পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ অভিযান চালানোর অনুমতি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। হোয়াইট হাউজের প্রকাশিত নথিতে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তালেবানকে পরাজিত করা ও কাবুলের বর্তমান প্রশাসনকে মেনে নিতে বাধ্য করার অঙ্গীকার নিয়ে গত বছরের আগস্টে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতিরই বাস্তবায়ন এ পদক্ষেপ। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, ‘আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসীদের যেসব অভয়ারণ্য’ রয়েছে তাতে অভিযান চালাতে মার্কিন সামরিক কমান্ডারদের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় রসদ দেয়া হয়েছে।
এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বেশ কিছু দিন ধরেই ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের কেন্দ্রনিয়ন্ত্রিত উপজাতীয় অঞ্চলে (ফাতা) সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী অভয়ারণ্যগুলোতে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলায় হাক্কানি নেটওয়ার্ক নামক গোষ্ঠীর কয়েকজন কমান্ডার নিহত হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে এবারের মতো সরাসরি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালানোর আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেয়নি কখনো।
গত মঙ্গলবার রাতে হোয়াইট হাউজ থেকে প্রকাশিত এ বিষয়ক নথিতে আরো একধাপ এগিয়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়া কথিত সন্ত্রাসীদের ওপর হামলা চালাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এ অঞ্চলে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কমান্ডারদের। হোয়াইট হাউজের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শর্তনির্ভর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক নীততে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়া সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে মার্কিন সামরিক কমান্ডারদের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়া হয়েছে’। এতে আরো বলা, হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের মিত্রদের কাছে এটি স্পষ্ট করতে চান যে, সন্ত্রাসবাদে সমর্থন কিংবা সহযোগিতা করে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু হতে পারবে না’।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে হোয়াইট হাউজের এক নির্বাহী আদেশে পাকিস্তানের প্রতি নিরাপত্তা সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ওই আদেশে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের প্রতি নিরাপত্তাসহায়তা স্থগিত করেছেন। এটি মিত্রদের কাছে একটি বার্তা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের আমরা পাশে চাই’।
হোয়াইট হাউজ এ নথিটি এমন এক সময়ে প্রকাশ করেছে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণ দিচ্ছিলেন। নথিগুলোতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানসহ এমন কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যেগুলো ট্রাম্প তার বক্তৃতায় তুলে ধরেননি কিংবা উল্লেখ করলেও বিস্তারিত কিছু বলেননি। স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে ট্রাম্প একবার আফগাস্তিানের কথা বললেও পাকিস্তান প্রসঙ্গে কিছু বলেননি।
তবে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের অর্থ হচ্ছে তিনি চান কংগ্রেস এমন আইন পাস করুক যাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা শুধু বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে যায়। ট্রাম্প ওই ভাষণে বলেন, ‘আমি কংগ্রেসকে আহ্বান জানাই এমন একটি আইন পাস করতে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ডলারগুলো সর্বদা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেই ব্যবহৃত হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্রের হাতেই যায়, কোনো শত্রু রাষ্ট্রের হাতে নয়’।
ট্রাম্প বলেন, তিনি তার কমান্ডারদের নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান বাহিনীর ওপর হামলাকারী মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযান চালাতে। তবে তিনি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি বক্তৃতায়।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন জে সুলিভান ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ এশিয়া নীতির বিষয়ে বলেন, নতুন এ নীতি বাস্তবায়নকে ইসলামাদের সমর্থন লাভের জন্য কাজ করছে ওয়াশিংটন। কাবুলের সাংবাদিকদের একটি দলের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের লড়াই আফগাস্তিানের তালেবানসহ অন্যান্য কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সাথে’।
সুলিভান বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান, আমাদের প্রেসিডেন্টের অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানের সাথে আলোচনা করব। দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে আমাদের প্রত্যাশা কী সে বিষয়টিও তাদের কাছে স্পষ্ট করব। আমরা আফগান সরকারকে আহ্বান জানাই পাকিস্তানের সাথে দ্বিপক্ষীয় সংলাপ অব্যাহত রাখার জন্য। এসব সমস্যার সমাধানের জন্য পাকিস্তানের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আর সেটিই আমদের দক্ষিণ এশীয় নীতির মূল বিষয়।’ সুত্র: নয়াদিগন্ত
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com