ব্রেকিং

x

মিয়ানমারে বিপর্যয় ভারতের, নেপথ্যে চীনের কারসাজি!

বুধবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৮ | ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারে বিপর্যয় ভারতের, নেপথ্যে চীনের কারসাজি!

পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে যখন চীন-বিরোধী ঐক্যের এক কৌশলগত অক্ষ তৈরি করতে চাইছে নয়াদিল্লি, ঠিক তখনই এলো বড় ধাক্কা! ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবিত ‘মোটর ভেহিক্যাল প্রকল্প’ থেকে শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়াল আং সান সু চি-র দেশ।


ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং জানিয়েছেন, ‘‘মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা এই প্রকল্পের পুনর্মূল্যায়ন করতে চায়। অন্যান্য দেশের মধ্যে যেখানে-যেখানে এই রকম ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখে তবেই এগোতে চায় তারা।’’ কয়েক মাস আগে এই মিয়ানমারই আগ্রহ দেখিয়ে চুক্তি সই করতে সম্মত হয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমান, তাদের এই সিদ্ধান্ত বদলের পিছনে হাত রয়েছে বেইজিংয়ের।


ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হচ্ছে, মিয়ানমারকে ফের বোঝানোর একটা শেষ চেষ্টা করা হবে চলতি মাসের শেষে। ভারত-আসিয়ান সম্পর্কের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্মেলন শুরু হচ্ছে ভারতে। আসছেন মিয়ানমারের ‘স্টেট কাউন্সিলর’ সু চিও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়েই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে পণ্য এবং রাজনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ নিয়ে দৌত্যও কিছু কম করেননি। ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মধ্যেই গিয়েছিলেন মিয়ানমার সফরে। ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড হাইওয়ে তথা মোটর ভেহিক্যাল চুক্তির পরিকল্পনাটি শুরু হয় তখনই।

ভাবনাটি ছিল মণিপুরের মোরে থেকে শুরু হযে সড়ক এগোবে তামু, কালেওয়া হয়ে। তার পরে মিয়নমারের মান্দালয়, মাওয়ালমাইন হয়ে থাইল্যান্ডের মায়ে সত পর্যন্ত পৌঁছবে। মোট ১ হাজার ৩৬০ কিলোমিটার মোটরপথ। ভারত এতটাই নিশ্চিত ছিল এই হাইওয়ে নিয়ে যে, ইতিমধ্যেই তামু-কাইগন-কালেওয়া সেক্টরে ৬৯টি সেতুর বরাত দিয়ে দিয়েছিল। মিয়নমারের কালেয়া-অয়ারর্গি সেকশনের ১২০.৭৪ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের জন্য টাকা দেয়ার কথাও ঘোষণা করে নয়াদিল্লি।

এই নিয়ে তিন দেশের কর্তাদের প্রাথমিক বৈঠকও হয়। চার মাস আগে মিয়ানমার সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন সু চি-র সঙ্গে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করও গত মাসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যান সে দেশের সংশ্লিষ্ট আমলাদের সঙ্গে।

এত কিছুর পরে মিয়ানমারের তরফে যাবতীয় উদ্যোগে জল ঢেলে দেয়াটা ভারতের কাছে কিছুটা মুখ পোড়ার মতো। কারণ, চীনের ‘ওবর’ প্রকল্পের প্রবল বিরোধিতা করে সাউথ ব্লক বারবার এই তিন দেশীয় সড়ক যোগাযোগ প্রকল্পটিকে তুলে ধরেছে। নয়াদিল্লির বক্তব্য, এটি তাদের নিজস্ব সংযোগ-উদ্যোগ, যা অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে ব্যাহত না করেই আঞ্চলিক বাণিজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, শেষ মুহূর্তে মিয়ানমারের পিছিয়ে আসার পিছনে কলকাঠি নেড়েছে বেইজিংই।

চীনকে কটাক্ষ প্রধানমন্ত্রীর

ভারত অন্য কারো ভূখণ্ড বা সম্পদের দিকে নজর দেয় না। অন্য দেশকে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করার ক্ষেত্রেও ‘দেয়া-নেয়া’ নীতি অবলম্বন করে না ভারত। নাম না করে চীনকে কটাক্ষ করে এমনটাই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মঙ্গলবার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমপিদের প্রথম সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদি জানান, ভারত চিরকালই বিশ্বে গঠণমূলক ভূমিকা পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাভ ও ক্ষতির ভিত্তিতে নয়, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি মাপা হয় মনুষ্য মূল্যবোধের আয়না দিয়ে।

প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাদের মতে, নাম না করে চীনের উদ্দেশ্যেই এই বার্তা দিয়েছেন মোদি। সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সম্পর্ক দৃঢ় করছে বেইজিং।

পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর ফলে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল সহ ভারতের একাধিক প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে। এই সব দেশকে দীর্ঘদিন ধরেই উন্নয়ন সহায়তা দিয়ে আসছে ভারত। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের পাল্লা হাল্কা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিন প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা দর্শন যেকোনো চরমপন্থা ও মৌলবাদের মোকাবিলা করতে সক্ষম। তিনি বলেন, কারো সম্পদকে শোষণ করা বা কারও ভূখণ্ডে নজর দেয়া আমাদের অভিপ্রায় নয়। সম্পদ উন্নয়ন ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিই আমাদের লক্ষ্য। সূত্র: নয়াদিগন্ত

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!