নানা বিতর্কের পর স্থগিত হয়ে যাওয়া সহসম্পাদকদের নিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগের উপকমিটি নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এবার বিতর্কিত ও হাইব্রিড নেতাদের বাদে উপকমিটি গঠন করা হচ্ছে। ত্যাগী ও দুঃসময়ের কাণ্ডারিদের মূল্যায়ন করে উপকমিটি গঠনের জন্য দলীয় প্রধান নির্দেশ দিয়েছেন বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়া সহসম্পাদকদের নিয়ে গঠিত উপকমিটির তালিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। বঞ্চিত ত্যাগী ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা উপকমিটিতে ঠাঁই না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ শনিবার সন্ধ্যায় বঞ্চিত-ত্যাগী নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মিছিল করেন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঞ্চিত-ত্যাগী নেতাদের তোপের মুখে কমিটি স্থগিত করে দেন। তবে উপকমিটির সহসম্পাদক পদের জন্য জমাকৃত পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত নতুন করে যাচাই-বাছাই করা হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের নতুন ভবনে সাবেক ছাত্রনেতাদের আশ্বস্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সহসম্পাদকের এ উপকমিটি দেয়া হয়নি। তবু বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ বিষয়টি জেনে গেছে। বর্তমানে এই উপকমিটি স্থগিত করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের পর সহসম্পাদকদের নিয়ে উপকমিটি দেয়া হবে।
এ দিকে গতকাল রোববার সন্ধ্যায়ও ওবায়দুল কাদেরের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক পদবঞ্চিত ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ওবায়দুল কাদের তার গাড়িতে করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পৌঁছান। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করছিলেন হাসানুজ্জামান লিটন, সাগর আহেমদ শাহীন, খোন্দকার তারেক রায়হান, মাহফুজুর রহমান, মোরশেদ উল আলম, তরিকুল ইসলামসহ ছাত্রলীগের সাবেক শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। সাধারণ সম্পাদকের গাড়ি দেখেই তারা ঘিরে ধরেন। তাদের দাবি, হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের উপকমিটির সহসম্পাদক পদ কেন দেয়া হয়েছে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে উপকমিটিতে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। এ নিয়ে বিুব্ধ নেতারা নানা ধরনের স্লোগানও দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ে আগে থেকে অবস্থান করা কেন্দ্রীয় নেতারা গেটের বাইরে আসেন। এ সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতাদের এক পশলা বাগি¦তণ্ডাও হয়। পরে ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপরও বিুব্ধ নেতারা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় উপস্থিত ছাত্রনেতাদের আশ্বস্ত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, উপকমিটির সহসম্পাদকের পদতো ঘোষণাই করা হয়নি। তাহলে এখানে বাতিল করার প্রশ্ন আসছে কেন। যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে।
এর আগে গতকাল রোববার সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে স্থগিত বা বাতিলের বিষয় নেই। আসলে এখানে সহসম্পাদক বিষয় নয়, বিষয়টা হলো সাব-কমিটি। ১৯ ডিপার্টমেন্টের সাব-কমিটি হবে, আগে দুই-একটা বিভাগ ছাড়া সাব-কমিটি ছিল না। তিনি বলেন, যাদের উপকমিটিগুলো চূড়ান্ত হয়নি, সেই সম্পাদকদের কাছে অফিস সেক্রেটারির স্বারে খসড়া কমিটি পাঠানো হয়েছিল। এটা প্রস্তাবিত বিষয়, এটা করতে গিয়ে সেটা চলে গেছে ফেসবুকে এবং ফেসবুকে যাওয়াতে বিভ্রান্তি হয়েছে। তিনি বলেন, কমিটি চূড়ান্ত হলে সভাপতি তাতে সায় দিলে তারপর সেখানে তার (সাধারণ সম্পাদক) সই নেয়া হবে। সেই কমিটির আদেশ তখন সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর গঠনতন্ত্রের ২৫(১)(চ) ধারা মোতাবেক গত বছরের ২৬ মে আওয়ামী লীগের ১৭টি বিভাগীয় উপকমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিব নির্বাচিত করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিবকে সংশ্লিষ্ট কমিটির সহসম্পাদক নির্বাচন করার দায়িত্ব দেয়া হলে ওই পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত নভেম্বর পর্যন্ত জমা নেয়া হয়। এরপর যাচাই-বাছাই করে কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু সম্প্রতি দলীয় প্রধানের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা খসড়া তালিকা ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ফাঁস হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। অনেকেই দফতর থেকে পাওয়া চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রকাশ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিভিন্ন পোস্ট দেন। অবশ্য বিতর্ক ওঠার পর নির্বাচিতরা ওই পোস্ট উঠিয়ে নেন।
ওই সময় দফতর থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয় এবং জানানো হয়, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়নি, উপকমিটির সহসম্পাদকদের খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তা দলীয় প্রধানের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু ভাইরাল হয়ে যাওয়া উপকমিটিতে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীরা স্থান পাওয়ায় ুব্ধ হয়ে ওঠেন ছাত্রলীগের সাবেক ত্যাগী নেতারা।
তাদের অভিযোগ, উপকমিটির সহসম্পাদক পদে যারা স্থান পেয়েছেন তাদের অনেকেরই অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। সংশ্লিষ্ট সম্পাদকেরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে উপকমিটি গঠন করেছেন। যারা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন তারা বিভিন্ন সময় উপঢৌকন দিয়ে অল্প সময়ে সম্পাদকদের কাছে চলে গেছেন। ফলে কমিটিতে স্থান পেয়েছে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীরা। আর বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে পাশে থাকা ত্যাগী সাবেক ছাত্রনেতারা। তাদের দাবি, অতীতে যেভাবে একযোগে উপকমিটির সহসম্পাদক পদ ঘোষণা করা হতো, সেভাবেই কমিটি ঘোষণা করা হোক। উপকমিটি গঠনে সম্পাদকদের হস্তক্ষেপ খর্ব করে দলীয় প্রধানের সরাসরি হস্তক্ষেপ চান তারা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সম্মেলনের এক মাস পরই প্রচার উপকমিটি গঠন করা হয়, যা দলীয় প্রধান অনুমোদন দিয়েছিলেন। তখন কোনো সমস্যা হয়নি। সম্প্রতি কয়েকটি উপকমিটির সহসম্পাদক পদ নিয়ে সমস্যা হয়েছে। কিছু অভিযোগ এসেছে। ফলে দলের সাধারণ সম্পাদক সার্বিক বিবেচনায় তা স্থগিত করেছেন। তিনি বলেন, উপকমিটির সহসম্পাদক পদে সাধারণত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হয়। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের দিয়ে উপকমিটি গঠন করা উচিত। সূত্র: নয়াদিগন্ত
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com