একমাত্র ছেলের মৃত্যুর হয়েছে বছর দুই আগে। তারই সংরক্ষিত শুক্রাণু থেকে যমজ নাতি পেলেন প্রৌঢ় মা-বাবা। সামান্য হলেও ভুললেন পুত্রশোক।
দু’বছর আগে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় পুণের বাসিন্দা বছর সাতাশের এক যুবকের। ২০১৩ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিতে গিয়েছিলেন ওই যুবক। সেই সময়েই তাঁর ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। কেমোথেরাপিতে ওই যুবকের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁর শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তাঁর মা বাবা।
ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর থেকে জার্মানির একটি নার্সিংহোমে ওই যুবকের কেমোথেরাপি শুরু হয়। তার আগে ‘ক্রায়োপ্রিসারভেশন’ পদ্ধতিতে তাঁর শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখেন চিকিৎসকেরা। কেমোথেরাপির পর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় তাঁর। ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে পুণেতে মৃত্যু হয় তাঁর।
ওই যুবকের মা পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার ছেলে পড়াশোনাতে তুখোড় ছিল। শেষ পর্যন্ত বাঁচার লড়াই চালিয়ে গিয়েছে।’’ ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়লেও মনোবল হারাননি বছর ঊনপঞ্চাশের ওই শিক্ষিকা। তিনি বলেছেন, ‘‘ছেলের সংরক্ষিত শুক্রাণু থেকে নাতি-নাতনি পেতে চেয়েছিলাম আমরা। সেটাই হয়েছে।’’
জার্মানির যে স্পার্ম ব্যাঙ্কে ওই যুবকের শুক্রাণু সংরক্ষিত ছিল সেখানে যোগাযোগ করেন তাঁর মা বাবা। শুক্রাণু সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রও জমা দেন তাঁরা। শুক্রাণু সংগ্রহের পরে তার থেকে ভ্রুণ তৈরির পদ্ধতি বা আইভিএফ (ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন)-এর জন্য পুণের সহ্যাদ্রি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। আইভিএফ বিশেষজ্ঞ সুপ্রিয়া পুরানিকের কথায়, ‘‘গত বছর ফেব্রুয়ারির শেষে জার্মানি থেকে একটি সলিউশন বক্সে করে বিশেষ উপায় সংরক্ষিত শুক্রাণু পুণেতে এসে পৌঁছয়। তার পর প্রয়োজনীয় পদ্ধতি শুরু করি আমরা।’’
কী ভাবে জন্ম হয় ওই যমজ সন্তানের?
আইভিএফ বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, প্রথমে ওই পরিবারের সঙ্গে চেহারায়, গায়ের রঙে মিল রয়েছে এমন ‘এগ ডোনার’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। ওই মহিলার ডিম্বাণির সঙ্গে সংরক্ষিত শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে গবেষণাগারে চারটি অপরিণত ভ্রুণ তৈরি হয়। ওই মহিলা সেই ভ্রুণ নিজের গর্ভে ধারণ করতেও রাজি হয়ে যান।
কিন্তু, তাঁর শারীরিক অবস্থা গর্ভে ভ্রুণ ধারণের জন্য উপযুক্ত ছিল না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওই যুবকের এক বোন গর্ভদান করতে রাজি হয়ে যান। ৩৮ বছর বয়সী ওই মহিলার শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁর গর্ভেই ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসকেরা। সুপ্রিয়ার কথায়, ‘‘যুবকের বোনের শারীরিক পরীক্ষা করে গত বছর মে মাসের শেষের দিকে তাঁর গর্ভে দু’টি ভ্রুণ প্রতিস্থাপিত করি আমরা। তাঁকে রেগুলার চেক-আপে রাখা হয়েছিল। গত সোমবার দু’টি সুস্থ যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি।’’
তথ্য সুত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com