ব্রেকিং

x

জামাইগ্রামের সবাই এখন ঘরজামাই!!

শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ৩:১৬ অপরাহ্ণ

জামাইগ্রামের সবাই এখন ঘরজামাই!!

বিয়ের পর মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সংসার পাতে না। ছেলেরাই শ্বশুরবাড়িতে এসে ঘর বাঁধে। আর মেয়েরা বরকে সঙ্গে নিয়ে মাঝেমধ্যে উৎসব অনুষ্ঠানে শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘুরে আসে। পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে জামাইগ্রামের এটাই প্রথা। দীর্ঘদিন ধরেই এই নিয়ম চলে আসছে এখানে। ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে ওঠা নিজের গ্রাম ছেড়ে বিয়ের পর ছেলেদেরই শ্বশুরবাড়িতে এসে অচেনা পরিবেশে মানিয়ে নিতে হয়। গ্রামটির পোশাকি পরিচয় মজরুকোদা হলেও জামাইরা শ্বশুরবাড়িতে এসে ঘর বাঁধায় এই গ্রামের নামই হয়ে উঠেছে জামাইগ্রাম। এই গ্রামের সবাই এখন ঘরজামাই তাই গ্রামের নামও হয়েগেছে জামাইগ্রাম।
গত সপ্তাহেই এই গ্রামের মেয়ে কবিতার বিয়ে হয়েছে বীরভূমের ইলামবাজার থানার হাতড়া গ্রামের অনিল হেমব্রমের সঙ্গে। বিয়ের পর কবিতা দু’দিন শ্বশুরবাড়িতে গেলেও প্রথা মেনে তিনি বরকে নিয়ে ইতিমধ্যেই গ্রামে ফিরে এসেছেন। গ্রামবাসীরা বলেন, এখানকার এটাই নিয়ম। কোনও মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে প্রথমেই গ্রামের প্রথার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। শ্বশুরবাড়িতে এসে কুনুর নদীর ধারে বিভিন্ন ধরনের শাক সব্জি চাষ করেই সংসারের জোয়াল টানেন জামাইরা।
দুর্গাপুর শহর লাগোয়া এই গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি  বল঩লেই চলে। তবে, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। গ্রামের মাঝখানে রয়েছে একটি পুকুর। তার চারপাশেই ঘর তৈরি করে বসবাস করছে জামাইরা। গ্রামবাসীরা বলেন, গ্রামে ঢোকার রাস্তাঘাট বেহাল। বিদ্যুৎ নেই। কিন্তু, একটু পরিশ্রম করলে এখানে খাবারের অভাব হয় না। কারণ কুনুর নদীর ধারে জমি খুব উর্বর। নানা ফসল হয়। সারা বছর এখানে চাষ করেই সংসার চলে যায়। ৩০ বছর আগে এই গ্রামের জামাই হয়ে এসেছিলেন কাঁকসার রাজকুসুম গ্রামের কালু মুর্মু। তিনি বলেন, আমাদের কাঁকসার গ্রামে তেমন চাষ হয় না। খুব কষ্টে দিন কাটাতে হতো। তাই বিয়ে ঠিক হওয়ার পর শ্বশুরবাড়িতে চলে আসি। চাষাবাদ করে সংসার চলে যায়। এখানে আমাদের ভোটার কার্ডও অনেকদিন আগে হয়ে গিয়েছে।
গৃহবধূ লক্ষ্মী হেমব্রম বলেন, অন্যান্য জায়গায় মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে যেতে হয়। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে নানা সমস্যা হয়। অনেকেই শাশুড়ির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু, আমাদের এখানে উল্টো। বিয়ের পর দু-একদিন শ্বশুরবাড়িতে থাকার পরেই বরকে নিয়ে চলে আসি। তাই বলে শ্বশুর, শাশুড়িকে দেখাশোনা করি না এমনটা নয়। মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়িতে যাই। তখন খুব সম্মান পাই।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা শুকদি কোরা বলেন, কুনুর নদের তীরে এই এলাকা বহু আগে ফাঁকা ছিল। হাতেগোনা চার-পাঁচটি পরিবার বসবাস করত। তারাই প্রথম মেয়েদের বিয়ে দিয়ে জামাইদের নিয়ে এসে ঘর তৈরি করে দিয়েছিল। তারপরেই আস্তে আস্তে জনপদ বাড়ে। চাষ করেই এখানে সকলের দিন চলে। তবে, এখানকার ছেলেরা শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে থাকে না। তারা স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নদের তীরেই ঘর বাঁধে।


তথ্যসুত্র: বর্তমান


আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!