ব্রেকিং

x

জন্ম রূপকথার, ”মৎস্যকন্যার” বিস্মিত চিকিৎসকমহল

রবিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ | ৫:১০ অপরাহ্ণ

জন্ম রূপকথার, ”মৎস্যকন্যার” বিস্মিত চিকিৎসকমহল

কলকাতা: কোমরের নিচে পায়ের কোনও অস্তিত্ব নেই। যা আছে তা হুবহু মাছের লেজের মতো দেখতে।  ফ্লোরিডা, পেরুর পর কলকাতা।  ফের মাতৃজঠরে জন্ম নিল মৎস্যকন্যার মতো মাছ-মানুষ। বিরলের মধ্যে বিরলতম।  এই ধরনের শিশুরা বেশিক্ষণ বাঁচে না। এই শিশুটি অবশ্য চারঘণ্টা কুড়ি মিনিট বেঁচেছে।  হাজরার চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে  সম্প্রতি জন্ম নেয় এই বিস্ময়-শিশু। তৈরি হয় এক ইতিহাস। ‘মারেমড বেবি’-র অভিধানে ঢুকে পড়ে কলকাতা।


শিশুটিকে দেখে চিকিৎসক-নার্স সবাই চমকে যান। রূপকথার মৎস্যকন্যা ওটির সবুজ চাদরে হাত-পা ছুড়ছে। দু’টি পা জেড়া লেগে। পায়ের পাতাদু’টি মাছের পাখনার মতো ডানা মেলেছে। অনেকেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না। চিকিৎসকরা শিশুটিকে এসএনসিইউতে পাঠান। আপ্রাণ চেষ্টা করেন বাঁচানোর। সেখানেই দুপুর আড়াইটে নাগাদ মৃত্যু হয় ‘মারমেড বেবি’-র।
মা মুসকুরা বিবি। বাবা বেলাল হোসেন। মেটিয়াবুরুজের রাজাবাগান থানা এলাকার কারবালার বাসিন্দা মুসকুরা মঙ্গলবার চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে ভর্তি হন। বেলাল জানিয়েছেন, স্ত্রীর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। ইউএসজিতেও কিছু ধরা পড়েনি। তবু কেন এমন হল বুঝতে পারছি না। সেদিনই  মুসকুরার সন্তানকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। সেবাসদনের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. সুদীপ সাহা জানিয়েছেন, শিশুটি সিরনোমেলিয়া বা মারমেড সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিল। এক লাখ শিশু জন্মালে একজনের এমন রোগ হয়। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত পাঁচজন শিশু এমন শরীরী গঠন নিয়ে জন্মেছে।


 অ্যাম্বিলিক্যাল কর্ড দু’টির বদলে একটি ধমনি তৈরি করলে মায়ের শরীর থেকে ভ্রূণ যথেষ্ট রক্ত ও পুষ্টি পায় না। ফলে দু’টো পায়ের বদলে শরীরের নিম্নাঙ্গ মাছের আকার নেয়। অনেকগুলি কারণের মধ্যে এটা একটা। এমনটাই জানালেন রাজ্যে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য। এই ধরনের শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কিডনি ও মূত্রথলির সমস্যায় ভুগতে থাকে। মুসকুরার সন্তানের ক্ষেত্রেও এমন নানা সমস্যা ছিল। সুস্পষ্ট রেচনাঙ্গ বা জননাঙ্গও ছিল না। ফলে অনেক চেষ্টাতেও মারমেড বেবি-কে সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি বাঁচানো যায়নি।  হলে হয়তো ফ্লোরিডার মতো কলকাতাও মৎস্যকন্যার রূপকথা লিখত।

আসলে যতটা না বাস্তব তার থেকে অনেক বেশি রূপকথা। গভীর সমুদ্রে ভেসে চলেছে জাহাজ। হঠাৎই নাবিকের কানে এল পাগল করা সুর। সুরের উৎস যখন সামনে এল তখন নাবিক বন্দি হয়েছে মৎস্যকন্যার মায়াজালে।  স্কটল্যান্ড থেকে নেদারল্যান্ডস, ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ইন্দোনেশিয়া। দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে মৎস্যকন্যা, জলপরি নিয়ে হাজারো মিথ।  টম হ্যাঙ্কির স্ল্যাশ থেকে টিম কারির ‘দি লিটল মারমেড’। গল্প—উপন্যাসের পাতা পেরিয়ে সিনেমার রুপোলি পর্দায় বারবার ফিরে এসেছে সেই মৎস্যকন্যা। মাইথোলজি, ইন্দ্রজাল, অ্যাডভেঞ্চার, রহস্যের বিরলতম উদাহরণ ‘মারমেড’।  কেমন সেই কন্যা, কে দেখেছে তাকে তা নিয়ে পৃথিবীজোড়া কল্পনা আর গল্পের ঢেউ। কিন্তু বাস্তবে এই পৃথিবী সাক্ষী রয়েছে হাতে গোনা কয়েকবারই। যদিও যেটা গল্প নয়, বরং রূঢ় বাস্তব।

আসলে নীল জলে শরীরী উদ্ভাস তোলা মৎস্যকন্যার গল্পের থেকে অনেক দূর কলকাতার চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে জন্ম নেওয়া মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টার জন্য পৃথিবীতে থাকা শিশুটি। চিকিৎসার পরিভাষায় তার নাম ‘মারমেড বেবি’।  চিকিৎসকদের কাছেও বিস্ময়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছেও এই ঘটনা ‘ডায়মন্ড রিং’-এর থেকেও বিরলতম। কিন্তু, কীভাবে বিরলের মধ্যে বিরলতম হয়ে ওঠে এমন শিশু? কেনই বা পৃথিবীর আলো বেশিক্ষণ থাকে না তার উপর? কোন জটিল জিন আবর্তে এমন অদ্ভুত শিশুর দেখা মেলে?

প্রশ্ন অনেক। উত্তর বেশিরভাগটাই অজানা। যদিও এ শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকদের দাবি, মাতৃজঠরে বেড়ে ওঠার সময় ভ্রূণের একটি অংশে বিকৃতির জেরেই ঘটে যায় এমন কাণ্ড। সিরনোমেলিয়া বা মারমেড সিনড্রোম একটি বিরল জন্মগত রোগ। এক লাখ শিশু জন্মালে একজনের এমন রোগ হয়। সাধারণত, ১-২ দিনের বেশি বাঁচে না। ব্যতিক্রম অবশ্য রয়েছে। ফ্লোরিডার টিফানি ইয়র্কস থেকে পেরুর মিলাগ্রাস ক্যারেন। টিফানির ২৭ বছর, মিলাগ্রাসের ১১ বছর বয়স। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত পাঁচজন শিশু এমন শরীরি গঠন নিয়ে জন্মেছে। ভারতে এমন শিশুর দেখা মিলেছে একবারই। উত্তরপ্রদেশের শাহী রাম হাসপাতালে ২০১৬ সালে। সেই শিশুটি মাত্র ১০ মিনিট বেঁচেছিল। চিত্তরঞ্জন সেবাসদনের শিশুটি এসএনসিইউ-তে প্রায় ৩ ঘণ্টা বেঁচেছিল। যদিও লিঙ্গ নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে মারমেড বেবি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কেন হয় তার ব্যাখ্যা অবশ্য মিলল। চিকিৎসকরা জানালেন, অ্যাম্বিলক্যাল কর্ড যখন দু’টি ধমনি তৈরি করতে ব্যর্থ হয় তখনই এই জটিলতা তৈরি হয় ভ্রূণের মধ্যে। আসলে একটা ধমনি হওয়ায় মায়ের শরীর থেকে ভ্রূণের মধ্যে যথেষ্ট রক্ত সংবাহিত হয় না। একমুখী রক্তপ্রবাহের জন্য ভ্রূণ যথেষ্ট পুষ্টি পায় না। তার জেরেই মাছের লেজের মতো হয় যায় শরীরের নিম্নভাগ। এই শিশুরা জন্মের পর থেকেই কিডনি ও মূত্রথলির সমস্যায় ভুগতে থাকে। বেশিরভাগ সুস্পষ্ট কোনও রেচনাঙ্গ বা জননাঙ্গ থাকে না। ফলে, শিশুর লিঙ্গ নির্ধারনেও সমস্যা হয়। সেবাসদনের শিশুটিরও লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়নি। গবেষণা বলছে, গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে অত্যধিক ওষুধ প্রবেশ করলে, ভিটামিনের অভাব হলে কিংবা মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে এই সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই ব্যাখ্যা চূড়ান্ত নয়।সূত্র- নতুন বার্তা

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!