ব্রেকিং

x

একজন ফারহানা কাউনাইন ও মুক্তিযুদ্ধ লালনের সাতকাহন

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ

একজন ফারহানা কাউনাইন ও মুক্তিযুদ্ধ লালনের সাতকাহন

বিশ্বজিৎ পাল বাবু:


‘জয় বাংলা চত্বর’, ‘মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার’, ‘৭১: শেকড়ের মূর্ছনা’, ‘জাগ্রত জাতিসত্তা’, ‘চিরঞ্জিব মুজিব’। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিছু ‘সৃষ্টি’, কিছু‘চেতনার’ নাম। মুক্তিযুদ্ধকে ফুটিয়ে তোলার অনন্য চেষ্টা। যেন পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধ। চোখ ফেরালেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন। বলা চলে, জেলার সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাগান কিংবা আঙ্গিনা যেন মুক্তিযুদ্ধের একখন্ড বাংলাদেশ। এতে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। শিক্ষনীয় বিষয় হয়ে উঠছে এলাকাটিতে ঘুরতে আসা মানুষের কাছে।


মুক্তিযুদ্ধের এ সাতকাহন নরসিংদীতে। এর নেপথ্যে সেখানকার জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। ২০১৮ সালের ১১ মার্চ নরসিংদী জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর তিনি নানা উদ্যোগের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকে ফুটিয়ে তুলেছেন বেশ দারুণভাবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মায়েদেরকে দিয়েছেন সংবর্ধনা। এ জন্য তিনি জেলাসহ সারাদেশেই বেশ প্রসংশিতও হয়েছেন।

ফারহানা কাউনাইনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, গণপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট প্রয়াত সৈয়দ সিরাজুল ইসলামের মেয়ে তিনি। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ২০০১ সালের ২৮ মে সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে যোগদান করেন।

ভাবা যায়, জেলার ১১৬৮ টি বিদ্যালয়ের রয়েছে একই রকমের ‘মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার’!বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট একটি কক্ষের ওইসব কর্ণারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকে।মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা স্মৃতি ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরণের নানা উদ্যোগের কারণে তিনি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পুরস্কার পেয়েছেন।

পৌর এলাকার এন কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বহুতল একটি ভবনের প্রথম কক্ষেই মুক্তিযুদ্ধের কর্ণার। নরসিংদীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জেলার মানচিত্র, যুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন দুর্লভ ছবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি দিয়ে বেশ আধুনিকভাবে কর্ণারটি সাজানো। আছে মুক্তিযুদ্ধের কিছু বই রাখার একটি তাক। একই চিত্র দেখা একই চিত্র দেখা গেল ৪নং রাজাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।গ্রামের একটি স্কুলে মুক্তিযুদ্ধের এ ধরণের একটি দেখে যে কেউ অভিভুত হবে।কর্ণারের দিকে এক নজর বুলালেই ধারণা করা যাবে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে।
এন কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফেরদৌসি পাঠান সুরভী বলেন, ‘এ ধরণের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এর প্রশংসার সম্পূর্ণ দাবিদার জেলা প্রশাসক মহোদয়।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এ ধরণের কর্ণার তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরো সমৃদ্ধ করবে।’ রাজাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিপি রানী সরকারের সঙ্গে কথা হলে তিনিও জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ‘জয় বাংলা চত্বর’ আর ‘জাগ্রত জাতিসত্তা’ এর দিক থেকে যেন চোখ ফেরানো দায়। দুর্বা ঘাসের সবুজ গালিচায় থাকা প্রতিটি গাছেই নানা রংয়ের সাজ। সুদূরে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন চিত্র। আছে বাংলাদেশের মানচিত্র,বঙ্গবন্ধুর ছবি। কার্যালয়ে ঢুকতেই নীচতলার সিঁড়ির বামপাশে ‘৭১: শেকড়ের মূর্ছনা’। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে যেন চোখ ছানাবড়া। বেশ আধুনিকায়ন করা হয়েছে পাঠাগারটিকে। রয়েছে বেশ দুর্লভ কিছু বই। লাল সবুজের সংমিশ্রণে গড়া ওই পাঠাগারটির সব কিছুতেই যেন মুক্তিযোদ্ধের ছোঁয়া।

নরসিংদীর সার্কিট হাউজ, জেলা প্রশাসকের ডাক বাংলোটাও যেন একখন্ড বাংলাদেশ। চারিদিকের সবুজের আবহ। খানে খানে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি। রাতের কৃত্রিম আলোতে এ দুইটি জায়গা যেন হয়ে উঠে ভিন্ন থেকে আরো ভিন্নতর। জেলার পাঁচটি উপজেলার ভুমি অফিসে স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যাল, আক্ষরিক নাম দেয়া হয়েছে ‘চিরঞ্জীব মুজিব’। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি সরকারি অফিসেই কোনো না কোনোভাবে মুক্তিযুুদ্ধকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

কথা হয়, নরসিংদীর ইনডিপেডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নতুন নতুন ধারণার বাস্তবায়ন করে নরসিংদীকে আলোকিত করে যাচ্ছেন বর্তমান জেলা প্রশাসক। ওনি নিজেই যেন একটি প্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে ওনি এমন কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন যা সারাদেশেই ব্যতিক্রম হয়ে থাকবে।’

সরকারি বাসভবনে আলোচনাকালে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘একটি জাতি এগিয়ে যেতে হলে তাঁর শেঁকড়ের সন্ধান যেতে হবে। আমি মনে করি আমাদের শেঁকড় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। আর মূলমন্ত্র হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর। এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমি একযোগে ১১৬৮টি স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। সকলের সহযোগিতায় অন্যান্য কার্যক্রমগুলোও আমি করতে পেরেছি বলে সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা।’

উল্লেখ্য, তিনি বিভিন্ন সময়ে জনপ্রশাসন পদক, জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শুদ্ধাচার পুরস্কারসহ বিভিন্ন ধরণের সম্মানে ভুষিত হন। চাকরি সূত্রে তিনি ফেলোশিপসহ বিভিন্ন উচ্চুর প্রশিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। সর্বশেষ তিনি জাতীয় ডিজিটাল পুরস্কার পেয়েছেন।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!