অনু-গল্প
গতকাল দেখেছি এক প্রেমিককে তার প্রেমিকার জন্য ছটফট করতে! দীর্ঘ ন’বছরেরও অধিক সময় ধরে আমি এই ফেসবুক জগতে বসবাস করছি। এটা আমার শান্তির একটি অন্যতম জায়গা। ২০০৯ এর দশ অক্টোবর আজাদকে হারিয়ে দু’টি সন্তানের হাত ধরে আমার ঢাকায় আগমন, তাজা ক্ষত আর ভাংচুর হৃদয় নিয়ে! কান্নাই ছিলো প্রশান্তির একমাত্র সাথী। ঠিক এমনই দুঃসময়ে আমার ছেলেমেয়ে ফেসবুক নামক এই জগতটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়! ডেক্সটপের মাউসে হাত রাখতেই ভেতর থেকে আৎকে ওঠা আজকের এলিজার এখন নিত্যদিনের সঙ্গী ল্যাপটপ-মোবাইল। তবে, কপাল গুনে ভালো কিছু বন্ধুবান্ধব-ভাইবোন প্রবেশ করে তার ফেসবুক নামক ঘরটিকে অনেকবেশি মজবুত এবং পরিপাটি করে সাজিয়ে রেখেছে। এখানে মন্দের থেকে ভালোর সংখ্যা অনেকবেশি। তবে, প্রতারক-চিটবাটপার এবং ছদ্ম নামধারী ব্যক্তির সংখ্যাও কম নয়। এর বদৌলতে দু’চার জন প্রতারকের নাম নিঃশ্চিন্তে বলা যেতো যদি না তাদের ঘরবাড়ি কিংবা পরিবার পরিজন না থাকতো।
যাক সে-সব নষ্ট কথা। অনেক ভালোর মাঝে এই মানুষ নামক নষ্ট কিটদের কথা আপাতত বিরত থাক। মূল কথায় আসি, ভদ্রলোক আমার একজন ফেসবুক বন্ধু। তার সাথে আমার সম্পর্কটা ভাইবোন সম্বোধনে। ওনার সাথে আমার দেখাও হয়েছে। যদি বলি অত্যন্ত ভদ্র প্রকৃতির একজন মানুষ তিনি তবে তা মোটেও বাড়িয়ে বলা হবেনা। ফেসবুকের বদৌলতে বন্ধুরা আমাকে “কবি” নামে আখ্যায়িতও করেছেন। যদিও আমি তা মন থেকে মেনে নিতে রাজি নই। তবুও, এই নামের এতো শক্তি যে খুব সহজেই মানুষের কাছে যাওয়া যায়। একেবারে হৃদয়ের গভীরে যেখানে হৃৎপিণ্ডের বসবাস। নরম তুলতুলে পলিমাটির হৃদয় তাতে প্রেমের বীজ রোপন করলেই ভালোবাসার চারাগাছ মাথা ফুঁড়ে বের হয়। তাই আমি ধন্য ফেসবুক আর ফেসবুক সম্পর্ককিত সমস্ত সম্পর্ক ও তাদের ভালোবাসার কাছে।
পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই ভাইটি আমার সন্ধ্যে যখন রাতের কোলে পা রাখবে ঠিক তখন থেকে আমাকে ম্যাসেজ করতে লাগলো! প্রেমিকার দু’টো মোবাইলে বারবার ফোন দিয়ে ব্যর্থ হয়ে আমাকে টানা লিখে যেতে থাকলো। প্রথম দিকটায় আমি কিছুই আন্দাজ করতে পারিনি কিন্তু রাত বাড়ার সাথে সাথে তার অস্থিরতা বাড়তে থাকলো। একপর্যায়ে বলেই বসলো আপা, ওর কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না! আমি বুঝে গেলাম তাদের সম্পর্কটা। সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তাকে ভালোবাসেন? উত্তর এলো হ্যাঁ। জানতে পারলাম উনি আমার কাছাকাছি ব্লকে থাকেন। বললাম, তার নাম এবং ফোন নাম্বার আমাকে দিন। আপনি খোঁজ নিতে না পারলে আমিই না-হয় একটু চেষ্টা করে দেখি। ম্যাসেঞ্জারের ওপার থেকেই আমি তার ভালোবাসার তীব্রতা অনুভব করেছি। এরপরেও বেশকিছু সময় অতিবাহিত হলো। আমিও সময়ের বাড়ন্ত গতির সাথে অস্থির হয়ে গেলাম। অতঃপর, আমাকে আশ্বস্ত করে ভাইটি জানালো তার প্রেমিকা মোবাইল বাসায় রেখে বুয়ার খোঁজে বাইরে গেছে! কথাটা শুনে মনে মনেই হেসে উঠলাম আর বুকভরা শ্বাস নিয়ে বললাম, প্রেম এখনও গোলাপের সুবাসে।।
মনটা মুহূর্তেই ভালো হয়ে গেলো। পরী সবে অফিস থেকে ফিরেছে ওকে খাবার দিতে হবে। অনেক শুভকামনা ও অভিনন্দন জানিয়ে ভাইয়ের কাছ থেকে গতকালের মতো বিদায় নিলাম।
-এলিজা আজাদ, কবি ও সাহিত্যিক
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com