ব্রেকিং

x

সাবেক আইনমন্ত্রীকে খুশি করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদের নাম বদলে দিয়েছে চাটুকাররা

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১:১৪ অপরাহ্ণ

সাবেক আইনমন্ত্রীকে খুশি করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদের নাম বদলে দিয়েছে চাটুকাররা
নাম বদলে দেওয়া কয়েক স্কুল ও মসজিদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পানিয়ারূপ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাবা বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম সিরাজুল হক। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের নাম ২০১৯ সালে পরিবর্তন করা হয়। নতুন নাম হয় সিরাজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়। ২০২১ সাল থেকে এর নাম সিরাজুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সিরাজুল হক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে নিজের নাম যুক্ত করেননি। কিন্তু তাঁর ছেলে আনিসুল হক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী থাকাকালে এই নাম পরিবর্তন করা হয়। শুধু এ বিদ্যালয়ই নয়, আনিসুল হক ১০ বছর এমপি ও মন্ত্রী থাকাকালে তাঁকে খুশি করতে গিয়ে মসজিদ ও সেতুর নামও পরিবর্তন করেছে চাটুকাররা।


শুরুর দিকে কসবায় আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল কায়সার ভূঁইয়া জীবন।
পরে কয়েক বছর ধরে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) শফিকুল আলম সোহাগ ও পিএ আলাউদ্দিন বাবু কসবার সব কিছুতে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এর মধ্যে আলাউদ্দিন বাবুর প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে আখাউড়ায় ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা কাজল। এঁরাই মন্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে করতে শুরু করেন। ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিভিন্ন মামলায় তাঁকে রিমান্ডে আনা হয়। এখনো তিনি ঢাকায় কারাগারে আছেন।


এলাকার লোকজন অভিযোগ করে, আনিসুল হকের সংসদীয় আসন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪-এর আখাউড়া উপজেলায় প্রায় ৩৩ বছর আগে তৈরি মসজিদের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর নামে ‘নূর আমাতুল্লাহ হক পৌর মসজিদ।’ এ নিয়ে মুসল্লিদের আপত্তিকেও পরোয়া করেননি তাকজিল খলিফা কাজল। বরং নিজেই বনে যান মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি। পুরনো মসজিদ ভেঙে শুরু করেন নতুন মসজিদের নির্মাণকাজ। ৫ আগস্টের পালাবদলের পর মুসল্লিরা আবারও সেই মসজিদের পুরনো নামের ব্যানার টানিয়ে দেন ‘বায়তুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ’।
মসজিদ কমিটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এটি পৌর এলাকার প্রধান মসজিদ হিসেবেই বিবেচিত হয়। নাম পরিবর্তন থেকে শুরু করে এর উন্নয়নকাজের ধীরগতি নিয়ে সবার মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এখন মুসল্লিদের সম্মতিতেই আগের নাম ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মসজিদের উন্নয়নে অনেকেই আর্থিক সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন।’ নাম পরিবর্তন করা হয় কসবা পৌর এলাকার প্রধান সড়কে অবস্থিত ‘দানবীর মহেশ চন্দ্র সেতু’টিরও। একটি বেসরকারি ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় সেতুটিকে আধুনিকায়ন করে এটির নাম রাখা হয় সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের বাবা সিরাজুল হকের নামে।

একই দশা হয়েছে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আখাউড়া পৌর এলাকার নাছরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। ২০১১ সালে বিদ্যালয়টি স্কুল ও কলেজে রূপান্তরিত হয়। ২০১৮ সালে এর কলেজ শাখা আলাদা করে নাম দেওয়া হয় ‘জাহানারা হক মহিলা কলেজ’। জাহানারা হক হলেন সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রয়াত মা। ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বনে যান তাকজিল খলিফা কাজল এবং যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাঁর স্ত্রীকে বানিয়ে দেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। আনিসুল হককে করা হয় কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি। হালে অবশ্য এ প্রতিষ্ঠানে তাঁদের কারো কর্তৃত্ব নেই। বিতর্ক আছে আখাউড়া পৌর এলাকার রাধানগর কলেজপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত ‘সিরাজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়’ নিয়েও। যে জায়গাটিতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেটি মূলত গরুর বাজার। এ ছাড়া এখানে কিছু ব্যক্তিমালিকানার জায়গাও রয়েছে। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার আগে এটি ছিল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন। পরিষদের ক্রয়কৃত জায়গা বিধায় এটি পৌরসভাকে দিতে চায়নি কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় সেখানে জোর করেই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নেও রয়েছে মন্ত্রীর বাবার নামে ‘সোনার বাংলা সিরাজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়’। অথচ প্রায় দুই যুগ আগে প্রতিষ্ঠার সময় এটির নাম ছিল ‘সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়’।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!