করোনা সংকটে যখন গোটা দেশ লকডাউনে, তখন আখাউড়া মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ছোট বড় প্রায় ২৫টি স্পটে চলছে ইয়াবা, গাজা ও ফেন্সিডিলের রমরমা ব্যবসা। অনুসন্ধ্যানে জানাগেছে, ২০ জন মাদক ব্যবসায়ি নিয়ন্ত্রণ করছে এই ইউনিয়নের মাদক সাম্রাজ্য। লকডাউনের অলস সময়ে মনিয়ন্দ সীমান্তের পাড়া মহল্লায় সহজে হাত বাড়ালে মাদকের দেখা মিলছে। এখান থেকে মাদক পাচার ও সেবন চলছে দেদারছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করোনা সংকট মোকাবেলায় কাজে ব্যস্ত থাকায় মাদক ব্যবসায়িরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে খুল্লামখুল্লা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এই সময়ে রমরমা মাদক ব্যবসায় অবৈধ অর্থের লোভে পুলিশের এক কর্মকর্তা নানান ভাবে সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ি। পাশাপাশি এই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে হাত রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার। তার ছত্রছায়ায় নির্বিগ্নে মাদক ব্যবসা এখন ওপেন সিক্রেট। মাদক সেবনেও স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার হাত রয়েছে।
অনুসন্ধ্যানে জানাগেছে, আখাউড়া মনিয়ন্দ ইউনিয়নের মিনারকোট ও গাগুটিয়া সীমান্ত এলাকায় দিয়ে দেদারছে ইয়াবা, গাজা ও ফেন্সিডিল জাতীয় মাদকদ্রব্য আসছে দেশে। দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর মাদকের বড় বড় চালান বিভিন্ন কায়দায় সড়ক পথে সারাদেশে পাচার করা হচ্ছে আর ছোট ছোট মাদকের চালান মনিয়ন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন মাদক স্পটে খুচরায় বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে।
আরো জানাগেছে, মনিয়ন্দ ইউনিয়নের জয়পুর, মাছিগাছা, পাতারিয়া টেগ, দক্ষিণ মনিয়ন্দ, নোয়ামুড়া, মিনারকোট ও গাগুটিয়া এলাকায় রয়েছে প্রায় ২৫টি মাদকের স্পট। জয়পুরের বিল্লাল (৩৮), দেলু (৩৪), আল আমিন (৩৪), মনালক (৫৬), দক্ষিণ মনিয়ন্দের মোজাম্মেল ওরফে শিমুল (৪১), নোয়ামুড়ার আনোয়ার (২৮), নাছির (৩৭) বাছির (৪১), মাঝিগাছার হাছার মিয়া (৪২), জামাল (৪২) কাইয়ুম (২৬), বিল্লাল (৩৯), মিনারকোটের সোহেল (২৪), লিমন (৩৯), অমৃত (৪৩) ও দেলু (৪৪)সহ ২৫জন মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের মধ্যে চিহ্নিত কয়েকজন রয়েছে মাদকের গডফাদার। কেউ স্ত্রীকে দিয়ে আবার কেউ নিজেকে আত্মগোপন করে লেভারদের মাধ্যমে মাদকের রমরমা ব্যবসা ও পাচার কাজ করছে।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, করোনায় সারাদেশে যানবাহন চলাচল বন্ধ, তবুও থেমে নেই মাদক পরিবহন। ভিন্নভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে মাদক ব্যবসায়িরা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে মাদক আনা নেওয়া করছে প্রতিনিয়ত। জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিস পরিবহন করার নামে মাদকের বড় ডিলারদের কাছ থেকে মাঝারি ডিলার, মাঝারি থেকে ক্ষুদ্র ডিলার বা খুচরা বিক্রাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, শেষ ধাপে ক্রেতা বা মাদকসেবিদের হাতে। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, রিক্সা/ভ্যান ও হেঁটে হেঁটে মাদক পরিবহন হচ্ছে বলে মাদক ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন।
পাড়া মহল্লায় খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, যেকোনো এলাকায় মাদক ব্যবসা করতে গেলে পুলিশকে ম্যানেজ না করে টিকে থাকা অসম্ভব! ম্যানেজ করতে হয় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীকে। নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা করতে গেলে এসব ম্যানেজ করা লাগে। করোনা সংকটের সময় অভিযান না থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের এখন বেশী অংকের মাসোহারা দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ি।
করোনা সংকটে দেশে লকডাউন চলায় সবাই বাসায় অবস্থান করছে, এই সুযোগে পাড়া মহল্লায় একটু আড্ড দিয়ে আসি বলে যারা নিয়মিত মাদক সেবন করে তাদের সঙ্গ মিশে অনিয়মিত মাদকসেবীরা মাদক সেবন করছে। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে মোটরসাইলে আরোহীসহ শত শত যুবক মাদক সেবন করতে মনিয়ন্দের মাদকের আস্থানায় ভীড় করছে। সীমান্ত এলাকার চায়ের দোকান বন্ধ থাকলেও পাড়া-মহল্লা অলিগলি আড্ডা থেমে নেই। থেমে নেই মাদকসেবন। কোনো না কোনোভাবেই মাদক সংগ্রহ করে থাকে। নির্জনতার সুযোগে চুটিয়ে আড্ডার ছলে মাদকসেবন চলছে এখানে।
এদিকে করোনা সংকটের দোহাই দিয়ে মাদকের দামও বেড়েছে দ্বিগুন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণেরও বেশী। ইয়াবা ফেন্সিডিল ও গাঁজা চালান আনা নেওয়া করা যাচ্ছেনা এমন দোহাই দিয়ে মাদক ব্যবসায়িরা মাদকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মাদকসেবিরা দাম বেশী হলেও মাদক সংগ্রহ করছে। নেশার কাছে মূল্য তুচ্ছ। তাদের একটাই কথা দাম বেশী হলেও হাতের নাগালেই মিলছে মাদক। পুলিশও কিছু বলছে না অথাৎ পুলিশের নজরদারির সুযোগ এই মূর্হুতে নেই বললেই চলে। রাস্তার ধারে বসে সন্ধ্যায় মাদক সেবন করলেও কেউ বলার নেই! কারণ রাস্তা থাকে ফাঁকা, সবাই বাসায় বন্দি।
আখাউড়া থানার এসআই নিতাই জানিয়েছেন, পুলিশ করোনা সংকট মোকাবেলায় মানবিক কাজে ব্যস্ত থাকলেও মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে।মাদক ব্যবসায়িদের কোন ছাড় দেয়া হয়না বলেও তিনি জানান।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com