নামে ফার্স্ট লেডি হোয়াইট হাউসে মন নেই:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এক বছর পূর্ণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই দীর্ঘ সময়ে ফার্স্ট লেডি হিসেবে ট্রাম্পপত্নী মেলানিয়া ট্রাম্পের নাম ভালো-মন্দ অনেকভাবেই গণমাধ্যমে এসেছে। সবচেয়ে বেশি যে কয়টি আলোচনায় এসেছে তা হল- হোয়াইট হাউসের কোনো কাজকর্মে মেলানিয়ার মন নেই। জনসম্মুখেও তার উপস্থিতি কম।
নিউইয়র্ক থেকে হোয়াইট হাউসে আসতে তার সময় লেগেছিল পাঁচ মাস, যেটা আমেরিকার আধুনিক ইতিহাসে কোনো ফার্স্ট লেডির ক্ষেত্রে এমনটা শোনা যায়নি।
মেলানিয়াকে নিয়ে আরেকটি প্রচলিত চটক গল্প হল, হোয়াইট হাউসে পৃথক ঘরে থাকেন। তাদের শোবার ঘর আলাদা। গত বছরের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের অভিষেকে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
এরপর গত এক বছরে তাকে খুব কমই জনসম্মুখে দেখা গেছে। ফার্স্ট লেডি হিসেবে হোয়াইট হাউসে তার যে ভূমিকা থাকার কথা তেমনটা দেখা যায়নি। পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ট্রাম্পের সঙ্গে তার একটা দূরত্ব দেখা গেছে।
এক ধরনের রহস্যই থেকে গেছেন তিনি। তার মতামত, ট্রাম্পের সঙ্গে তার সংসার ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কোটি কোটি মার্কিন জনগণের কাছে একটা রহস্য হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে ফার্স্ট লেডির জায়গা দখল করেছেন ট্রাম্পকন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প। অর্থনীতি-রাজনীতি থেকে শুরু থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রায় সব পরামর্শই ট্রাম্পকে দিচ্ছেন তিনি।
এমনকি হোয়াইট হাউসে নিজের নামে একটি কক্ষও বরাদ্দ পেয়েছেন ইভাঙ্কা। ট্রাম্প-হেঁসেলের অদৃশ্য ‘গিন্নি’ মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প, আর পারিবারিক আধিপত্য সমীকরণে মেলানিয়ার থেকে ইভাঙ্কার প্রভাব, প্রাধান্য সবই বেশি।
এই অভিমানেই ট্রাম্প-সংশ্লিষ্ট সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন এককালের ডাকসাইটে মডেল মেলানিয়া ট্রাম্প। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে শপথ গ্রহণ, হোয়াইট হাউসে ওঠা পর্যন্ত ইভাঙ্কা-মেলানিয়ার এ ‘দুই সতীন’ মার্কা দূরত্ব অবসরে হাসি-ঠাট্টার খোরাক ছিল মার্কিনিদের।
শ্বেতাঙ্গের নায়ক বিশ্বের খলনায়ক:
গত এক বছরে বহু পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতির নামে এসব পদক্ষেপ নেন তিনি। তার এসব পদক্ষেপের বেশিরভাগই ছিল শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের পক্ষে। ফলে শ্বেতাঙ্গদের চোখে নায়ক হয়ে উঠেছেন তিনি।
তবে বিশ্বের কাছে তিনি পরিচিত পেয়েছেন এক খলনায়ক হিসেবে। দায়িত্ব নেয়ার পরই অভিবাসী ও শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদেশ জারি করেন তিনি। অভিবাসীদের ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে উঁচু দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দেন তিনি।
সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সাত মুসলিম দেশের অভিবাসীদের নিষিদ্ধ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে মার্কিন প্রশাসন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণায় শ্বেতাঙ্গদের প্রতি দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে এসব পদক্ষেপ নেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সময় বর্ণবাদী বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন তিনি।
সম্প্রতি আফ্রিকা দেশগুলোকে নোংরা (শিটহোল) দেশ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার এ মন্তব্যে আফ্রিকান ইউনিয়নসহ সারাবিশ্বই নিন্দা জানিয়েছে। ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে কট্টরপন্থি শ্বেতাঙ্গ ও বর্ণবাদবিরোধীদের সংঘর্ষের পর শ্বেতাঙ্গদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেন ট্রাম্প।
ফলে ব্যাপক সমালোচনা মুখে পড়েন তিনি। দু’দিন পর ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি আবার বিবৃতি দেন। তবে বিশ্লেষকরা বলেন, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের উত্থান ঘটেছে অভিবাসী ও মুসলিমবিরোধী ট্রাম্পের ইন্ধনেই।
তাদের মতে, ট্রাম্পের বর্ণবাদী আচরণ ও নীতিতে উৎসাহিত হয়েই নব্য নাৎসি ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট!:
বৃহস্পতিবার ঝলমলে রোদ দুলছে মেরিল্যান্ডের রানওয়েতে। গোটা এয়ারপোর্ট ঘিরে নি-িদ্র নিরাপত্তা। একটু পরেই ডানা ঝাপটে নামল মার্কিন প্রেসিডেন্টের বহনকারী বিশেষ হেলিপ্যাড।
পুরো বিমানবন্দর তটস্থ। গেট খুলে গেল। এক-পা, দু-পা করে সদর্পে সিঁড়ি ভাঙছেন প্রেসিডেন্টকন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প। শীত ঠেকাতে গায়ে প্রিয় কফি রঙের লং ওভার কোট। নামলেন, হেঁটে এলেন।
না চিনলে এক দেখায় বলে ফেলা যায়, ইনি নিশ্চিত গডফাদার কিংবা কোনো দেশের প্রেসিডেন্ট। চাল-চলন-আচরণ-ব্যক্তিত্বে ষোলো আনা প্রেসিডেন্ট। ইভাঙ্কার এই নামা, হেঁটে আসার স্টাইল ভাইরাল হবেই।
ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মাধ্যমে। কেউ লিখছেন, লাইক অ্যা রিয়্যাল বস। কেউ কলছেন, শি ইজ দ্য গডফাদার। কারও মুখে ‘ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট’! তাহলে ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’র সেই ভবিষ্যদ্বাণী- প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখেন ইভাঙ্কা।
সম্প্রতি প্রকাশিত সাংবাদিক মাইকেল ওলফের বই ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি : ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবেন ইভাঙ্কা।
বলা হয়েছে, গত বছর হোয়াইট হাউসে আসার পরপরই ইভাঙ্কা ও কুশনার এ ব্যাপারে সংকল্প করেছেন, সময়-সুযোগ এলে একদিন প্রেসিডেন্ট হবেন ইভাঙ্কা। ট্রাম্প পরিবারের সদস্য হিসেবে মার্কিন রাজনীতিতে বড় একটি বছর পার করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প পরিবারের অন্যতম সদস্য ইভাঙ্কা ট্রাম্পও পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ট্রাম্পের মতো তার বিরুদ্ধেও নানা আলোচনা ও সমালোচনা থাকলেও সারা বছর লাইমলাইটেই ছিলেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাবার অভিষেকের পর দ্রুতই হোয়াইট হাউসে ওঠেন ইভাঙ্কা। তিনি ও তার স্বামী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জারেড কুশনার হয়ে ওঠেন ট্রাম্পের বিশেষ উপদেষ্টা। তখন থেকে রাষ্ট্রের নানা বিষয়ে ও ইস্যুতে মন্ত্রণা দিতে থাকেন তারা। সূত্র: যুগান্তর
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com