ব্রেকিং

x

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা ‘জয়’ করে হাসছে কৃষক

শনিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২০ | ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা ‘জয়’ করে হাসছে কৃষক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দের মাওলানা আকরাম হোসেন ধান কাটার শ্রমিক সংকটে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এগিয়ে আসে ছাত্রলীগ। কুড়িপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম শ্রমিক না পেয়ে একাই ধান কাটার কাজ শুরু করেন। ‘স্বপ্নতরী’ নামে একটি মানবিক সংগঠনের সদস্যরা ধান কেটে বাড়ি দিয়ে আসেন।


করোনার মধ্যেও আশপাশের জেলা থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আনা হয়েছে প্রায় সাত হাজার শ্রমিক। ধান কাটার কাজে যোগ দিয়েছেন কর্মহীন হয়ে পড়া দিনমজুর, রাজমিস্ত্রি, হোটেল কর্মচারী, অটোচালক, রিকশাচালকসহ আরো অনেকে। আছে ধান কাটার যন্ত্র।


সব মিলিয়ে করোনা ‘জয়’ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকের মুখে এখন হাসি ফুটতে শুরু করেছে। ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে এসেছে উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন কারণে। অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আশায় আছেন এখানকার কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর এক লাখ ১১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৮ মেট্রিকটন বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রবি মৌসুমে কিছু জমিতে সরিষা, ভুট্টা ও সূর্যমুখীর চাষের কারণে শতকরা একভাগ জমিতে ধানের চাষ কম হয়।

সূত্রটি আরো জানায়, ধান কাটার জন্য স্থানীয় শ্রমিকের পাশাপাশি অন্যান্য জেলা থেকে ধাপে ধাপে প্রায় ১৬ হাজার শ্রমিক আসে গত বছর। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর প্রায় সাত হাজারের মতো শ্রমিক এসেছেন সরকারি সহযোগিতায়। এর বাইরে কর্মহীন মানুষ এখন ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। অনেকে সংগঠন স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কেটে দিচ্ছেন। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪০টি যন্ত্র দিয়ে ধান কাটার কাজ করা হচ্ছে।

জেলার সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের বার আউলিয়ার বিল, রামরাইল ইউনিয়নের সেন্দ, মাছিহাতা ইউনিয়ন, বাসুদেব ইউনিয়ন, উজানিসার, কোড্ডা, সুহিলপুর, মজলিশপুর, সরাইল উপজেলার ধরন্তি, শাহজাদাপুর, বুড্ডা, আকাশি বিল, শাপলা বিল, নাসিরনগর উপজেলার দাঁতমন্ডল, হরিপুর, চাতলপাড়, ভলাকুট, গোয়ালনগর, বাকলঙ্গন, জেঠাগ্রাম, চৈয়ারকুড়ি, বিজয়নগর উপজেলার চর-ইসলামপুর, পাহাড়পুর, পত্তন, হরষপুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এখন পুরোদমে ধান কাটা চলছে। ধান কাটার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে। জেলার বাইরে থাকা আসা শ্রমিকদেরকে আলাদাভাবে রেখে ধান কাটার কাজে লাগানো হচ্ছে।

সরাইল উপজেলার ধরন্তী হাওরে অনেকটা অগোছালোভাবে কাট কাটছিলেন মো. হাসান। পেশায় হোটেল বাবুর্চি। ঢাকা থেকে বাড়ি এসে আর্থিক অনটনে ছিলেন। যে কারণে অভ্যাস না থাকা সত্ত্বেও নেমে পড়েছেন ধান কাটার কাজে। জানালেন, ছোটবেলায় ধানকাটা খুব কাছ দেখেছেন। প্রতিবেশীর ধানকাটার শ্রমিক প্রয়োজন জানতেই ছুটে নিয়ে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়ে এখন কাজে নেমে পড়েছেন।

নাসিরনগরের দাঁতমন্ডল গ্রামের মো. আব্দুর রহমান জানান, তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। এখন চালাতে পারছেন না বলে চার শ টাকা মজুরিতে ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন। জমির মালিক দুই বেলা খাবার দেন বলে তিনি জানান।

জমির মালিক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আগে অন্য জেলা থেকে অনেক শ্রমিক আসতেন। এ বছর তাঁরা কম আসায় করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া লোকজনকে দিয়ে ধান কাটানো হচ্ছে। তবে পেশাদার ধান কাটার শ্রমিকদের চাইতে স্থানীয়দের মজুরি একটু বেশি বলে জানান তিনি।

কৃষক মো. মোমিন মিয়া, শহীদুল হকসহ আরো অনেকে বলেন, কর্মহীনরা যদি এ কাজে না আসত তাহলে জমির ধান জমিতেই নষ্ট হতো। এখন আমরা সময়মতোই ধান ঘরে তুলছে পারছি। এবার ধানের ফলনও হয়েছে অনেক ভালো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার বলেন, বিভিন্ন এলাকাতেই এখন ধান কাটার কাজ শুরু হয়েছে। সকল প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে কৃষকরা নির্বিঘ্নে ঘরে ধান তুলতে পারছেন। বাইরের জেলার পাশাপাশি স্থানীয় শ্রমিক, কর্মহীন মানুষ ধান কাটার কাজ করছে। এ ছাড়া জেলায় মোট ৪০টি যন্ত্র দিয়ে ধান কাটার কাজ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, আগে যেমন বাইরের শ্রমিকরা ধান কাটার মৌসুমে এই জেলায় এসে ধান কাটতেন এ বছরও তারা কাজ করছেন। প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধান কাটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!