ব্রেকিং

x

আখাউড়ায় গ্রামীণ রাস্তা উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি

বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই ২০১৮ | ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

আখাউড়ায় গ্রামীণ রাস্তা উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি
উপরে: কাজের ফলক, পাশে মাত্র ৭ ফুট প্রস্থে এইচবিবি করণ। নিচে: ইটের নিচে একদম বালি নেই। পাশে নিম্নমানের ইট ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে মাস না পেরুতেই

আখাউড়ায় গ্রামীণ রাস্তা উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ঠদের যোগসাজশে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্ধকৃত ৭৬ লাখ টাকার এইচবিবি করণ প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। কিছু জায়গায় খুবই নিম্নমানের কাজ এবং কিছু জায়গায় একদম কাজ না করেই  বিল তুলে নিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। আইনমন্ত্রীর মত একজন সৎ মানুষের নির্বাচনী এলাকায় এমন দুর্নীতির ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।


আখাউড়া উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানাগেছে, গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমুহ টেকসই করণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ ও আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নে ২০০০ মিটার রাস্তা এইচবিবি করণ হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয় এই প্রকল্পের কাজে। এই প্রকল্পের আওতায় ৭০০ মিটার কাজ হয়েছে আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নের চানপুর-আনোয়ারপুর রাস্তায়। ৭০০ মিটার হয়েছে মোগড়া ইউনিয়নের শোনলৌহঘর-শান্তিপুর রাস্তায় এবং ৬০০ মিটার হয়েছে আখাউড়া মনিয়ন্দের টনকী শিকারমুড়া গ্রামীণ রাস্তায়। এই কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মের্সাস নাবিল এন্টারপ্রাইজ হলেও কাজ করেছে আখাউড়া উপজেলার বিএনপি নেতা ঠিকাদার ইসমাইল।


এদিকে সরেজমিন খোজ নেয়ার সময় আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নে গিয়ে দেখাগেছে, চানপুর-আনোয়ারপুর রাস্তায় ৭০০ মিটারের স্থলে ৬০০ মিটার এইচবিবি করণ হয়েছে। মোগড়া ইউনিয়নের শোনলৌহঘর-শান্তিপুরে হয়েছে ৭০০ মিটারের স্থলে ৫০০ মিটার এবং মনিয়ন্দ শিকারমুড়া রাস্তায় ৬০০ মিটারের স্থলে কাজ হয়েছে সাড়ে ৫০০ মিটার। এসময় শান্তিপুর গ্রামের মুসা মিয়া (৬৫), সালাউদ্দিন (৩০) ও হাফিজ মিয়া (৫০) জানায়, এইচবিবি করণে এক নম্বর ইট দেয়ার কথা থাকলেও এখানে খুবই নিম্নমানের ইট দেয়া হয়েছে। ইটের নিচে ছয় ইঞ্চি বালি দেয়ার কথা থাকলেও ইটের নিচে একদম বালি দেয়া হয়নি এখানে। এইচবিবি করণে ৯.৮৪ ফুট প্রস্থ থাকার কথা কিন্তু এখানে আছে মাত্র সাড়ে ৮ফুট প্রস্থ। এখানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করে কাজ হয়নি বরং উল্টো তাদেরকে ফাসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। তারা আরো জানান, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা এখানে একবারও কাজের তদারকী করতে আসেনি। এই দুর্নীতিরোধে স্থানীয় এমপি ও দেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী এ্যাড. আনিসুল হক এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা।

এদিকে আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান স্বপন বলেছেন, তার এলাকার চানপুর-আনোয়ারপুর রাস্তায়ও ১০০ মিটার কাজ কম হয়েছে। এখানে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হয়েছে। নিম্নমানের ইট, ইটের নিচে মাত্র এক ইঞ্চি বালি দেয়া হয়েছে। এইচবিবি করণে প্রস্থও এক ফুট কম দেয়া  হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও সংশিষ্ঠদের বিরুদ্ধে তদন্তক্রমে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানায়, মেসার্স নাবিল ট্রের্ডাস এই কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হলেও বিএনপি নেতা ও ঠিকাদার ইসমাইল তাদের নিকট থেকে কিনে কাজ করেছে। এই ইসমাইল শুধু এই কাজ নয়, উপজেলার অধিকাংশ ঠিকাদারী কাজ করে সংশিষ্ঠদের নিয়ে সরকারী অর্থ লুটপাট করছে। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আইনমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির ঠিকাদার ইসমাইলের অনিয়ম দুর্নীতি চোখে পড়ার মত। উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প কর্মকর্তার যোগসাজশে ইসমাইল দেদারছে নিম্নমানের কাজ করে সরকারী অর্থ লুটপাট করছে। বিএনপি নেতা ঠিকাদার ইসমাইল যেসব কাজ আখাউড়ায় করেছে তা তদন্ত করলেই দুর্নীতির চিত্র উঠে আসবে বলে তিনি বলেছেন তবে ঠিকাদার ইসমাইল তার বিরুদ্ধে আনিত দুর্নীতির অভিযোগ অস্বিকার করেছেন।

মনিয়ন্দ শিকামুড়ায় ১০০ ফুট কাজ কম করা হয়েছে। এখানেও এইচবিবি করণ প্রস্থে বেশী দুর্নীতি করা হয়েছে। ৯.৮৪ ফুটের স্থলে মাত্র ৭ ফুট প্রস্থে কাজ করা হয। স্থানীয় চেয়ারম্যান মনিয়ন্দ ইউনিয়ন কামাল ভুইয়া এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, যেহেতু এখানে প্রস্থ  আছে ৭ ফুট কিন্তু এখানে প্রস্থ ধরা হয়েছে ৯.৮৪ ফুট।

এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী জানান, এই কাজের বিল তুলে নিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তিনি এই কাজের অনিয়ম বা দুর্নীতিতে জড়িত নয় বলেও দাবী করেন।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুজ্জামান বলেন, গ্রামীন মাটির রাস্তা এইচবিবি করণে অনিয়মের বিষয়টি তিনি মৌখিক ভাবে জেনেছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে ইতিমধ্যে ৩ সদস্যের একটি টিম গঠন হয়েছে বলেও তিনি জানান।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!