বিশ্বজিৎ পাল বাবু:
আখাউড়া পৌরসভার আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার পরপরই পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। তবে গঠনের ১১ দিন অর্থাৎ ১৩ থেকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে পদত্যাগ করেছেন ঘোষিত কমিটির ১১ নেতা। পদত্যাগের এক প্রকার হিড়িক পড়ায় দলটিতে ‘ঝড়’ বইছে। পৌরসভার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা তো দূরের কথা এখন দলের পরিস্থিতি নিয়েই সাধারন কর্মীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলছে নানা ধরণের সমালোচনা।
পদত্যাগকারী নেতারা হলেন- পৌর বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি মো. বাহার মিয়া, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান (কাউন্সিলর), সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. মন্তাজ মিয়া (কাউন্সিলর), সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল, সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক দুলাল ভুইয়া, সাবেক উপদেষ্টা মো. এলাই মিয়া, সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ মালদার, ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মশিউর রহমান বাবুল, সাবেক ৬নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মো সহিদুল ইসলাম, আহবায়ক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম রানা, সদস্য রহিজ খান। তারা জেলা বিএনপির আহবায়ক জিল্লুর রহমান বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
পদত্যাগপত্রে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কমিটির আহবায়ক হিসেবে অন্য উপজেলার ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদককে নির্বাচিত করা। দলের কারো সঙ্গে পরিচিতি নেই এমন অনেক ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা, বিলুপ্ত কমিটির ১০১ জনের মধ্যে মাত্র সাতজনকে নতুন কমিটিতে স্থান দেয়ার বিষয়টি পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির আহবায়ক জিল্লুর রহমান গত ১৩ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেলিম ভূইয়াকে আহবায়ক ও আক্তার খানকে সদস্য সচিব করে আখাউড়া পৌর বিএনপির ৩১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। গত ১৬ জানুয়ারি জিল্লুর রহমান নিজের ফেসবুকে আইডিতে এটি পোস্ট করেন।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলিম ভূইয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের বাসিন্দা ও সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়া লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারি আব্দুর রহমান ওরফে সানির চাচাতো ভাই হলেন সেলিম ভূঁইয়া। মূলত সানির বড় ভাই বরিশল গ্রামের বাসিন্দা ও ভূইয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবির আহমেদের হাত ধরেই সেলিম ভূঁইয়া দলে প্রবেশ করেছেন বলে আলোচনা আছে।
নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, সেলিম ভূঁইয়া পৌর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে কখনোই জড়িত ছিলেন না। পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ড বিএনপির কেউই তাকে চিনেন না। সদস্য সচিব আক্তার খান একজন শ্রমিক নেতা। তার সঙ্গেও পৌর বিএনপির কারো সম্পর্ক নেই। সদ্য বিলুপ্ত আখাউড়া পৌর বিএনপির ১০১এক সদস্যের কমিটি থেকে মাত্র সাতজনকে আহবায়ক কমিটিতে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শাহাদাত হোসেনকে সদস্য পদেও রাখা হয়নি। নবঘোষিত আহবায়ক কমিটির ২৪জন সদস্যের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া অন্যরা কখনোই বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
নেতা-কর্মীরা জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর আখাউড়া পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। জেলা বিএনপির আহবায়ক জিল্লুর রহমান কমিটি বিলুপ্তির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, সংশ্লিষ্ট পৌরসভার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু জিল্লুর রহমান পৌর কমিটির কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে পদত্যাগ করা সাবেক সভাপতি মো. বাহার মিয়া জানান, রাজনৈতিক কারণে ১৯৯৯ সালে তিনি এক মাস কারাভোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। ২০১৩ সালে তার ছেলে ও ভাতিজার নামে দুটি মামলা হয়েছে যা চলমান।
শনিবার রাতে তিনি বলেন, ‘আমার মতো অনেক ত্যাগী নেতাকেই বর্তমান আহবায়ক কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই অন্য উপজেলার লোকজনকে আহবায়ক করা হয়েছে। আমরা তার নেতৃত্বে থাকবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপির রাজনীতিকে ঘরে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। এভাবে তো আর রাজনীতি করা সম্ভব না।’
পদত্যাগ করা মন্তাজ মিয়া বলেন, ‘বর্তমান আহবায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্যই অতীতে কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন না।’ আতিকুর রহমান বলেন, ‘এখন কমিটিতে নতুন নতুন মুখ। বাহার ভাই ছাড়া সবাই রাজনৈতিকভাবে আমার ছোট।’
জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. জিল্লুর রহমান অবশ্য সাংবাদিকদেরকে জানান, পদ না পেলে অনেকেই অনেক কিছু বলেন। দলে ইয়ং ফোর্স দরকার বলে সেভাবেই নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। যারা পদত্যাগ করেছেন তাঁরা মূলত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com