ব্রেকিং

x

বাংলাদেশের চাপের মুখে তিস্তা নদী খতিয়ে দেখতে পশ্চিমবঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি

সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ১০:১০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের চাপের মুখে তিস্তা নদী খতিয়ে দেখতে পশ্চিমবঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি

তিস্তানদীর পানিবন্টন নিয়ে বাংলাদেশের অব্যহত চাপে ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের একটি প্রতিনিধিদল পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। ভারতের এই উদ্যোগ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সেখানকার সরকারি মহল। তবে এ ব্যাপারে বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি  পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, পানিসম্পদ মন্ত্রকের টিম তিস্তার বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট দেবে। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে সরকার এমন কিছু কখনওই করবে না, যাতে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ লঙ্ঘিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন।
মূলত পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আপত্তির কারণে এখনও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। এই বছরের শেষদিকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। দেশবাসীকে খুশি করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তিতে সই পর্ব সম্পন্ন করতে চাইছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওয়াজেদ। গত বছর দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে এক নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় তিস্তা ছাড়া উত্তরবঙ্গের অন্য কয়েকটি নদীর জল বাংলাদেশকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রস্তাব অবশ্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হয়নি। তারপরও প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের নেতা-মন্ত্রীরা বলছেন, আমাদের তিস্তার জলের ভাগ চাই। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় মুখ্যমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন। ছিটমহল হস্তান্তরের চুক্তি সেই সময় হলেও তিস্তা নিয়ে কোনও অগ্রগতি হয়নি। তারও আগে ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশে যাওয়ার কথা থাকলেও একেবারে শেষ সময়ে মুখ্যমন্ত্রী সফর বাতিল করেন। ওই সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই করার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তৎপরতা চলেছিল।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের চাহিদা মেনে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি করা যে বেশ কঠিন, তা মানছেন সরকারি কর্তারা। আগামী বছর লোকসভা ভোট রয়েছে। তার আগে রাজ্যবাসীর ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এমন কিছুতে সায় দেওয়া তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যদিকে, ভারতের উপর বাংলাদেশর কূটনৈতিক চাপ রয়েছে তিস্তার পানির ভাগ পাওয়ার জন্য।
শুখা মরশুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তিস্তার পানির ভাগ বাটোয়ারা করা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। বর্ষা আরম্ভ হলে তিস্তায় যখন প্রচুর জল থাকে, সেই সময় জল ভাগাভাগির কোনও প্রশ্নই নেই। কারণ তখন ভারত ও বাংলাদেশ দু’দিকেই নদীর পানি উপচে পড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজ্য সেচ দপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য, তিস্তা নদীর পানি শুখা মরশুমে এতটাই কমে যায়, পানি ভাগাভাগি হলে দুই দেশের আখেরে কোনও লাভ হবে না। উত্তরবঙ্গের যে জেলাগুলি এখন তিস্তার পানি থেকে কিছুটা উপকৃত হয়, সেখানেও ক্ষতি হবে। সেচ ছাড়াও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও পানীয় জল প্রকল্পে তিস্তার পানি ব্যবহার করা হয়।
বন্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে সেচের পানি দিতে ১৯৭০ এর দশকে তিস্তা প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্প এখনও অসম্পূর্ণ। প্রকল্পটি পুরোপুরি রূপায়িত হলে প্রায় ২০ লক্ষ একর জমিতে জলসেচ করা যেত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শুখা মরশুমে মাত্র ১ লক্ষ ২০ হাজার একর জমি জলসেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এই অবস্থায় তিস্তা প্রকল্পটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে না অন্যভাবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে আরও সেচের পানি পৌঁছে দেওয়া হবে, তা খতিয়ে দেখতে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে সেচ দপ্তর।


তথ্য সুত্র: বর্তমান


আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!