বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দল চলবে কীভাবে—এ নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আজ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের জেল হয়েছে। কিছুদিনের জন্য হলেও তাকে জেলে গিয়ে জামিন নিতে হবে। এ অবস্থায় দল কার নেতৃত্বে কীভাবে চলবে—সেই বিষয় নিয়েই বিএনপির ভিতরে-বাইরে চলছে নানা আলোচনা। বিএনপি প্রধানের অনুপস্থিতিতে দলে ফাটল ধরার শঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না দলের নীতিনির্ধারকরা। সাম্প্রতিক সময়ে বেগম জিয়া নিজেই একাধিকবার বৈঠকে দলের মধ্যে ঐক্যের গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে এও বলেন, ‘বেইমানদের আর দলে ঠাঁই নয়।’
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারপারসনের সাময়িক অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানই ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দলের নেতৃত্বের প্রশ্নে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গঠনতন্ত্রের ৭ ধারার (গ) (২) উপধারা সামনে আনেন। সেখানে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে তিনিই (সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান) ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হিসেবে চেয়ারম্যানের সমুদয় দায়িত্ব পালন করবেন।” কিন্তু বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১০ বছর জেল হয়েছে তবে তিনি দেশের বাইরে আছেন দীর্ঘদিন। তারপরও দল পরিচালনায় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানেরই দিকনির্দেশনা থাকবে। তা ছাড়া কারান্তরীণ থাকলে বিএনপি চেয়ারপারসনও সেখান থেকে দিকনির্দেশনা দেবেন। দুই শীর্ষ নেতার দিকনির্দেশনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি দল পরিচালনা করবে। এ ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও দল পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নানা বিষয়ে পরামর্শ দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। শীর্ষ দুই নেতার দিকনির্দেশনা ও স্থায়ী কমিটির পরামর্শে তৃণমূলে দলের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগেও খালেদা জিয়ার লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে সফরে বিএনপি মহাসচিব সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নিয়ে দল পরিচালনা করেন। জানা যায়, তবে জেল হলেও মানসিকভাবে শক্ত অবস্থানে বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি তার ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন, জেলকে তিনি ভয় পান না। এক্ষেত্রে বিশ্বনেতাদের উদাহরণও বিএনপি প্রধান তুলে ধরেছেন। তবে তিনি বলেছেন, কোনোভাবেই যেন দলের ঐক্যে কেউ ফাটল ধরাতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। আর কোনোভাবেই হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তবে তার ঘনিষ্ঠজনেরা দুশ্চিন্তা করছেন, বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে। কারাগারের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলাও কঠিন হবে বলে মনে করেন তারা। সেক্ষেত্রে শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। তবে গতকালও সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, ‘রাজনীতি থেকে আমাকে দূরে রাখার জন্য আদালতকে ব্যবহারের প্রচেষ্টা চলছে।
জানা যায়, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশই চেয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারই পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান দলের হাল ধরুক। কিন্তু দলের একটি অংশ এও শঙ্কা প্রকাশ করছেন, প্রতিহিংসার রাজনীতির মুখোমুখি হয়ে ক্লিন ইমেজ থাকা ডা. জোবায়দা রহমানও মামলা-হামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হতে পারেন। এক্ষেত্রে লন্ডনে চিকিত্সাধীন তারেক রহমানকে দেখাশোনা করাও তার কঠিন হয়ে পড়বে। সামগ্রিক বিবেচনায় জোবায়দা রহমানের এখন দেশে না ফেরাই ভালো বলে মনে করেন তারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, ‘বেগম জিয়া জেলে থাকলেও কার্যত তার নির্দেশনায় দল চলবে। সুতরাং দল পরিচালনায় কোনো সমস্যা হবে না। তা ছাড়া লন্ডনে আমাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনাও থাকবে। স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলের চেইন অব কমান্ড অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সবাই দল পরিচালনায় সহযোগিতা করবে। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’ সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com