ব্রেকিং

x

আখাউড়ায় হঠাৎ নির্বাচনী উত্তাপ, উত্তেজনা!

শনিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২১ | ৮:২৫ অপরাহ্ণ

আখাউড়ায় হঠাৎ নির্বাচনী উত্তাপ, উত্তেজনা!

একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও মেয়রকে উদ্দেশ্য করে প্রকাশ্য সভায় ব্যক্তিগত আক্রমন। এ ঘটনার পর ওই আক্রমনকারিকে পাল্টা লাঞ্ছনা, থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি)। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে পৌর বিএনপি’র ‘হুটহাট’ কমিটি ঘোষণা। মনোনয়ন বঞ্চিতরা আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী থেকে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া। বাবার পক্ষে চলচ্চিত্র নায়কের প্রচারণা। সব মিলিয়ে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আখাউড়ায় এখন হঠাৎ উত্তাপ, উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের আগ্রহ বেড়েছে।


আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবসে আখাউড়া পৌরসভায় ভোট। এখানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। যে কারণে জনগণের ভালোবাসার টিপ কার কপালে যায় এ নিয়ে আলোচনার পৌরসভার সর্বত্র। আখাউড়া পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ২৩১ জন ও নারী ১৪ হাজার ৬৭৯ জন ভোটার।


এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মো. তাকজিল খলিফা কাজলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। গত বুধবার দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাকজিল খলিফাকে মনোনীত করা হয়। অবশ্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী (স্থানীয় সংসদ সদস্য) আনিসুল হকের সহযোগিতায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করা, চাকরি দেয়াসহ ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে অনেক আগে থেকেই তাকজিল খলিফার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত ছিলো। কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর পক্ষে বুধবার রাতেই মিছিল বের হয়। বৃহস্পতিবার করণীয় বিষয়ে দলীয় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি বিএনপি। যদিও বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন আব্দু মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে আলোচনা আছে। অন্যদিকে বুধবার রাতে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মো. জিল্লুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মো. সেলিম ভুইয়াকে সভাপতি ও আক্তার হোসেনকে সাধারন সম্পাদক করে আখাউড়া পৌর বিএনপি’র কমিটি ঘোষণা দেয়ায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে দুইভাগে বিভক্ত বিএনপিতে। তবে জাতীয় পার্টি বা অন্য কোনো দল থেকে প্রার্থী নেই।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মো. নূরুল হক ভুইয়ার পক্ষে তাঁর ছেলে চলচ্চিত্র নায়ক রোশান (জিয়াউল হক ভুইয়া পরান) মাঠে নামলে প্রচারণায় আলাদা মাত্রা পায়। তবে পৌর এলাকার টানপাড়ায় মঙ্গলবার রাতে ছেলের সঙ্গে একটি নির্বাচন প্রচারণায় রাখা এক বক্তব্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন নুরুল হক ভুইয়া। বক্তব্যে তিনি একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও বর্তমানকে মেয়রকে কটাক্ষ করে ব্যক্তিগত আক্রমন করেন। বুধবার রাতে সড়ক বাজার এলাকায় চায়ের দোকানে বসে থাকার সময় নুরুল হক ভুইয়া লাঞ্ছণার শিকার হন। থানায় করা সাধারন ডায়রিতে তিনি জুতাপেটার শিকার হওয়া ও তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে লাঞ্ছণকারি সোহাগ মোল্লাকে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তাকজিল খলিফার সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করেন।
একদিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথা বলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে সমালোচনা হচ্ছে। অন্যদিকে একজন প্রার্থীকে মারধরের বিষয়টিও এলাকার মানুষ ভালোভাবে নেননি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সহনশীল হওয়ার আহবান জানিয়েছেন সাধারন মানুষ।
নূরুল হক ভুইয়া অবশ্য ব্যক্তি আক্রমন করে বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে দুখ:প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘ওই বক্তব্যটির জন্য আমি লজ্জিত। আসলে এটা ছিলো  স্লিপ অব ট্যাং।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবো। শুরুতে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। তবে দলের প্রার্থী নির্বাচনের জন্য হওয়া ভোটে কে কত পেয়েছে সেটাও নিশ্চিত হতে পারিনি। যে কারণে আমি দলের বাইরে গিয়েই এখন নির্বাচন করবো।’ সোহাগ মোল্লা নামে যুবকের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হওয়া বিষয়ে প্রতিবাদ সভা করার চিন্তা আছে বলে তিনি জানান।

অভিযুক্ত দেবগ্রামের বাসিন্দা সোহাগ মোল্লা অবশ্য লাঞ্ছণা করার কথা স্বীকার করেছেন। তবে সাংবাদিকদের কাছে তিনি দাবি করেন, তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা কাদির মোল্লাকে নূরুল হক ভুইয়া অহেতুক গালমন্দ করেছেন বলেই তিনি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে এভাবে অপমানিত করা ঠিক হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওনি সম্মানিত হলে তো আর আরেকজনকে অযথা গালমন্দ করতে পারেন না।’

এদিকে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থাকবেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত মো. মোবারক হোসেন রতন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জনগণ আমাকে চাচ্ছে। যে কারণে আমি নির্বাচন করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দল যদি আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় নিতে পারে। আমি আমার শুভকাংখীদের সঙ্গে আলোচনা করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবো’।
বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, ‘নূরুল হক ভুইয়ার সঙ্গে ঘটনার সময় আমি ঢাকায় ছিলাম নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে। এ ঘটনায় নুরুল হক ভুইয়া থানায় জিডি করেছেন। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। লাঞ্ছণাকারি নিজেই বলেছেন কেন তিনি এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছেন।’ একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও দলমত নির্বিশেষে সকলের শ্রদ্ধেয়জনসহ তাঁকে নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমন বিষয়ে নূরুল হক ভুইয়া বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ডিং তাঁর কাছে আছে বলে জানান।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!