অ্যাডভোকেট উম্মে শবনম মোস্তারী মৌসুমী। একজন সফল আইনজীবী, সফল গৃহবধু, সন্তানের মা। পেশাগত ও সাংসারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে নারী উন্নয়নেও ভুমি রাখছেন। সকল নারীদের অনুকরণীয় অনুপ্রেরণা এই আইনজীবী মৌসুমী।
এই মিষ্টভাষী নারীর মতে ‘কোনো বাঁধাই আপনাকে আটকাতে পারবে না যদি আপনার স্বপ্ন থাকে আর স্বপ্ন পূরণের প্রবল ইচ্ছা থাকে’। পেশাগত জীবন, পারিবারিক জীবন সব সামলে নিয়েই তিনি অসহায় মানুষের জন্য কাজ করেন, নারীদের জন্য কাজ করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত অ্যাডভোকেট উম্মে শবনম মোস্তারী মৌসুমী আখাউড়া উপজেলায় নারীদের সংগঠন আখাউড়া লেডিস ক্লাব, জাগরনী সংঘ ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সাথে অন্য সব নারীদের মত গৃহবধু ও সন্তানের দায়িত্ব পালন করছেন। এরপরও তিনি থেমে থাকছেন না, গরিব অসহায় হতদরিদ্র মানুষের সহায়তায় এগিয়ে যাচ্ছেন।
নিজের আইনপেশা সম্পর্কে তিনি বলেন, আইনজীবীদের একটা দায়িত্ব আছে আর তা হলো নিজের দক্ষতা এবং বিচক্ষণতা দিয়ে আইনী ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্লায়েন্টকে গাইড দিতে হয়। একজন আইনজীবী কে বিভিন্ন গুণাবলীর অধিকারী হতে হয়। তবে একজন সফল আইনজীবী হওয়া অনেক সময় এবং পরিশ্রমের ব্যাপার। একজন আইনজীবীর সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে কিভাবে অন্য একজন তার সফলতা পরিমাপ করছে সেটার উপর। তিনি দীর্ঘ ১১ বছর যাবত আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে নোটারী পাবলিক হিসাবে সমগ্র বাংলাদেশে কাজ করার জন্য সার্টিফিকেট পান।
আখাউড়ার নারী সমাজে ‘মৌসুমী আপা’ এই নামেই তিনি পরিচিত। পরিচিত ছোট-বড় সকলের কাছেই তিনি মৌসুমী আপা, এই নামেই পরিচিতি, এই নামেই সমাদৃত। তার কাছে ধনী গরীব, হিন্দু-মুসলিম বা বৌদ্ধ-খৃষ্টানের কোন ভেদাভেদ নেই। সমভাবেই সব শ্রেণীর মানুষকে ভালবাসেন এই নারী আইনজীবী।
লেডিস ক্লাব, জাগরনী সংঘ ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে তিনি নারী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নারী বিষয়ে এজেন্ডাগুলো সামনে রেখে নারী উন্নয়নে কাজ করছেন। নারীদের মধ্যে প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব সৃষ্টি করতে তার সংগঠনগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন নারীদের ইওগাসহ বিশেষ দিনগুলোতে খেলাধুলার আয়োজন করে একই জায়গায় হাজারো নারীকে উপস্থিত করে এলাকায় সুনাম অর্জন করছেন।
যেসব নারীদের বাড়ির বাইরের পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা ছিলনা, সেই সব নারীরা আইনজীবী মৌসুমীর হাত ধরে নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। ব্যক্তিগত অর্থায়নে নারীদের বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদানসহ নারীদের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তুলছেন তিনি। এই সব কাজে এলাকার নারী সমাজে বেশ জনপ্রিয় উঠেছেন আইনজীবী মৌসুমী। কয়েক বছরের ব্যবধানে সবার আস্থা ভাজন হয়ে উঠেছেন।
সেবামূলক কাজেও বেশ জনপ্রিয় তিনি। এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষের বিপদ আপদে ছুটে যান, নিজের উপার্জনের অর্থ দিয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। বিনা পয়সায় নারী ও অসহায় মানুষদের আইনগত সহায়তা দিচ্ছেন।
বিয়ের পর সংসার, পেশাগত জীবন আর মানবসেবা একসাথে চালিয়ে নেয়া সম্ভব না এমন ভাবনা যারা ভাবেন তাদেরকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন আইনজীবী উম্মে শবনম মোস্তারী মৌসুমী। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন সফলতার পথে ইচ্ছাশক্তির অভাব ছাড়া আর কোনোকিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। ইচ্ছা থাকলে আর পথচলার অদম্য আকাঙ্খা থাকলে সবকিছু সুন্দরভাবে ও সফলভাবে চালিয়ে নেয়া সম্ভব।
আইনজীবী মৌসুমী জানান, পড়াশোনা সম্পন্ন হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায় তার এবং অনার্সে থাকাকালীনই তার বড় সন্তান আইমানের জন্ম হয়। সন্তানের লালন-পালন, পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া এতো সহজ কথা নয়। তবে এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ আর স্বপ্ন ছোঁয়ার দারুণ ইচ্ছার কাছে হার মানে সকল প্রতিকূলতা।
তিনি আরো জানান, ছোট বেলা থেকেই তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তার বাবা মো. গোলাম মোস্তফা তালুকদার ও মা রোকেয়া বেগম দুইজন সরকারী চাকুরী করলেও সবসময় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘ ২৭ বছর যাবত তার মা রেলওয়ে আওয়ামী কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের (চট্টগ্রাম) মহিলা সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাই শৈশব থেকেই আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বেড়ে উঠেছেন তিনি। পরে ছাত্রজীবনে নিজেও ছাত্রলীগের রাজনীতি জড়িয়ে পড়েন। ২০০১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত থাকার সময় জামায়াত শিবিরের হাতে অনেক বার নাজেহাল হয়েছেন। পেশাগত জীবনেও তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। আওয়ামীলীগ সমর্থিত আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাদা প্যানেলের পক্ষে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগ সমর্থিত আইনজীবী পরিষদের সদস্য।
এক প্রশ্নে জবাবে আইনজীবী মৌসুমী আরো বলেন, ‘নারীর জীবনে পথচলা কখনোই সহজ নয়, তবে সবদিকে ভারসাম্য বজায় রেখে চললে পথ চলা সহজ হয়ে যায়। পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করে সময়ের সঠিক ব্যবহারের উপর।
তিনি আরো বলেন, এতো কিছুর পরও আমি একজন গৃহবধুর দায়িত্ব পালন করছি। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য আর সন্তানের প্রতি মায়ের করনীয়সহ সংসার জীবনেও শতভাগ দায়িত্ব পালন করি।
অ্যাডভোকেট ঊম্মে শবনম মোস্তারী মৌসুমী আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুজ্জামানের স্ত্রী। তিনি ১৯৮৪ সালে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৮৮ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে (ইংলিশ মিডিয়ামে) শিক্ষা জীবন শুরু করেন। ১৯৯৯ চট্টগ্রাম সেন্ট স্কলাস্টিকা র্গালস হাই স্কুল থেকে ইংলিশ ভার্সনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। ২০০১ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে এল এল এম ডিগ্রী অর্জন করেন।
আইনজীবী মৌসুমী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়নে আমি নিজ উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছি। নারীদেরকে নিয়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বাষির্কী ও সরকারের সকল জাতীয় দিবসগুলো পালন করছি।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com