ব্রেকিং

x

“‌নিশ্চয়, নর‌কের চে‌য়ে স্বর্গ উত্তম”

মঙ্গলবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | ৯:১৭ অপরাহ্ণ

“‌নিশ্চয়, নর‌কের চে‌য়ে স্বর্গ উত্তম”

আত্মহত্যা ভয়ানক অপরাধ। ফ‌লে আত্মহত্যাকারী,  অসুন্দর, হিংস্র শিক্ষক‌দের স‌ঙ্গে আ‌মি নেই। আমার ম‌তো হয়‌তো অ‌নে‌কেই নেই। থাকারও কথা নয়। আত্মহত্যা মা‌নেই হলো, হে‌রে যাওয়া। কিংবা অন্য কাউ‌কে হে‌রে যে‌তে উৎসাহ প্রদান করা। আত্মহত্যা মা‌নেই  হ‌লো, আত্মহত্যার প্র‌রোচনাকারী ব্যক্তি‌টি‌কে বাঁ‌চি‌য়ে রাখা। ‌ভিকারুন‌নিসা স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা শিক্ষক সমাজ‌কে প্র‌শ্নের মু‌খে ফে‌লে‌ছে। প্রশ্নটা হল, শিক্ষক কেন হিংস্র হ‌বে। শিক্ষক কেন দূর্নী‌তিবাজ হ‌বে। শিক্ষক কেন অ‌শিক্ষক হ‌বে। শিক্ষক কেন মা বাবার চেয়ে আরও দা‌য়িত্ববান হ‌বেন না। কারন, তাঁ‌দের (শিক্ষক)) কা‌ছে সন্তান‌দের পাঠা‌নোই  হয় আর্দশ মানুষ বানা‌তে। সেই শিক্ষ‌কের (অপরাধী, দায়ী শিক্ষক) অপমানজনক হিংস্রতায় কারনে কারও প্রাণ যে‌তে পা‌রে না। ‌কেউ আত্মহত্যা কর‌তে পা‌রে না। আত্মহত্যার প্র‌রোচনা থাক‌বেই, মানুষ‌ অপমা‌নিত হ‌বে, মানুষ দ্বারা। এ‌তে আত্মহত্যা কর‌তে হ‌বে কেন। “প্র‌রোচনা” কিংবা “অপমান”‌তো বি‌নোদন হি‌সে‌বেও নেয়া যে‌তে পা‌রে।  আ‌মি জন্মগত ভা‌বেই শিক্ষ‌কের সন্তান। আমার জ‌ন্মের বহু বছর আগ থে‌কেই আব্বা শিক্ষকতা ক‌রেন। আম্মাও আমার শিক্ষক। আ‌মি সরাস‌রি আব্বার ছাত্র। ছোট‌বেলা থে‌কেই দে‌খে‌ছি, আব্বা তাঁর সকল ছাত্র‌দের  আমাদের চে‌য়ে বে‌শি ভালবাস‌তেন। স্নেহ কর‌তেন। আব্বা কো‌নো দিন বেত নি‌য়ে ক্লা‌সে আস‌তেন না। বিনামূ‌লে ছাত্র‌দের পড়া‌তেন। ছাত্র‌দের ক‌ষ্টে নি‌জে কাঁদ‌তেন। কষ্ট পে‌তেন। আব্বা ছাত্র‌দের প্রায় সময় আদর ক‌রে ” ডাঙ্গ‌নিরপুত” ডাঙ্গ‌নির‌জি” বল‌তেন।  আমা‌দের শিক্ষকরা (শ্র‌দ্বেয় স্যারগণ) শাসন কর‌তেন, যে শাস‌নে আমরা আ‌লো‌কিত হ‌য়ে‌ছি। গর্ব‌বোধ ক‌রে‌ছি, কর‌ছি। আব্বাসহ শ্র‌দ্বেয় কো‌নো শিক্ষক‌কে কো‌নো দিন, এক‌টি মূর্হু‌তের জন্যও অসুন্দর শিক্ষক, অসুন্দর মানুষ হ‌তে দে‌খি‌নি। আমার ম‌নে হয়, নামকরা শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠানগু‌লো‌তে অ‌নেক শ্র‌দ্বেয় শিক্ষকগণ র‌য়ে‌ছেন, যারা শিক্ষাথী‌দের কা‌ছে যেমন অসুন্দর ঠিক প‌রিবা‌রের কা‌ছেও তাই। বাবা, মা,  শিক্ষক এ‌কের ভেতর তিন‌টি শব্দ। এ পৃ‌থিবী‌তে সব‌চে‌য়ে মূল্যবান এ তিন‌টি শব্দ। কিন্তু এ তিনজন মানুষ য‌দি এ‌কে অপর‌কে বি‌শেষ ক‌রে সন্তান‌দের সাম‌নে প্রকা‌শ্যে অসম্মান ক‌রে, তাহ‌লে সন্তানরা নিরুপায় হ‌য়ে প‌ড়ে। কারণ,  কো‌নো সন্তানরাই এ তিনজন‌কে অপমান কর‌বে না। যারা ক‌রেন, তারা সন্তান নয়। তারা নিশ্চয় হিংস্র প্রাণী। সন্তান , শিক্ষার্থীরা বুঝ‌লো, কিন্তু মহান শিক্ষকগণ কি বুঝ‌লেন ?  আমার আব্বা আর্দশ শিক্ষক, সুন্দর মানুষ। যা‌দের বাবা , মা শিক্ষক, তা‌দের সন্তানরা নি‌শ্চিয় বল‌বেন, তারাও  আর্দশ সুন্দর মানুষ। প্রশ্নটা হ‌লে , হিংস্র কারা হ‌য়ে উঠ‌ছে ? তাঁ‌দের কে বিচার কর‌বে। শিক্ষক‌দের কেন বিচার কর‌তে হ‌বে ?  মঙ্গলবার প্রায় সারা দিন ভিকারুন‌নিসা স্কু‌লের সাম‌নে ছিলাম। অ‌ভিভাবক শিক্ষার্থী‌দের কাঁন্না দেখে‌ছি। কান্না দে‌খে‌ছি শিক্ষকগণ‌দেরও। অ‌নেক শিক্ষক‌কে দেখলাম ঘন্টার পর ঘন্টা মাথাটা নিচু ক‌রে  দাঁ‌ড়ি‌য়ে ছি‌লেন। কো‌নো কথা বল‌ছি‌লেন না। অ‌নেক শিক্ষক শিক্ষার্থী‌দের মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে আদর কর‌ছি‌লেন, শান্তনা দি‌চ্ছি‌লেন। অ‌নেক শিক্ষার্থী প্রিয় শিক্ষক‌দের জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কাঁদ‌ছি‌লেন, কাঁদ‌ছি‌লেন শিক্ষকরাও। শিক্ষার্থী অ‌রিত্রা কে আমরা হা‌রি‌য়ে‌ছি। শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠান‌টির শিক্ষকরা কি ? ঘুমা‌তে পার‌বেন ? সম্ভব ?। আর য‌দি সম্ভব হয়, তাহ‌লে ম‌নে কর‌তে পা‌রি, আপ‌নি নি‌জের প‌রিবা‌রেও ভয়ানক এক হিংস্র প্রাণী। হিংস্রতা নি‌য়ে এ মহান শিক্ষকতা পেশায় কেন, অন্য পেশায় চ‌লে যান। প্লিজ,,,  এবার আ‌সি, আত্মহত্যার বিষয়‌টি নি‌য়ে। অসম্মান কিংবা সম্মান‌বোধ পাশাপা‌শি শব্দ। যেমন ভা‌লোবাসা, ঘৃনা। পৃ‌থিবীর সব‌চে‌য়ে নেক্করজনক অপমান, অসম্মান  কিংবা  বেতাঘাত’র প্র‌তিশব্দ আত্মহত্যা হ‌তে পা‌রে না। কো‌নো উদাহর কিংবা যু‌ক্তি নেই যে, আত্মহত্যা কর‌তে  হ‌বে।  দু‌টি মামলা হওয়া দরকার, এক‌টি অপরাধী শিক্ষক অন্য‌টি আত্মহত্যাকারীর বিরু‌দ্ধে। অ‌রিত্রা কিংবা আত্মহত্যাকারীরা ভয়ানক অপরাধী। এক প্রকার হিংস্রতাও ব‌টে। নি‌জের স‌ঙ্গে হিংস্রতা। তা‌দের মর‌নোত্তর বিচার হওয়া উ‌চিত। সংগ্রামই য‌দি না কর‌তে পা‌রেন, তাহ‌লে শত কষ্ট আর যন্ত্রণা নি‌য়ে আপনা‌কে বেঁ‌চে থাক‌তে হ‌বে। প্র‌তিবা‌দী হ‌য়ে উঠুন, কখনও শ্রদ্ধার স‌ঙ্গে , কখনও সংগ্রা‌মের স‌ঙ্গে।  অব‌শে‌ষে সরকার, রাষ্ট্র বাহাদুর ম‌হোদয়‌দের কা‌ছে প্রার্থনা জানাব, আত্মহত্যা প্র‌তি‌রো‌ধে স‌ক্রিয় হোন। স‌চেতনামূলক প্রচার প্রচারণা চালান। নয়‌লে, অল্প‌তেই কিংবা চরম পর্যা‌য়েই হোক, প্রিয়জন আত্মহত্যার পথ বেঁ‌চে নে‌বেন। একই স‌ঙ্গে আত্মহত্যাকারী পরিবা‌রের সদস্য‌দেরও আই‌নের আওতায় আনা উ‌চিত। কারণ, আপ‌নি ব্যর্থ ব‌লে, জীব‌নের স‌ঙ্গে সংগ্রাম ক‌রে বেঁ‌চে থাক‌তে হয়, সন্তান‌দের, স্বজন‌দের এমন শিক্ষাটা না দেয়ায়। ‌ প্লিজ, এমন কো‌নো কাজ করা ঠিক নয়, ‌যে কা‌জের জন্য কো‌নো প্রাণ চ‌লে যে‌তে পা‌রে। যা‌দের কার‌ণে আত্মহত্যার ম‌তো ভয়ানক ঘটনা ঘট‌ছে, তা‌রা ভে‌বে দেখুন, আপনার সন্তান সেই  সা‌রি‌তে  পড়‌ছে ক‌বে ?  অপমান সহৎ ক‌রে বেঁ‌চে থাকার নাম “স্বর্গ” হ‌তে পা‌রে। অপমান করা প্রাণ‌গিু‌লোর নাম “নরক” হ‌তে পা‌রে। নিশ্চয় নর‌কের চে‌য়ে স্বর্গ উত্তম। ‌-শিপন হাবীব, সিনিয়র স্টাফরিপোর্টার, দৈনিক যুগান্তর



আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!