ব্রেকিং

x

আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে সস্তায় ইয়াবা আসছে ভারত থেকে!

রবিবার, ২৭ মে ২০১৮ | ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে সস্তায় ইয়াবা আসছে ভারত থেকে!

শুধু মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার হয়ে নয়, ইয়াবা আসছে ভারত থেকেও। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসছে ইয়াবার চালান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কসবা ও বিজয়নগর সীমান্ত দিয়ে আসা এসব ইয়াবা ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।


বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ইয়াবা পাচারের এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সীমান্তরক্ষী বাহিনীও ভারত থেকে ইয়াবা আসার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কথাও বলেছেন তাঁরা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ভারত থেকে আসা ইয়াবার দাম তুলনামূলক সস্তা। সেখান থেকে প্রতি পিস ইয়াবা মাত্র ত্রিশ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অথচ কক্সবাজার থেকে আনতে একেকটি ইয়াবার দাম পড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ভারতীয় ইয়াবা স্থানীয় বাজারে একশ’ থেকে তিনশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ওই তিন উপজেলায় ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছে শতাধিক কারবারি। পাচারে কাজে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে নারী ও শিশুদেরকে। নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করে পাচারকারিরা তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিজিবি-২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘এখন ভারত থেকে সীমান্ত পথে ইয়াবা আসছে। পতাকা বৈঠকসহ বিভিন্ন বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়। প্রথমদিকে তাঁরা বিষয়টি আমলে নিতেন না। এখন বলছেন কি করা যায় সেটা নিয়ে তাঁরা ভাবছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইয়াবা পাচাররোধে বিজিবি’র অভিযান অব্যাহত আছে। ইয়াবা বহন করা সহজ বিধায় পাচারকারিরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। একবার আখাউড়ায় শাহাদুল নামে একজনকে আটক করা হয় যিনি কি-না হাতের মধ্যে প্লাস্টার বেধে এর ভেতরে করে ইয়াবা পাচার করতেন। শাহাদুলের আরো দুই ভাই সেলিম ও আব্দুল্লাহও ইয়াবা ব্যবসায়ি।’ ইয়াবা পাচারকাজে নারী ও শিশুদের ব্যবহার করার বিষয়টিও বিজিবির ওই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় এখন অন্য মাদকের সঙ্গে ইয়াবাও ধরা পড়ছে। এটা থেকে বুঝা যায় যে, ভারত থেকেও ইয়াবা আসতে পারে। যে কোনো মাদকের বিরুদ্ধেই পুলিশের তৎপরতা আছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়াবার চাহিদার কারণে এখন আর ভারত থেকে খুব একটা ফেন্সিডিল ও গাঁজা আসছে না। ইয়াবা পরিবহনে সহজ ও লাভ বেশি বলে কারবারিরা এ ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে বেশি। ইয়াবা কারবারে নতুন নতুন কৌশল তারা অবলম্বন করছে।
একাধিক সূত্র জানায়, জেলার অন্য দুই সীমান্তবর্তী উপজেলার চেয়ে আখাউড়া একাধিক সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসছে বেশি। অন্য দুই উপজেলা দিয়ে বেশি আসছে ফেন্সিডিল ও গাঁজা। সাম্প্রতিককালে আইনশৃংখলা বাহিনীর উদ্ধার অভিযানের সূত্র ধরেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
কারবারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্ত এলাকায় যেসব জমি রয়েছে সেগুলোতে ধান চাষের বাহানা ধরে ইয়াবা পাচার করা হয়। পাচারকারিরা লুঙ্গি, গেঞ্জি পড়ে এসব জমিতে গিয়ে কাজ করার ভান ধরে। দুইপ্রান্তের জমিতেই অবস্থান নেয় কথিত কৃষকরা। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে সংশ্লিষ্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা ইয়াবা পাচার করে। এসব ইয়াবা কোমড়ে কিংবা মাথায় থাকা গামছার ভিতরে করে তারা বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এরপর সড়ক ও রেলপথে পাচার করে দেশের বিভিন্নস্থানে।
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক এক ইয়াবা কারবারির কাছ থেকে জানা গেছে, ওপারের (ভারত) পরু নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি একশ’ পিস ইয়াবা তিন হাজার টাকায় কিনেছিলেন। প্রতি পিস ইয়াবায় পাঁচ টাকা হারে তার পাওয়ার কথা। এরই মধ্যে তিনি ধরা পড়ে যান। অন্য এক ব্যক্তি তাকে ইয়াবা আনার টাকা দিয়েছিলেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, আখাউড়ার সিমনগর সীমান্তের ওপারে পারুসহ জাগু ও দিপাল নামে তিন ব্যক্তি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত। তারাই মূলত বাংলাদেশে ইয়াবা পাঠায়। বাংলাদেশে রতন, দুলাল, ঝন্টু, সামাসহ আরো বেশ কয়েকজন ওপার থেকে ইয়াবা এনে দেশের বিভিন্নস্থানে পাচার করে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইয়াবা পাচারকাজে আখাউড়ায় অন্তত অর্ধশত ব্যবসায়ি সক্রিয় আছে। এর মধ্যে মো. সুমন ওরফে নোয়াখাইল্লা সুমন নামে একজনকে হন্যে হয়ে খোঁজছে পুলিশ। রাতারাতি অর্থ বিত্তের মালিক হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ তার খোঁজ নিতে গিয়ে ইয়াবা সম্রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পায়।
সূত্র জানায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দেলোয়ার, রবি ভূঁইয়া, রবিউল ইসলাম, মামুন, টিটু, রহিজ, সাদ্দাম, মোর্শেদ, সফর আলী (কয়েকদিন যাবত নিখোঁজ), শাহজাহান সাজু, সেজু মিয়া ওরফে লম্ব সেজু, শের আলী, মিন্টু, কাজল ভূঁইয়া, সেলিম, আলম, পারভেজ, জসীম, শাহীন, পলাশ, ফারুক, হামদু, জজ মিয়া, তারু মিয়া, হাসান মিয়া, নূরজাহান, জোসনা বেগম, সাইফুল, পলাশ, ফারুক, জাহাঙ্গীর, আন্টু, কবির হোসেন, হানিফ মিয়া, নির্মল, বিশ্ব, টিটুসহ আরো অনেকে ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত। আগে তারা গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ অন্যান্য মাদক আনলেও এখন ঝুঁকেছে ইয়াবা কারবারের দিকে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা আছে। কারো কারো বিরুদ্ধে মামলা না থাকলেও ইয়াবা কারবারে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশারফ হোসেন তরফদার বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে মনিয়ন্দ থেকে প্রায় চার হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া অভিযানে প্রতিনিয়তই ইয়াবা উদ্ধার হচ্ছে। এখন অন্যান্য মাদকের চেয়ে ইয়াবা বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। মাদক প্রতিরোধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি দেখাচ্ছে।’


আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!