নির্বাচনকে সামনে রেখে গরম হয়ে উঠেছে ঢাকার রাজনীতি। ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন কৌশল রচনা করছেন, ভোটে যোগ দিয়ে ক্ষমতা দখলে মরিয়া বিএনপি ও জামাতে ইসলামি জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এবার ক্ষমতায় আসতে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন বেগম খালেদা জিয়া। আজ কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে ‘সঙ্গকে ধরে দিল্লির কাছে পৌছতে চাইছে খালেদা’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানাগেছে।
কূটনৈতিক সূত্র উল্লেখ্য করে প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন খালেদা। এ জন্য আরএসএস তথা সংঘ পরিবারের মাধ্যমে মোদী সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছনোর চেষ্টা করছে বিএনপি-জামাত জোট। সেই বার্তাটি হল, শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের প্রতি কূটনৈতিক পক্ষপাত বহাল না-রেখে তাঁদের সঙ্গেও একটা বোঝাপড়ার দিকে এগোক সাউথ ব্লক। নয়াদিল্লিকে এটা বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, বিএনপি তাদের কর্মসূচিতে সর্বদা বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে নানা ধরনের ছাড়া দেবে তারা। পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অধিকারের বিষয়টি নিয়েও এ বারে যে তারা তৎপর হতে চায়, সে কথাও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সূত্রের খবর উল্লেখ্য করে প্রতিবেতনটিতে আরো বলা হয়েছে, এ বিষয়ে নাগপুরে আরএসএস-এর একটি অংশের সঙ্গে বিএনপি-র কয়েক জন প্রতিনিধি সম্প্রতি দেখা করে এসেছেন। তা ছাড়া গত বছরের শেষে খালেদা জিয়া যখন লন্ডনে যান, সেখানেও সঙ্ঘের প্রবাসী কিছু নেতার সঙ্গে কথা হয় তাঁর।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বা বাংলাদেশ হাইকমিশন— প্রকাশ্যে অবশ্য কোনও পক্ষই এই ধরনের বৈঠকের কথা স্বীকার করছে না। বিএনপি-ও সঙ্গত কারণেই এ নিয়ে চুপ। কিন্তু আরএসএস সূত্র জানাচ্ছে, দিল্লির সঙ্গে তারা একটা বোঝাপড়ায় আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃত্ব। খালেদা জিয়ার দল মোদী সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, হাসিনা সরকারের সময়ই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সব চেয়ে বেশি অত্যাচার হয়েছে এবং এখনও হয়ে চলেছে। মন্ত্রিসভায় অথবা জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব নামমাত্র। বিএনপি ঘরোয়া ভাবে এ কথাও আরএসএস-কে জানিয়েছে যে তারা অন্তত ৫০ জন সংখ্যালঘু প্রার্থীকে আগামী ভোটে প্রার্থী করতে ইচ্ছুক। ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভায় হিন্দু প্রতিনিধিত্বও এখনকার থেকে বেশ খানিকটা বেশি থাকবে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য জানাচ্ছে, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভারত নাক গলায় না। কোনও রাষ্ট্রে যখন যে দলের সরকার থাকে, নয়াদিল্লি তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশে এর আগে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, ভারত তাদের সঙ্গেও সম্পর্ক বহাল রেখে চলেছে। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, খালেদার এই অতিসক্রিয়তাকে ভাল চোখে দেখছে না দিল্লি। বিএনপির উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দিহান বিদেশ মন্ত্রক। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, নভেম্বরে ‘দাঁতের চিকিৎসা’ করাতে লন্ডনে গিয়ে খালেদা পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন। লন্ডনের পাকিস্তান হাই কমিশনের কর্তাদের সঙ্গেও অনেক বার বৈঠকে বসেছিলেন খালেদা, বাংলাদেশে যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। তবে বিএনপি নেতৃত্ব এই সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন ও বানানো’ বলে উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু খালেদা যে পাকিস্তানের একটি কট্টরপন্থী অংশের হাতে তামাক খেতে অভ্যস্ত, তাদের মাধ্যমে অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের চক্রান্তে লিপ্ত বলেই নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন— এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে আওয়ামি লিগ। তাই সব মিলিয়ে কিছুটা সতর্ক ভাবেই বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে মোদী সরকার।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com