ব্রেকিং

x

‘আত্মীয়’ বাঁচায় প্রাণ

রবিবার, ১৬ আগস্ট ২০২০ | ১১:২১ অপরাহ্ণ

‘আত্মীয়’ বাঁচায় প্রাণ

‘অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা রক্তদানের। কিন্তু সঠিক কোনো পথ খোঁজে পাচ্ছিলাম না। সেই পথ দেখায় ‘আত্মীয়’। শুরু করি রক্ত দেয়া। গত দুই বছরে পাঁচবার রক্ত দিয়েছি। প্রতিবারই দেখেছি রক্তগ্রহীতাদের সেকি আবেগ এইটুকু রক্তের জন্য। আত্মীয় মানুষের প্রাণ বাঁচাতে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেটা দেখে সত্যিকার অর্থেই মন জুড়ায়, মুগ্ধ হতে হয়।’কথাগুলো বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল বাবু। ‘আত্মীয়’ নামে আখাউড়ার একটি রক্তদানের সংগঠনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ‘সংগঠনটি এখন গণমানুষের সংগঠন হিসেবে পরিণত হয়েছে।


আখাউড়াতে আত্মীয় নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা হয় দু’বছর আগে। আজ ১৭ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকি। বরাবরের মতো এবারও দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ‘প্রকৃতি উৎসব’ নামে এবারের আয়োজনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে ফলের বাগান গড়ে তোলা। এছাড়া মাসব্যাপী বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।


আত্মীয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গত দুই বছরে মোট ৪১৭ বার রক্ত দান করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। সংগঠনটির মোট নিবন্ধিত রক্তদাতা ১০১৫ জন (শনিবার নাগাদ)। এ বাইরেও আত্মীয়ের আহবানে সাড়া দিয়ে অনেকেই রক্ত দিয়ে থাকেন।
মূলত এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সংগঠনটি। এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক হচ্ছেন ব্যাঙ্কে চাকরিরত সমীর চক্রবর্তী। এছাড়া শাহবুদ্দিন বেগ শাপলু, শেষ দীপু, সুজন সাহা, এম আর আই রাকিব, রাকিবা হাবিব অয়ন, হৃদয় দেব, সুদীপ্ত সাহা, কিবরিয়া, মমতা ঘোষ মণিসহ ২০-২৫ জনের একটি তরুণ দল সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা করেন। রক্তদানের পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ড করে থাকে আত্মীয়। প্রায় প্রতিমাসেই ‘আত্মীয় আড্ডা’ নামে আয়োজনটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ওই আড্ডায় রক্তদানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার আলোচনাসহ গান, কবিতার আয়োজন করা হয়।

আত্মীয়ের মাধ্যমে বোনকে বাঁচাতে পেরে আখাউড়ার রাধানগরের রাজীব সাহা নামে এক যুবক লিখেন, ‘আত্মীয় নামে সংগঠনটিকে যে সত্যিকার অর্থেই মানুষকে বাঁচাতে কাজ করে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। এক ঘন্টারও কম সময়ে আমার বোনের জন্য চার ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে দেয় তারা। সেদিন ছিলে ঈদের দিন। কেউ কোরবানী ফেলে কেউবা বাড়িতে অন্য অনুষ্ঠান রেখে রক্ত দিতে ছুটে আসে। এখন থেকে যদি কারো রক্তের প্রয়োজন হয় তাহলে আমি যখন যে অবস্থাতেই থাকি না কেন ছুটে যাবো।’

আত্মীয়’র প্রধান সমন্বয়ক সমীর চক্রবর্তী বলেন, ‘সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সমন্বয়ে আত্মীয় এখন অনেক সমৃদ্ধ একটি সংগঠন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের পাশে থাকার ব্রত নিয়ে যেভাবে এগুতে চাই সেটা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে এলাকার মানুষের ব্যাপক সাড়ায়।’

আখাউড়া পৌরসভার মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজল আত্মীয়ের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকিতে শুভকামনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আত্মীয় সত্যিকার অর্থেই স্বার্থহীনভাবে মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করছে। একদল তরুণ যে কাজটি করে যাচ্ছে তা সত্যিই অনেক গর্ব করার মতো। আত্মীয়ের আহবানে সাড়া দিয়ে একদিন রাত ১২টার পর আমিও ছুটে যাই রক্ত দিতে, যা আমার কাছে অনেক সৌভাগ্যের মনে হয়েছে। আত্মীয়ের যে কোনো প্রয়োজনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।’

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!