পাকা ধানের মৌ-মৌ গন্ধ আখাউড়া মনিয়ন্দ ইউনিয়নের টানমান্দাইল গ্রাম জুড়ে। বাড়ি বাড়ি চলছে পাকা ধান মাড়াইয়ের কাজ। ধান নিয়ে গোলা ভরছে গ্রামের বধুরা।
দীর্ঘ ৮ বছর পর এবার গ্রামের ফসলের মাঠে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় বঞ্চিত গরিব কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।
হাওড়ানদীর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে টানমান্দাইল ফসলের মাঠের প্রায় ৫০০ একর জমিতে চাষাবাদ বন্ধ ছিল। চলতি বছর বোরো মৌসুমের আগে গ্রামবাসীর দাবীর মুখে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাওড়া নদীর বাধ নির্মান ও বিজনা নদী খনন করায় এবার কৃষকরা নিরাপদে জমিতে বোরো ধান চাষ করে ঘরে তুলেছে।
কৃষক নুর আহমেদ
সরেজমিন খোজ নেয়ার সময় টানমান্দাইল গ্রামের কৃষক মোতাহার হোসেন (৫২), আব্দুল হান্নান (৩৫), হাসেন মিয়া (৪২) ও নুর আহমেদ (৬৫) জানায়, টানমান্দাইল গ্রামের উত্তর দিকের ফসলের মাঠের প্রায় ৫০০ একর জমিতে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে বোরো ধান চাষ করা যায়নি। ধান রোপনের সময় অথবা ধান কেটে ঘরে তুলার আগে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানি হাওড়ানদীর ভাঙ্গা বাধ দিয়ে প্রবেশ করে ফসলি জমি নিমজ্জি হয়ে যেত। পরে ক্ষয়ক্ষতির ভয়ে এই মাঠে বোরো ধান চাষাবাদ করা বন্ধ রাখে কৃষকরা।
তারা আরো জানায়, সর্বনাশা পাহাড়ি ঢলের পানিতে অনেক বার ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কৃষকের সব পাকা ও আধাপাকা ধান। এর সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে এখানকার কৃষকদের স্বপ্ন। ধান হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ে অনেক কৃষক। এক সময় হাওড়া বাধ নির্মান হয়ে যায় গ্রামবাসীর প্রাণের দাবী।
কৃষকরা আরো জানায়, গ্রামবাসীর দাবীর মুখে চলতি বোরো মৌসুমের আগে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুজ্জামান বাধ নির্মান করে দেয়ার আশ্ব্যাস দেন। পরে তিনি হাওড়ানদীর বাধ নির্মানের পাশাপাশি পাশের বিজনা নদীটিও খনন করে দেন।
হাওড়া বাধ নির্মান ও বিজনা নদী খনন হওয়ায় এবার কৃষকরা নিরাপদে পাকা ধান ঘরে তুলেছে। বোরো ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। হাসি ফুটেছে সব কৃষকের মুখে।
তারা আরো জানায়, সময়মত বৃষ্টি হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আরো বেশী ভালো ফলন হয়েছে। তবে ধান কাটার শ্রমিক সংকটে ভোগেছে কৃষকরা। বর্গা ও প্রান্তিক চাষীরা শ্রমিক সংকটে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
গ্রামের ভেতরে গিয়ে দেখাগেছে, মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই চলছে। এতে ব্যয় একটু বেশী হলেও সময় বাচে বলে এক কৃষক জানায়। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে গরু দিয়েও মাঝে মধ্যে ধান মাড়াই করা হয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় মনিয়ন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: কামাল ভুইয়া জানান, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় টানমান্দাইল গ্রামবাসীর প্রাণের দাবী হাওড়া বাধ নির্মান হয়েছে। পাশাপাশি তিনি গ্রামের বিজনা নদীটিও খনন করে দিয়েছেন। চলতি বোরো মৌসুমের আগে বাধ নির্মান ও বিজনা নদী খনন হওয়ায় কৃষকরা দীর্ঘ ৮ বছর পর নিরাপদে বোরো ধান চাষ করেছে টানমাইন্দাইল ফসলের মাঠে। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কৃষকরা নিরাপদে ধান ঘরে তুলছে। বাধ নির্মান ও নদী খনন করে দেয়ায় টানমান্দাইল গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুজ্জামান বলেন, টানমান্দাইল গ্রামের যে ফসলের মাঠটি রয়েছে এই মাঠটির উপরে নির্ভরশীল কৃষকরা। ধান রোপন থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত প্রতিবারই হাওড়ানদীর পানিতে মাঠটি নিমজ্জিত হত। তাই এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী ছিল বাধ নির্মান করে দেয়ার। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি এলাকার অভিভাবক মাননীয় আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে জানায়। আইনমন্ত্রী মহোদয়ের পরামর্শে চলতি বোরো মৌসুমের আগে স্থানীয় ভাবে বাধটি নির্মানের পাশাপাশি সেখানকার বিজনা নদী খনন কাজ সম্পন্ন করি। বাধ নির্মান ও নদী খনন কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সোনালী ফসলের মুখ দেখতে পেরেছেন বলেও তিনি জানান।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com