দশম জাতীয় সংসদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা এমন মন্ত্রী সংখ্যা ছিলো তিনজন। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাত্র একজন মন্ত্রীসভায় ঠাঁয় পেয়েছেন। তিনি হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আনিসুল হক। আগের মন্ত্রণালয় অর্থাৎ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই পেয়েছেন তিনি।
দশম সংসদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করা ছায়েদুল হক ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর মারা যান। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা ও ঢাকার কেরাণীগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। এবারের মন্ত্রীসভায় তাঁর ঠাঁয় হয়নি।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবারের মন্ত্রী সভায় ঠাঁয় পাবেন বলে আশায় ছিলেন জেলার মানুষ। তিনি মন্ত্রী পরিষদে ঠাঁয় না পাওয়ায় নেতা-কর্মীদের আশাভঙ্গ হয়েছে। তবে রদবদল কিংবা সংযুক্তি হলে মোকতাদির চৌধুরী ঠাঁয় পেয়ে যেতে পারেন বলেও আশা করা হচ্ছে।
অপরদিকে আনিসুল হক মন্ত্রী হওয়ায় তাঁর নির্বাচনী এলাকা কসবায় গতকাল রবিবার বিকেলে উপজেলা ছাত্রলীগ আনন্দ মিছিল করেছে। ছাত্রলীগ সভাপতি মো. মনির হোসেন ও সাধারন সম্পাদক আফজাল হোসেন খান রিমনের নেতৃত্বে মিছিলটি পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। আখাউড়ার খড়মপুর মাজার শরীফ এলাকায় আনিসুল হকের জন্য কোরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। লুৎফুর রহমান খাদেম, মাহমুদুল হাসান খান, আলী আজগর প্রমুখ দোয়া পড়ান।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। সরকারের প্রশংসিত মন্ত্রীদের তালিকায় ছিলেন তিনি। ৮০০ তরুণ-তরুণিকে সরকারি চাকরিসহ অন্তত ১৮০০ জনকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া, এলাকায় নিয়মিত আসা, ঢাকার বাসভবনে এলাকার মানুষের জন্য দুইদিন কথা বলার জন্য সময় দেয়া, মোবাইল ফোন রিসিভকরাসহ বিভিন্ন কারণে এলাকার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন তিনি।
এক নজরে আনিসুল হক
১৯৫৬ সালের ৩০ মার্চ জন্মগ্রহন করেন আনিসুল হক। তাঁর গ্রামের বাড়ি কসবা উপজেলার পানিয়ারূপে। তাঁর পিতা সিরাজুল হক ছিলেন দেশ বরেণ্য আইনজীবী ও দেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম। সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে যে ৩৪ সদস্যের কমিটি করা হয় এর সদস্য ছিলেন সিরাজুল হক। ১৯৭০ সালে কসবা-বুড়িচং নির্বাচনী এলাকা থেকে পাকিস্থান জাতীয় পরিষদ সদস্য ও ১৯৭৩ সালের সাধারন নির্বাচনে কসবা-আখাউড়া এলাকা থেকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক। ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর সিরাজুল হক মৃত্যুবরণ করেন। আনিসুল হকের মা জাহানারা হকও একজন মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৮ সালে বোন সায়মা ইসলাম, ২০১৭ সালে ভাই আরিফুল হক মারা যান। স্ত্রী নূর আমাতুল্লাহ রীনা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ১৯৯১ সালে। মুক্তিযোদ্ধা মা জাহানারা হককে নিয়েই আনিসুল হকের সংসার।
বাবার মতো ছেলে আনিসুল হকও আইন পেশায় বেশ নাম কুঁড়ান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসলী তিনি। এছাড়াও বিডিআর বিদ্রোহ ও দুদকের মামলাসহ রাষ্ট্রীয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেছেন।
রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় না থাকলেও এলাকায় প্রায়ই এলাকায় আসতেন আনিসুল হক। শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করতেন নীরবে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এনে তিনি চমকে দেন। আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে তিনি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
আনিসুল হক ঢাকার সেন্ট যোসেফ স্কুল থেকে ও লেভেল ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে এ লেভেল সম্পন্ন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজ সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলবি ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কিংস কলেজ থেকে এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেন। আনিসুল হক ১৯৮৫ সালে ঢাকা জেলা জজ কোর্ট ও ১৯৮৭ সালে হাই কোর্টের সুপ্রিম কোর্ট ডিভিশনে এবং ২০০১ সালে আপীল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
আখাউড়া উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও পৌর মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ি আবারো আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন আনিসুল হক। একজন যোগ্য ব্যক্তিকে আবারো দায়িত্ব দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের অসীম কৃতজ্ঞতা।’
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com