স্বজনদের সাথে আর ঈদ করা হলনা কাউছারের। ঈদের দিন বাড়ি ফিরল লাশ হয়ে। শুক্রবার সন্ধ্যা রাতে আখাউড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কাউছারের লাশ ময়নাতদন্তের পর আজ শনিবার ঈদের দিন তার বাবা সরাজ মিয়া হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা সদরের সুজনগ্রামে নিয়েগেছে। আটককৃত রাজু মিয়া (১৭)কে পুলিশ জেলহাজতে পাঠিয়েছে। আজ সরেজমিন খোজ নেয়ার সময় নিহত কাউছারের নানা কষ্ট আর বেদনার কথা তুলে ধরেছেন তার দাদী মালেকা বেগম।
তিনি বলেছেন মাত্র এক বছর বয়সেই মা হারিয়েছে কাউছার মিয়া। কিছুদিন পর বাবা সরাজ মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করার পর দাদী মালেকা বেগমের কাছে বড় হয় কাউছার। মা-বাবার আদর স্নেহ কি তা সে জানতো না। সৎ মায়ের সংসারে কখনো ঠায় হয়নি তার। এক বুক কষ্ট নিয়েই কাউছার বেড়ে উঠেছে। শিশু বয়সে যখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদনসহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা গ্রহন করার কথা সে বয়সে কাউছার মানুষের দোকানে দোকানে অর্থের বিনিময়ে শ্রম দেয়া শুরু করে।
তিনি আরো জানান, দাদীর অভাবের সংসারে ১২ বছর বয়সেই শ্রমিকের খাতায় নাম লেখায় কাউছার। কয়েক বছর পর কর্মের তাগিদে কাউছার চলে আসে আখাউড়ায়। সব কষ্ট বুকে চেপে জীবন ভালোই চলছিল আখাউড়ায়। রেল স্টেশনে ট্রেনে চিপস, চকলেট, ড্রিংকসসহ বিভিন্ন খাবার বিক্রি করে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পেত। তা দিয়েই সুন্দর ভাবে চলছিল জীবন। দাদী মালেকাকে বলেছিল ঈদের দিন ভোরবেলা বাড়িতে আসবে।
কাউছারের বাবা ও তার স্বজনরা
আহত আলী হোসেন জানায়, ঈদের আগের দিন ইফতারের সময় পর্যন্ত স্টেশনে ট্রেনযাত্রীদের ভীড়ে ভালো বিক্রি হয়। মাল বিক্রির পর সহকর্মী কাউছার স্টেশন থেকে সরাসরি তার বাড়ি আখাউড়া মসজিদপাড়ায় চলে আসে। আখাউড়া বাইপাস সড়কের একদম পাশেই আলী হোসেনের বাড়ি। এখান থেকেই ভোরে কাউছার বাড়িতে চলে যাবে বলেছিল আলী হোসেনকে। এই ঈদ নিয়েই কাউছার ও আলী হোসেন বাইপাস সড়কের দক্ষিন পার্শ্বে ঠান্ডা হাওয়ায় সবুজ ঘাসে বসে গল্প করছিল। সন্ধ্যা তখন সাড়ে ৭টা। পেছন থেকে দ্রুত বেগে রাস্তা পার হয়ে একটি মোটরসাইকেল এসে তাদের উপরে উঠে যায়। মোটরসাইকেলের বডি ও চাকায় পিষ্ট হয়ে কাউছার ও আলী হোসেনের মাথা থেতলে যায়, পিঠ আর বুকে রক্তাক্ত জখম হয়ে গুরুত্ব আহত হয়।
পরে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে আখাউড়া হাসপাতালে নিয়ে আসলে কাউছারকে ডাক্তার মৃত ঘোষনা করে। আলী হোসেনকে আখাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তার অবস্থা আশংকাজনক। আজ শনিবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে পাঠানো হবে বলে কর্তব্যরত ডাক্তার জানিয়েছেন।
কাউছারের বাবা সরাজ মিয়া জানায়, ময়নাতদন্তের লাশ হাতে পেয় বাড়ির পথে রওয়ানা হয়েছেন।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com