কনকনে ঠাণ্ডায় মানুষের জুবুথুবু অবস্থা। কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে তীব্র শীত। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা নেমেছে সাড়ে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আজ ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে হাঁড় কাঁপানো ঠাণ্ডা বাতাস ছিল সর্বত্র। একই সাথে ঘন কুয়াশায় শীতের মাত্রা ছিল আরো বেশি। হঠাৎ জোরে-শোরে শীতল বাতাস বইতে শুরু করায় ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে বৃদ্ধদের অবস্থা খুবই করুণ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঠাণ্ডার কামড় সহ্য করতে না পেরে খড়-কাঠে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরমের চেষ্টা করেছেন বয়ষ্করা।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামীকালও ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী বিভাগের অঞ্চল এবং সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল এলাকায় থাকবে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের শৈত্য প্রবাহ।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, শৈত্য প্রবাহের এ অবস্থা আরো পাঁচদিন থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাসিফিক ইএনএসও ক্লাইমেট সেন্টারের প্রধান বিজ্ঞানী রাশেদ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধির দীর্ঘ মেয়াদী গড় থেকে বর্তমান সময়ের শীত হ্রাস পাচ্ছে এটা ঠিক। তবে শীতকালীন ‘লা নিনার’ কারণে এবার বাংলাদেশের কোথাও কোথাও কিছুদিন কিছুটা বেশি মাত্রায় ঠাণ্ডাও পড়তে পারে।’
এবারকার ঠাণ্ডাটা অন্যান্য বছরের চেয়ে একটু বেশি ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে আবহাওয়াবিদদের কাছে। অন্যান্য বছর ডিসেম্বর মাস থেকে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মৃদু থেকে মাঝারী শৈত্য প্রবাহ শুরু করে আবার কিছুদিন পর তা হ্রাস পেয়ে গেছে এমন উদারহণ রয়েছে। কিন্তু এবার পুরো ডিসেম্বরের মাসে ঠাণ্ডা ছিল খুবই সহনীয় মাত্রায়। রাজধানী ঢাকায় এমনকি গ্রামে পর্যন্ত সকালে পাতলা জামা গায়ে দিয়েও শিশু ও যুবক শ্রেণি চলাফেরা করেছে। ডিসেম্বর মাস পেরিয়ে গেলেও ঠাণ্ডা না পড়ায় অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন যে শীত পড়বে না, সহনীয় মাত্রার ঠাণ্ডায় কেটে যাবে এবারের শীতকালটা। হঠাৎ অতিমাত্রায় শীত পড়ায় অভিজ্ঞ জনদের অনেকেই বিস্মিতও হয়েছেন।
ঢাকার ইফতেখার আহমেদ পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও তিনি ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমরা খুব ভালোভাবেই অনুভব করছি। ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র বলে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে এটা খালি চোখেই অনুভব করতে পারছি। এবার শীতের খেয়ালী আগমনের ব্যাপারটিও জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব হতে পারে।
বিজ্ঞানী রাশেদ চৌধুরী আরো বলেন, ‘গত তিন দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা গত শতাব্দির গড় তাপমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৭ সালের মার্চে সমুদ্রে যে তাপমাত্রা বেড়েছে তা বিংশ শতাব্দির গড় তাপমাত্রার চেয়েও বেশি। এর প্রভাব বিশ্বব্যাপি পড়ছে, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।’
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে তীব্র শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অপরদিকে দেশের অন্যত্র এ মাসে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারী মানের শৈত্য প্রবাহের আওতায় আসতে পারে।
আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল মংলায় ২৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগ এবং সিলেট বিভাগের সিলেট ছাড়া দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ছিল। উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশে-পাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। জেট বায়ুর সাথে এর একটি সম্পর্ক রয়েছে। জেট বায়ু এ সময় আকাশের অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এ কারণেই প্রচণ্ড হাওয়া বয়ে যাচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com