আধুনিক ভোটযন্ত্রের চেয়ে পুরনো ব্যালট পদ্ধতিই কি ভাল! ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটে বেনজির ইভিএম-বিভ্রাটের জেরে ফের সামনে চলে এল সেই বিতর্ক।
উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরার ৫৯টি বিধানসভা আসনের প্রত্যেকটিরই কোনও না কোনও বুথে রবিবার বিগড়েছিল ইভিএম। তার প্রেক্ষিতে ত্রিপুরার সিপিএম নেতৃত্ব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে বিশদ অভিযোগ জানিয়ে ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছে সিপিএম। তারা পাশে পেয়েছে কংগ্রেস, আপ, জেডি (এস)-সহ নানা বিরোধী এবং অন্যান্য বামপন্থী দলকেও। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি সরাসরিই বলেছেন, ‘‘আমরা মনে করি, ভবিষ্যতে আবার অতীতের ব্যালট ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত। বেশ কিছু উন্নত দেশ ব্যালটকেই ত্রুটিমুক্ত পদ্ধতি হিসাবে ফিরিয়ে এনেছে।’’
সিপিএম অবশ্য সরাসরি ইভিএম বাতিলের দাবি তোলেনি। দলের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাটের যুক্তি, তাঁরা ইভিএমের বিপক্ষে নন। কিন্তু ইভিএম পরিচালনার ব্যবস্থায় অজস্র ত্রুটি থাকছে, নানা সংশয় তৈরি হচ্ছে। ইভিএম পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনও আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ। ত্রিপুরা সিপিএমের তরফে বুথভিত্তিক তালিকা দিয়ে জানানো হয়েছে, ওই রাজ্যের ৫৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৩,১৭৪টি বুথের মধ্যে ৫১৯টিতে ইভিএম গোলযোগের অভিযোগ এসেছে। একসঙ্গে এত ইভিএম স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কী ভাবে খারাপ হতে পারে, প্রশ্ন তুলেছে তারা।
কমিশনের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, ত্রিপুরার ভোটে ২০৩টি ইভিএম সম্পূর্ণ বদলাতে হয়েছে। এ ছাড়াও দিনভর যত অভিযোগ এসেছে, সে সব ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে ইভিএম সারিয়ে ফের ভোট নেওয়া হয়েছে। কোথাও পেপার ট্রেল ব্যবস্থায় সমস্যা ধরা পড়েছে, কোথাও ব্যালট রোলে ত্রুটি ছিল। সিপিএম-সহ বিরোধী নেতৃত্বের প্রশ্ন, কমিশনের এই প্রযুক্তিগত ব্যাখ্যা জেনে তাঁরা কী করবেন! ইভিএমের যান্ত্রিক এবং হাতে চালানো কৌশলের সব দিক খেয়াল রেখে মানুষকে সুষ্ঠু ভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়াই কমিশনের কাজ। ত্রিপুরায় কমিশন সেই কাজে একেবারেই উতরোতে পারেনি বলে বিরোধী নেতাদের অভিযোগ। ত্রিপুরার ভোটে ব্যবহার হওয়া অধিকাংশ ইভিএম আনা হয়েছিল মিজোরাম থেকে। বাকিগুলি রাজ্যেই ছিল। হাতে যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও ইভিএম এবং ভি ভি প্যাট ঠিক রাখতে তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে কেন পারল না, তার ব্যাখ্যা কমিশনের তরফে মেলেনি।
ত্রিপুরায় পরিবর্তনের লক্ষ্যে লড়াই চালানো বিজেপি অবশ্য ইভিএম-পর্ব নিয়ে বিশেষ হইচইয়ে যায়নি। দলের রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেবের বক্তব্য, ‘‘কিছু অসুবিধা তো হয়েছেই। কিন্তু টেকনিক্যাল কারণে সমস্যা হলে কী-ই বা করা যাবে?
বিপুল সংখ্যায় ভোট দিতে যাওয়া ত্রিপুরার পরম্পরা। কিন্তু এ বার ইভিএমের জ্বালা সয়েও বেশি রাত পর্যন্ত মানুষ লাইনে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮৯.৯৬%।
তথ্য সুত্র:আনন্দবাজার পত্রিকা
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com