ব্রেকিং

x

কার্টন থেকে হাসপাতালের বিছানায় মারিয়া

শনিবার, ১০ মার্চ ২০১৮ | ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

কার্টন থেকে হাসপাতালের বিছানায় মারিয়া

মারিয়া নামের বেশ কয়েকটি অর্থের একটি হলো ‘ভাগ্যবান’। কিন্তু বাবা-মাহীন শিশু মারিয়ার ক্ষেত্রে ওই অর্থ কতটা প্রযোজ্য সে প্রশ্ন রয়েই যায়। আরেক অর্থে মারিয়াতো ভাগ্যবানই বটে। কার্টন থেকে তার ঠাঁয় হয়েছে হাসপাতালের বিছানায়। মানবিক বোধ থেকে মারিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন একজন আইনজীবী। মারিয়াকে তুলে দেয়ার জন্য খোঁজা হচ্ছে ‘নকল বাবা-মা’।
তবে এসবে যেন কোনোই ভ্রƒক্ষেপ নেই মারিয়ার! আর দশটা শিশুর মতোই খেলা করছে সে। খাওয়া-দাওয়াও করছে বেশ স্বাভাবিকভাবেই। তবে চোখ কি খোঁজছে সেটা মারিয়ার চেয়ে আর কে ভালো বলতে পারবে। হয়তোবা মাকেই খোঁজে তার চোখ। কান্নাকাটি করলে মায়ের মতোই পরশ বোলায় তার নানী।
মারিয়ার বয়স প্রায় ১১ মাস। গত ৬ মার্চ তাকে একটি কার্টনে খোঁজে পান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. লোকমান হোসেন। দ্রæতই তাকে নিয়ে যান হাসপাতালে। গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালেই ছিল মারিয়া।
লোকমান হোসেন জানান, মানবিক কারণে ওই শিশুটির দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। উদ্ধারের সময় শিশুটি অসুস্থ ছিল বিধায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন ওষুধপত্র দেয়াসহ খাবার দাবারের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। স্বজনদের মধ্যে বিশ্বস্ত ও স্বচ্ছল কোনো নি:সন্তান দম্পতি পাওয়া গেলে নানীর সম্মতিতে শিশুটিকে তুলে দিতে চান তিনি।
মারিয়ার নানী নীলা বেগম জানান, গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালেই আছেন শিশুটিকে নিয়ে। আইনজীবী লোকমান হোসেন ও তার পরিবারের লোকজন সব ধরণের সহযোগিতা করছেন। তবে শিশুটির ভবিষ্যত সম্পর্কে এখনো তিনি নিশ্চিত নন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারিয়ার বাবা মাদকসক্ত। বেশ কয়েকমাস ধরেই পরিবারের খোঁজ নিতেন না। মা নাজমা এ অবস্থায় মারিয়াকে নিয়ে নীলা বেগমের সঙ্গে পৌর এলাকার পুরাতন জেলখানার পাশের একটি বাড়িতে থাকতেন। মাসতিনেক আগে কোলের শিশুকে ফেলে নাজমা চলে যান। এরপর থেকে নানীর সঙ্গে আছে মারিয়া। কাগজ টুকিয়ে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা নানী একটি কার্টনে মারিয়াকে রেখে বেরিয়ে পড়েন এদিক-ওদিক। মাঝে মাঝে মারিয়াকে এসে দেখে যান।


Brahmanbaria pic 09-03 (1)
আইনজীবী লোকমান হোসেন বলেন, ‘গত ৬ মার্চ পৌর আধুনিক সুপার মার্কেটের সামনে একটি কার্টনে ওই শিশুটিকে দেখতে পাই। এ সময় শিশুটির সঙ্গে কেউ ছিল না। পরে জানতে পারি শিশুটির নানী এখানে রেখে কাজে চলে যায়। নানীর সঙ্গে কথা বলে ঠান্ডাসহ বিভিন্ন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া শিশুটিকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করাই। শিশুটির সব ধরণের দায়িত্ব আমি নিয়েছি। কোনো ভালো দম্পত্তির হাতে তুলে দেয়া পর্যন্ত সব ধরণের দায়িত্ব পালন করবো।’
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে শিশু মারিয়াকে খোঁজে বের করতে খুব একটা অসুবিধা হয় নি। শিশু মারিয়া কোনদিকে বলতেই দেখিয়ে দেন ওয়ার্ডে থাকা একাধিক ব্যক্তি। কাছে গিয়ে দেখা যায়, মারিয়াকে ঘিরে বেশ কয়েকজন বসে আছে। তবে তারা কেউ মারিয়ার স্বজন নয়। জানা গেল, মারিয়ার নানী ওষুধ আনতে গেছেন। একটু পরেই মারিয়ার নানী ওষুধ নিয়ে ফেরেন।
নানী নীলা আক্তার বলেন, ‘আমার আফন বলতে কেউ নাই। মাইয়াডা কই আছে আমি জানিনা। তিন মাস ধইরা মারিয়ারে আমিঅই পালতাছি। সেদিন একজনে (লোকমান হোসেন) মারিয়ারে আইন্না হাসপাতাল ভর্তি করাইছে। ভবিষ্যতে মারিয়ার কি অইব জানি না।’


আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!