ব্রেকিং

x

ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাপুইরে জীবন দিয়ে অপমানের প্রতিবাদ জানালো স্কুল ছাত্রী লিমা!

মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮ | ১০:৪৬ অপরাহ্ণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাপুইরে জীবন দিয়ে অপমানের প্রতিবাদ জানালো স্কুল ছাত্রী লিমা!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চাপুইর গ্রামের স্কুল ছাত্রী জান্নাত আক্তার লিমা অপমান সইতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছে। এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে লিমার পরিবার।
মাছিহাতা ইউনিয়নের সাত নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মো. উদয় খান ও তার লোকজন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে লিমাকে প্রকাশ্যে মারধর করেছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। এ সময় লিমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে এমন কথা বলে ইয়াছিন নামে এক যুবককেও মারধর করা হয়।
লিমা চাপুইর আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও ওই গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. নুরুল হক ভূঁইয়ার একমাত্র মেয়ে। গত রবিবার সকালে নিজ বাড়িতেই সে আত্মহত্যা করে। ময়না তদন্ত শেষে গত সোমবার বিকেলে লিমার লাশ দাফন করা হয়। প্রথম দিকে বিষয়টি চাপা থাকলেও এখন অনেকেই বলাবলি করতে শুরু করেছেন।
পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামের মো. ইয়াছিন নামে এক যুবক লিমাদের বাড়িতে বছর দু’য়েক আগে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। গত রবিবার সকালে লিমা ও ইয়াছিনকে চাপুইর এর পাশ্ববর্তী গ্রাম খেওয়াই এলাকায় মারধর করে উদয় খান ও তার লোকজন। মারধরের পর লিমাকে তার এক আত্মীয় এসে নিয়ে যায়। অন্যদিকে ইয়াছিনকে চাপুইর আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে আটক করে রাখা হয়। এরই মধ্যে লিমা নিজ বাড়িতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
ইয়াছিন স্থানীয় লোকজনকে জানান, তিনি বিবাহিত। লিমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। লিমার কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন সিম নিতে আসেন। এছাড়া উদয়ও তাকে আসার জন্য ফোন করে। খেওয়াই এলাকায় সিম দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে উদয়সহ অন্যান্যরা লিমা ও তাকে মারধর করে।
লিমার বড় ভাই রজব আলী কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি অভিযোগ করেন, উদয় ও তার লোকজনের প্রকাশ্য মারধর ও অপমানের কারণেই লিমা আত্মহত্যা করেছে। লিমার বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
লিমার ফুফাতো ভাই মো. মনির মিয়া জানান, তিনি অনেক ছেলেদের জটলা দেখে এগিয়ে যান। এ সময় লোকমান নামে এক যুবককে দেখেন লিমাকে মারতে উদ্যত হয়েছেন। এ লিমা তার মামাতো বোন পরিচয় দেন। তিনিও তখন লোকমানকে মারতে উদ্যত হন। এ অবস্থায় লিমাকে তিনি বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বাড়িতে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই লিমা আত্মহত্যা করে।
চাপুইর আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এক সহকারি শিক্ষকের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি এসে দেখেনে ইয়াছিন নামে যুবককে আটক করে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে লিমা নামে মেয়েটির সম্পর্ক আছে বলা হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা বলার পর্যায়ে খবর আসে লিমা নিজের বাড়িতে আত্মহত্যঅ করেছে।
মাছিহাতা ইউনিয়নের সাত নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘মূলত অপবাদ সইতে না পেরেই লিমা আত্মহত্যা করেছে।’ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মোখলেছুর রহমানও একই অভিযোগ করে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
লিমার মা অভিযোগ করেন, উদয় ও অন্যান্যরা তার মেয়েকে প্রকাশ্যে মারধর করেছে। আর এ অপমান সইতে না পেরেই সে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় তিনি সাতজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে উদয় কিংবা তার বাবা রহিজ খানকে পাওয়া যায় নি। তারা কোথায় আছেন এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয় নি। উদয়ের মা লুৎফা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কাউকে মারধর করেনি।’
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নবীর হোসেন জানান, লিমার পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলে সে অনুযায়ি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি জানান, লিমার লাশের ময়না তদন্ত করানো হয়েছে।


 


আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!