ব্রেকিং

x

কবি কল্যাণব্রত চক্রবর্তীর ৮৫তম জন্মদিন আজ

বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৫:০১ অপরাহ্ণ

কবি কল্যাণব্রত চক্রবর্তীর ৮৫তম জন্মদিন আজ

আজ ২৫ সেপ্টেম্বর—ত্রিপুরার সাহিত্য অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, কবি, সাংবাদিক, শিক্ষক ও আখাউড়ার সন্তান কল্যাণব্রত চক্রবর্তীর জন্মদিন। ১৯৪০ সালের এই দিনে আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ধর্মনগর গ্রামের কর্মমঠে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৃত নাম সত্যব্রত চক্রবর্তী হলেও সাহিত্য জগতে তিনি কল্যাণব্রত চক্রবর্তী নামেই অধিক পরিচিত।


কল্যাণব্রত চক্রবর্তী এক সংগ্রামী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ক্ষীরোদ বিহারী চক্রবর্তী ছিলেন দেশকর্মী। পূর্ব বাংলার বিভিন্ন গ্রামে ক্ষীরোদ চক্রবর্তী প্রায় ৩৫টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় কর্মমঠ থেকে প্রকাশিত হত মাসিক কল্যাণী পত্রিকা। স্বদেশী আন্দোলনে স্বদেশে তৈরি কাপড়ের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য তাঁদের বাড়িতে ছিল বিশাল হস্ততাঁতঘর, যেখানে প্রায় ৬০টি হস্ততাঁত একসঙ্গে কাজ করত। তাঁদের বাড়ির নামই ছিল কর্মমঠ। সেইসময় স্বদেশী সংগঠকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের গোপন দপ্তর ছিল কর্মমঠে। ব্রিটিশবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষীরোদ বিহারী চক্রবর্তী কারাবরণও করেছিলেন। দেশভাগের পর পাকিস্তান পুলিশের তৎপরতা এবং গ্রেফতারের আশঙ্কায় ১৯৪৮ সালের শুরুতে পরিবারসহ তিনি ত্রিপুরায় চলে আসেন।


১৯৬৭ সালে দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় কল্যাণব্রত চক্রবর্তী সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। আগরতলায় পি.টি.আই সংবাদ সংস্থার ব্যুরো চিফ ছিলেন ৬ বছর। পাশাপাশি শিক্ষকতাও করেছেন বহু বছর। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে আগরতলায় অনুষ্ঠিত অসংখ্য সভা-সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংবাদ সংগ্রহে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য।

কল্যাণব্রত চক্রবর্তীর সাহিত্যজীবনের সূচনা কৈশোরে। ১৯৫৪ সালে দৈনিক জাগরণ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৬৩ সালে ‘প্রান্তিক’ কাব্যসংকলনে স্থান পায় তাঁর কবিতা। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্য ‘অন্ধকারে প্রণামের ইচ্ছা হয়’। পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে ‘লোকালয়ে উদ্ভাসিত মুখ’ (১৯৯৪), ‘অস্থির দোলনকাল’ (২০০০), ‘যেখানে থামতে হবে ‘(২০০১)। স্বপন সেনগুপ্তের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি সম্পাদনা করেছেন ‘গঙ্গা-গোমতী’ (১৯৮৩) নামক কাব্য সংকলনটি। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কল্যাণব্রত চক্রবর্তী ও জ্যোতির্ময় দাসের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় “এ পারে একাত্তর” নামক বইটি।

প্রায় আট দশক আগে মনিয়ন্দের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর চিত্র এবং লোকস্মৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া অনেক ঘটনাও তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে। যেমন—এক শীতের রাতে মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুসংবাদ মাইকবিহীন ধর্মনগর, টনকি, মাঝাগাছার মতো গ্রামগুলোতে কীভাবে একজন কংগ্রেস কর্মী প্রচার করছিলেন, তার বর্ণনা। তাঁর রচনায় বারবার ফিরে এসেছে দেশভাগের বেদনা, পূর্ববাংলায় ফেলে আসা গ্রাম-নদী-প্রকৃতির স্মৃতি। তাঁর বিখ্যাত গল্প “অবতরণের বেলা”-য় তিনি লিখেছেন:
“মাধবপুর সীমান্তের গ্রাম। গ্রামের পুবে ও দক্ষিণে অনেক দূর অবধি বিস্তৃত বিলের জলে শাপলা, পদ্ম, শালুক। বিলের ওপাশে অধুনা বাংলাদেশের গ্রাম দৌলতপুর, মিরপুর, ঘাগুটিয়া, আরও দক্ষিণে শিবনগর…”
স্মৃতিচারণামূলক প্রবন্ধ “কোনদিন ফিরবো না জেনে”-র শেষ বাক্যে ফুটে উঠেছে শেকড়ের টানের এক মায়াবী উচ্চারণ:
“জ্যৈষ্ঠের দুপুরে তন্দ্রায় শুয়ে থেকে এ বয়েসেও কখনো যেন রাজমঙ্গলপুরের দিক থেকে অস্পষ্ট এক মায়ের গলা শুনতে পাই—‘কিরণি… কিরণি লো ঘরে আয়’।”

লেখক: মোহাম্মদ ভূইয়া

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!