বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে তা থেকে বেচে থাকার প্রযোগীতা চলছে। আমাদের সরকারও আপ্রাণ চেষ্টা করছে দেশের মানুষদের ‘করোনার ছোবল থেকে রক্ষা করার জন্য কিন্তু বাধ সাধছে কিছু অসেচতন জনগোষ্ঠী।
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানলাম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর স্বামীকে তিনতলার প্ল্যাটে তালা জুলিয়ে স্ত্রী দ্বিতীয় তলার প্ল্যাটে চলে গেছেন। পরে খাবার ও চিকিৎসার অভাবে রাতে স্বামীর মৃত্যু হয়। আমার ধারণা এই মৃত্যুটি করোনা ভাইরাসে হয়নি, মৃত্যু হয়েছে তার আতঙ্কে। লেখাটি পড়ার পর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: আখাউড়ায় নতুন করে আরো ৪ জন করোনায় আক্রান্ত
সম্প্রতি আমার এক ভাতিজা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। যারা গুজব ছড়িয়েছে তারা মিথ্যা গুজব ছড়িয়েও শান্ত হয়নি, ভাতিজাকে নাকী পুলিশও ধরে নিয়েছে এমন গুজবও ছড়িয়েছে। অথচ আমার ভাতিজা সেতু করোনায় আক্রান্ত হয়নি। এমন অনেক ঘটনা ঘটছে আমাদের দেশে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। জনগণকে আতঙ্কিত করার জন্য এই ধরণের চেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত ও আক্রান্ত পরিবারকে নিয়ে কটুক্তির খবরও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। এসব এহেন কার্যক্রম খুবই নিন্দনীয়।
এই অবস্থায় সঠিক তথ্য দিয়ে মানবতার কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের। সচেতন করতে হবে মানুষকে। বাচাতে হবে নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সর্বস্তরের মানুষকে। আসুন আমরা লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে মানুষের পাশে থাকি। এই দুযোর্গ ও বিপদকালীন সময়ে সবাই মিলে আমাদের আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীসহ দেশের মানুষদের রক্ষার্থে হাতে হাত, কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করি। যে যেখানে আছি সবাই আমরা নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিক ও সুন্দর ভাবে পালন করার চেষ্টা করি। একদিন এই করোনার অবসান ঘটবেই। সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, নাকেমুখে মাস্ক পড়ুন এবং সরকারের দেয়া সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ২৯ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে আমাদের করনী কি? নিচে দেয়া আছে। পড়ে জেনে নিন।
*করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে আমাদের করণীয়*
১) মানুষিকভাবে সুস্থ্য রাখতে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করতে হবে।
২) ভিটামিন সি,এ,ডি যুক্ত খাবার সরবরাহ করতে হবে।
৩) তার পক্ষ থেকে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে ঔষধ সরবরাহ করতে হবে।
৪) যতটা সম্ভব তাকে ঘরে রেখ যত্নসহকারে চিকিৎসা করে ভাল করতে হবে। তাতে কাজ না হলে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে।
—-রোগীর সেবা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে———
রোগীর দেখভাল করা, সেবা ও শান্তনা দেওয়া ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে ইবাদত এবং মহানবী (সা.)-এর একটি মর্যাদাপূর্ণ সুন্নত। কোনো কোনো ইসলামী আইনজ্ঞ একে ওয়াজিবও বলেছেন। রোগীর সেবা প্রদানের মাধ্যমে সেবাকারীর ঈমান ও সমাজের সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। সামগ্রিক প্রচেষ্টা ও সচেতনতার মাধ্যমে বড় ধরনের বিপর্যয় রোধ করা যায়।
আরও পড়ুন: আখাউড়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে ১৩ ব্যবসায়ির জরিমানা
সেবা রোগীর অধিকার সেবা পাওয়া অসুস্থ ব্যক্তির অধিকার। সামর্থ্য ও সুযোগ থাকার পরও রোগীর প্রতি যদি অবহেলা করা হয়, তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ছয়টি অধিকার…‘যখন যে অসুস্থ হবে তার সেবা করো। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৬২)
জান্নাতে ফলের বাগান: আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমান যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকালে দেখতে যায় তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তবে ৭০ হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৯)
—-আমরা সর্তক থাকব নিয়ম মানব তারপরও মৃত্যু থেকে বাঁচার উপায় নেই। সুতরাং সবার উচিত মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা। তাই বেশী বেশী নামাজ পড়া, রোজা রাখা, হারাম হালাল মেনে চলা ও ভাল ভাল কাজ করা।
——পরিশেষে বলব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষকে কুদৃষ্টিতে না দেখে সুদৃষ্টিতে দেখবেন। রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করবেন। আমার গ্রাম কোড্ডাবাসী বা আত্মীয়-স্বজন কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন। আমি পাশে থাকবো, পাশাপাশি আমার বন্ধুবান্ধবও পাশে থাকবে। কর্মস্থলে থাকলে ছুটি নিয়ে হলেও গ্রামে চলে আসব।
লেখক
মো: নজরুল ইসলাম ভুইয়া
সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট (পরিচালক) ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com