আজ শুক্রবার ভারতের ত্রিপুরারাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশের চাদপুরেরর বিপ্লব কুমার দেব। শপথ বাক্য পাঠ করান ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা আসাম রাইফেল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান। এদিকে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে বিজেপি জোট আইপিএফটির জিষ্ণ দেববর্মা উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, আরএসএস প্রচারক রাম মাধব প্রমুখ।
এদিকে লেনিন মূর্তি ভাঙা ও হামলার প্রতিবাদে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করার পথে ছিল ত্রিপুরা সিপিএম৷ পরে আরএসএস প্রচারক রাম মাধব ও নতুন মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসতে চলা বিপ্লব দেব সরাসরি মানিক সরকারের কাছে গিয়ে তাঁকে অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানান৷ তারপরেই গলে যান মানিক৷ অনুষ্ঠানে আসার সম্মতি দেন।
ত্রিপুরার মাটিতেই দেশের মধ্যে প্রথমবার বামপন্থী ও রামপন্থীদের সরাসরি নির্বাচনী সংঘর্ষ হয়৷ তাতে পরাজিত হয় বামশক্তি ৷ তার পরেই রাজ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষ৷ ভেঙেছে লেনিন মূর্তি ৷ এরপরে কলকাতায় কালিমালিপ্ত কার হয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি৷ কেরলে ভাঙা হয় গান্ধী মূর্তি ৷ উত্তরপ্রদেশে ভাঙা হয়েছে আম্বেদকর মূর্তি একইভাবে তামিলনাড়ুতে আক্রান্ত হন দ্রাবিড় ব্যক্তিত্ব পেরিয়ার৷ সবমিলে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছে বিজেপি ৷ পরে প্রধানমন্ত্রী জানান এই ধরণের কাজ বরদাস্ত করা হবে না৷ এই সহিংস পরিস্থিতিতে বিপ্লব দেব ত্রিপুরারাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। সহিংসতা নিরসনে রাজ্যবাসী বিপ্লবের দিকে চেয়ে আছেন।
এদিন আগরতলায় পৌঁছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে যান রাম মাধব৷ মানিকবাবুর সহজ ও অনাড়ম্বর জীবন যেন বিজেপি ও সংঘ কর্মীদের অনুকরণীয় হয়৷ কমিউনিস্ট নেতা মানিক সরকারের জীবন ধরণকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেন আরএসএস প্রচারক রাম মাধব৷ আগরতলায় পৌঁছেই তিনি এই বার্তা দেওয়ায় বিজেপি ও বাম মহলে একইসঙ্গে প্রবল আলোড়িত৷ যদিও ত্রিপুরায় নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষ চলছেই ৷ সিপিএমের অভিযোগ, বাম কর্মী-সমর্থকরা আক্রান্ত হচ্ছেন
উল্লেখ্য যে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বাংলাদেশ চাদপুর কচুয়ার মেঘদাইর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘মাস্টার বাড়ি’র কবিরাজ গোবিন্দ চন্দ্র দেবের নাতি। কবিরাজ গোবিন্দ চন্দ্র দেবের ৪ ছেলে। তারা হলেন, হারাধন চন্দ্র দেব, হিরুধন চন্দ্র দেব, প্রাণধন চন্দ্র দেব এবং মধুসূদন চন্দ্র দেব। কবিরাজ গোবিন্দ চন্দ্র দেবের ৪ ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছেলে হিরুধন চন্দ্র দেব। এ হিরুধন চন্দ্র দেবের সন্তান হলেন বিপ্লব কুমার দেব।
বিপ্লব কুমার দেবের বাবা-মা ছাড়া অন্যরা কচুয়া এবং মেঘদাইরে বসবাস করেন। তবে তার মেঝ চাচা কবিরাজ প্রাণধন দেব কচুয়ার পরিচিত মুখ। তিনি কচুয়া উপজেলার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি। থানা পুলিশিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। কচুয়া সদরেই তিনি সপরিবারে বসবাস করেন। কবিরাজ গোবিন্দ চন্দ্র দেবের পারিবারিক সব অনুষ্ঠানেই বিপ্লবের পরিবারের আসা-যাওয়া রয়েছে। ত্রিপুরার রাজ্য সভাপতি হওয়ার কিছুদিন আগে চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন বিপ্লব। সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসেন তিনি।
র আগে, গত বছর বিজেপির প্রতিনিধি দলের প্রধান হয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে অংশ নেন তিনি। সেখান থেকে হেলিকপ্টারযোগে কচুয়া গিয়েছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। ওই সময় কচুয়া প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিপ্লব কুমার দেবের বাবা-মা ত্রিপুরা পাড়ি জমান। দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমানোর কয়েক মাসের মাথায় ত্রিপুরাতেই বিপ্লব কুমার দেবের মা মিনা রানী দেবের ঘর আলো করে জন্ম নেন বিপ্লব কুমার দেব।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com