আজ রোববার আখাউড়া সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডের ২৫০ মুক্তিযোদ্ধার গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারই প্রথম সরকারীভাবে শহীদদের সম্মান জানানো হয়েছে। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দীর্ঘদিনের অযত্ন ও অবহেলিত এই গনকবরকে সংরক্ষণের। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আবারও সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন।
আখাউড়া উপজেলার সেনারবাািদ গ্রাম ও ভারত ত্রিপুরারাজ্যের আগরতলার দক্ষিণ রামনগর সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডের শূণ্যরেখায় ২৫০ জনের গণকবরটি অবস্থিত । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার জিবি হাসপাতালে যেসব যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মারা যেতেন তাদের এখানে দাফন করা হতো। এছাড়াও পাক বাহিনীর গুলিতে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের এখানে দাফন করা হয়া। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসছিল। দীর্ঘদিনেরর দাবীর মুখে এবার সীমান্তের এই গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার তাহমিনা আক্তার রেইনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের উপস্থিততে এক সভায় এ বিষয়ে সীদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সভার সীদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ রোববার ১৫ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এই গণকবরে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আবুল কাশেম ভুইয়া, সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু সাইদ, জামসেদ শাহ, মুক্তিযো্দ্ধা বাহার মালদার, আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার, সিনিয়র সাংবাদিক দুলাল ঘোষ প্রমুখ।
উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা জানায়, মুক্তিযোদ্ধের সময় বিভিন্ন রঙ্গাঙ্গনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে বাংলাদেশে দাফন করার মত আখাউড়ার পাশপাশে জায়গা না পাওয়ায় এই জায়গাটি ছিল তাদের জন্য নিরাপদ। সেই হিসাবে এখানে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেয়া হয়। ত্রিপুরা জিবি হাসপাতালে আহত অবস্থায় যারা মারাগেছেন তাদেরকেও এখানে দাফন করা হয়।
তারা আরো বলেন, গণকবরটি নতুন প্রজন্মের কাছে স্মৃতি সংরক্ষণ করবে। যেহেতু এটি নোম্যান্সল্যান্ডে সেহেতু বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার জন্যও তারা দাবী জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার বলেন, ১৯৭১ সালে আমি উপস্থিত থেকে লাশ দাফন করেছি। গুলবক্স নামে একজন মৌলভী দিয়ে জানাজা পড়িয়ে দাফন করা হতো এখানে। এটির দায়িত্ব পালন করতেন মুক্তিযোদ্ধা হামদু ভাই। তখন মুক্তিযোদ্ধের জোন-২ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী জহুর আহামদ চৌধুরী দাফন কাফনের খরচ দিতেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ভুইয়া বলেন, যেসব মুক্তিযোদ্ধার সমাধি এখানে রয়েছে তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে উভয় দেশের প্রচেষ্টায় একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা বলে আশা প্রকাশ করছি।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা বলেন, গণকবরটি ভারতের নোম্যান্সল্যান্ডে হওয়ায় চট করে এখানে কোন স্থাপনা কিংবা পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। এটি একটি দ্বি-পাক্ষিক বিষয়, দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়। সে জন্য সরাসরি কোন উদ্যোগে না গিয়ে স্থানীয়ভাবে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে একটি মিটিং করেছি। এখানে কি করণীয়, প্রথমত এখানে মুক্তিযোদ্ধা যারা শায়িত আছেন তাদের একটি তালিকা তৈরী করা, তাদের নাম কিছুটা হলেও উদ্ধার করা, যেটুকু পারা যায়। ইতিহাসটি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, এখানে আগে কি ছিল, কিভাবে তাদেরকে শায়িত করা ছিল, কারা কারা জড়িত ছিল, কারা সহযোগীতা করেছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভারতের সাথে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কিংবা সমাধি নিয়ে আসার ব্যাপারটি নিয়ে জেলা প্রশাসনে চিন্তাভাবনা চলছে। এখানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কিছু একটা করা হবে বলেও তিনি জানান।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com