ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি চুরির ঘটনায় আটকের পর পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে থানা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়া নৈশপ্রহরী রাসেল মিয়া (১৯) মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা ২০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
রাসেলের বড় ভাই লিটন মিয়া মুঠোফোনে রাসেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত মঙ্গলবার (২১ মে) রাত থেকে ঢামেকের নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডের ১০৩ নম্বর কক্ষে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন রাসেল। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হলো তাকে।
রাসেল জেলা শহরের মধ্যপাড়া মহল্লার রবি মিয়ার ছেলে ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার এটিএম বুথের নৈশপ্রহরী ছিলেন।
গত সোমবার (২১ মে) শহরের কোর্ট রোডস্থ সিটি সেন্টারের ‘স্বপ্নলোকে ফ্যাশন হাউস’ নামে একটি কাপড়ের দোকানে চুরির ঘটনায় সদর মডেল থানায় মামলা হওয়ার আগেই পুলিশ রাসেলকে আটক করে থানায় নির্যাতন করে বলে অভিযোগ ওঠে। নির্যাতনের শিকার রাসেল ওইদিন রাতে সদর মডেল থানা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন।
যদিও স্বপ্নলোকে ফ্যাশন হাউসের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলামের করা মামলায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ মামলায় তানজিল (২৫), আশিক (২৮) ও শওকত (২৬) নামে তিন যুবককে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরা তিনজন ওই ফ্যাশন হাউসের কর্মচারী বলে জানা গেছে।
মামলাটি ঘটনার দিন (২১ মে) দুপুরে রেকর্ড দেখানো হলেও এদিন রাত ১০টা পর্যন্ত থানায় চুরির ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ বা এজহার জমা পড়েনি বলে জানিয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন। তবে ‘অতি উৎসাহী’ হয়ে পুলিশ সেদিন দুপুরে স্বপ্নলোকের কয়েকজন কর্মচারীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর বিকেলে সিটি সেন্টারস্থ শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথের নৈশপ্রহরী রাসেলকে বাড়ি থেকে থানায় ডেকে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে রাসেলের লাফিয়ে পড়ার ঘটনায় সবার মাঝে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে স্বপ্নলোক কর্তৃপক্ষকে মামলা দিতে বলে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে রাসেলের লাফিয়ে পড়ার ঘটনা তদন্তে গত মঙ্গলবার (২২ মে) বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা পুলিশ। তবে এ কমিটির তদন্ত কাজ কতটুকু স্বচ্ছ হবে সেটি নিয়েও শঙ্কায় আছে রাসেলের পরিবারের লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বপ্নলোকে ফ্যাশন হাউসের ওই চুরির ঘটনায় চোরেরা ক্যাশবাক্স থেকে নগদ অর্থসহ প্রায় তিন লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এ কাপড়ের দোকানটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবিরের আপন ভাতিজা আসিফ ইকবালের মালিকানাধীন। এর ফলে পুলিশ চোর ধরার জন্য ‘অস্থির’ হয়ে পড়ে। লিখিত কোনো অভিযোগ ছাড়াই ওইদিন দুপুরে সিটি সেন্টারের নৈশপ্রহরী ও স্বপ্নলোকে ফ্যাশন হাউজের কর্মচারীসহ অন্তত আটজনকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। বিকেলে থানায় নিয়ে আসা হয় ব্যাংকের নৈশপ্রহরী রাসেলকেও। এরপর রাসেলের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন তার স্বজনরা। রাসেল সেদিন থানা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন।
পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রাসেলের মামা খবির মিয়া বলেন, পুলিশ বাড়ি থেকে থানায় ডেকে নিয়ে রাসেলকে নির্যাতন করেছে। পরে তাকে থানা ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে।
যদিও পুলিশের দাবি, রাসেলকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি।
শহরে নানা সময় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশের তৎপরতা খুব একটা চোখে না পড়লেও স্বপ্নলোকে ফ্যাশন হাউসের চুরির ঘটনায় পুলিশের ‘অতি উৎসাহী’ মনোভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকেই।
সুত্র: জাগোনিউজ
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com