তবে সোহেল সবাইকে চিনতে পারছিলো না। ২১ জুন রাতে সোহেলের পরিবারের লোকজন এসে তাঁকে নিয়ে যায়। রাতে থাকার কথা বললেও তারা এতটা আপ্লুত ছিলো যে সোহেলকে কাছে পেয়েই চলে যাওয়ার তাগাদা শুরু করে।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘুষের টাকা না দেওয়ায় মহিলার হাত ভেঙ্গে দিল মেম্বারের ছেলে

পারিবারিক সূত্র জানায়, সোহেল শতকুড়ি গ্রামের মজিদ শাহ্’র ছেলে। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। স্ত্রী এবং তৌফিক হাসান ও সানিয়া আক্তার নামে দুই শিশু সন্তান রয়েছে তার। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। একদিন হঠাৎ করেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করেও সোহেলকে পাওয়া যায় নি। যে কারণে তাকে মৃতই ধরে নিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা।

সোহেলের ষষ্ঠ শ্রেণি পড়–য়া ছেলে তৌফিক জানায়, বাবাকে পেয়ে সে খুবই খুশি। বাবা আসছে শুনে নানার বাড়ি থেকে ছুটে এসেছে সে। খুব ছোট বয়সে বাবা নিখোঁজ হয় বলে খুব একটা কিছু মনে নেই তার। তবে দেখে সে বাবাকে চিনতে পেরেছে। বাবাও তাকে চিনতে পেরেছে বলে ধারণা তার।

সোহেল রানার ভাই মো. উজ্জল বলেন, ‘ভাই বেঁচে আছে আমরা সেটা চিন্তাও করতে পারি নি। স্থানীয় এক যুবক ফেসবুকে ছবি দেখে আমাদেরকে জানায়। আমরাও ছবি দেখে নিশ্চিত হই। পরে ভিডিও কলে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। রবিবার রাতে ভাইকে নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসি। সোমবার সকালে বাড়িতে এসে পৌঁছাই। ভাই এখন খুব বেশি কথা বলছে না। তবে মনে হয় সবাইকে আস্তে আস্তে চিনতে পারছে। মানসিক কিছু সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে। যে কারণে ডাক্তার দেখাবো বলে আমরা চিন্তা করছি। আমার বৃদ্ধ বাবা-মা ভাইকে পেয়ে খুব খুশি। আমরা চিন্তাও করতে পারিনি এত বছর পর ভাইকে ফিরে পাবো। ফেসবুকের কারণেই আমরা তাকে খোঁজে পেলাম। সবাই আমাদেরকে অনেক সহযোগিতা করেছে।’

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ৪৭ জন করোনায় আক্রান্ত, জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬১২

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!