ব্রেকিং

x

আখাউড়ায় ঢুকছে ভারতের বিষাক্ত পানি

বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০:৫৭ অপরাহ্ণ

আখাউড়ায় ঢুকছে ভারতের বিষাক্ত পানি

‍ভারত ত্রিপুরার হাসপাতাল, শিল্প-কারখানা, গৃহস্থালির বর্জ্য ও নর্দমার দূষিত পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তিতাস নদীসহ আখাউড়ার খালবিল নদীনালার পানিতে মিশে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এলাকার মানুষের মধ্যে বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এসব বিষাক্ত পানি দিয়ে সীমান্ত এলাকার ধানের জমি সেচ দেয়ায় জমির উর্বরা শক্তিও নষ্ট হচ্ছে। ত্রিপুরায় ভূগর্ভস্থ কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রিপুরা থেকে এই সব বিষাক্ত পানি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আখাউড়ার কালন্দি খাল ও জাজি নদী দিয়ে আসছে।


জানাগেছে, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডাইং কারখানা, চামড়া কারখানা, মেলামাইন কারখানা ও বাসাবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনসহ বিভিন্ন বর্জ্য মিশে সেখানের পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। এই পানি কুচকুচে কালো আর উৎকট গন্ধযুক্ত। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একাধিকবার এই পানি পরীক্ষা করা হলেও এই বিষাক্ত পানি বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, ২০১৬ সালে পরীক্ষায় এই পানিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ- সীসা, সালফার, দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ও আয়রনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তখন এই পানি বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পরিশোধন করতে ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপনের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি ত্রিপুরা রাজ্য সরকার। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি আখাউড়া স্থলবন্দরের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী রাম কৃপাল যাদব ইটিপি স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আট বছর পার হয়েছে, কিন্তু সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি।


সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ড থেকে কালন্দি খাল দিয়ে নামছে এই পানি। এছাড়া সীমান্তবর্তী কালিকাপুর গ্রামের জাজি নদী দিয়েও আসছে এই দূষিত পানি। নদীর পানি মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুর পহেলা আর নয়াদিল গ্রাম দিয়ে এবং খালের পানি আখাউড়া পৌর এলাকার তারাগণ গ্রাম হয়ে দেবগ্রাম দিয়ে এবং শহরের প্রধান সড়কের পাশ ধরে নেমে এসে মিশে যাচ্ছে তিতাস নদীতে। এই বিষাক্ত পানি আখাউড়া পৌরসভাসহ সদর দক্ষিণ ইউনিয়ন ও মোগড়া ইউনিয়নের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই বিষাক্ত পানির খালের পাড়ে আখাউড়া স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন অফিস ও বিজিবি ক্যাম্প হওয়ায় দিনভর উৎকট এই দুর্গন্ধ সহ্য করে কর্মকর্তা ও সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।


স্থানীয় আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আয়েত আলী ভুইয়া জানান, এক সময় মিঠা পানির অন্যতম উৎস ছিল এই খালের পানি। অথচ এলাকাবাসী এখন এই খালকে কালো পানির খাল নামে ডাকে।

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: হিমেল খান জানান, এই দূষিত পানির কারণে পানিবাহিত চর্ম রোগসহ ফুসফুসের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চলতি বছর আখাউড়ায় চর্মরোগীর পরিমান কয়েক গুণ বেড়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো: ফারুক মিয়া জানায়, ব্যবসায়ী নেতারা ও সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা অনেক বছর ধরে কাল পানির সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহি জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মানজারুল মান্নান আখাউড়া স্থলবন্দর পরির্দশনের সময় এই পানি দেখে গেছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দিল্লীর একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে এই দোষিত পানির বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!