আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মান প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন থেকে ভারতের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইরকন এই প্রকল্পের ভূমি বুঝে নিয়েছে। আগামী সপ্তাহে থেকে এই প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হবে বলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইরকনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আগামী দেড় বছরে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।
আখাউড়া রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ জানায়, বাংলাদেশের আখাউড়া রেলজংশন থেকে ভারত ত্রিপুরারাজ্যের আগরতলা রেলস্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইরকন সোমবার থেকেই এই প্রকল্পের ভূমি বুঝে নেয়া শুরু করেছে বলে তারা জানিয়েছেন।
প্রকৌশল বিভাগ আরো জানায়, আখাউড়া-আগরতলা ১৫ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৫ কিলোমিটার ভারতে এবং ১০ কিলোমিটার বাংলাদেশে হবে। ভারতের অংশের নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে। বাংলাদেশের অংশে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলেস্টেশন থেকে সীমান্তবর্তী আখাউড়া মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শিবনগর পর্যন্ত রেলপথ নির্মানের ব্যাপারে গত ২১মে ঢাকা রেলভবনে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহন কর্মকর্তা মেহের নিগার গতকাল সোমবার ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইরকনকে অধিগ্রহনকৃত ভূমি বুঝি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। তখন আখাউড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) জেসমিন সুলতানাও উপস্থিত ছিলেন। আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত আখাউড়া গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন থেকে মোগড়া, গঙ্গাসাগর, মনিয়ন্দ এলাকায় অধিগ্রহনকৃত সমস্ত ভুমি ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। আগামী দুইদিনের মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্পের অধিগ্রহনকৃত প্রকল্পের ৫৬.৩৬ একর ভূমি বুঝিয়ে দেয়া সম্পন্ন হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
অপরদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখাগেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের সার্ভে বিভাগের লোকজন আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন নির্মান প্রকল্পের ভুমি মাপঝোক করে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিকট বুঝিয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশ সার্ভে বিভাগের লোকজনের সাথে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজনও মাঠে মাপঝোকের কাজ করছেন। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে এই প্রকল্পের ভূমি বুঝিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
এসময় ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সার্ভে কর্মকর্তা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই সপ্তাহে প্রকল্পের ভূমি বুঝে নেয়া হবে। আগামী সপ্তাহে প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু করার কথা রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
প্রকল্প সূত্রে জানাগেছে, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন নির্মান প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ অংশের ১০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এই টাকার মধ্যে ভারত থেকে অনুদান হিসাবে পাওয়া গেছে ৪২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অবশিষ্ঠ ৫৭ কোটি টাকা সরকারী ফান্ড থেকে ব্যয় করা হবে। এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে দেড় বছর। ভারতের ৫ কিলোমিটার অংশে ইতিমধ্যে রেললাইন নির্মান কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের দিকে প্রথম স্টেশন হবে আখাউড়া গঙ্গাসাগর। গঙ্গাসাগর থেকে আখাউড়ার মধ্যে বর্তমান স্টেশনের পাশ দিয়ে তৈরি হবে নতুন রেললাইন। ভারত অংশের ৫ কিলোমিটার হবে আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে বের হয়ে নিশ্চিন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এই রেললাইন। নিশ্চিন্তপুরে হবে সীমান্ত স্টেশন ও রেল ইয়ার্ড।
আখাউড়া রেলওয়ে জংশন সূত্রে জানাগেছে, দীর্ঘ ৬৯ বছর পর পুনরায় আখাউড়ার সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার রেল যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে আগরতলার সাথে রেল যোগাযোগ ছিল।
তারা আরো জানিয়েছে, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ হবে ডুয়েল গেজ। বাংলাদেশ অংশে ১০ কিলোমিটার মূল রেলপথ ছাড়াও ৪ দশমিক ২৫ কিলোমিটার লুপ লাইন রাখা হবে। ৩টি মেজর ও ২০টি মাইনর ব্রিজ নির্মাণ হবে। আখাউড়া, গঙ্গাসাগর ও সীমান্তের নিশ্চিন্তপুর নামে ৩টি স্টেশনে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিগনালিং ব্যবস্থাও স্থাপন করা হবে। এই রেললাইন নির্মাণ কাজ তদারকি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভারতের ৫ কিলোমিটার অংশে জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও জটিলতার কারণে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ একটি উড়াল রেলপথ নির্মান হবে। বাংলাদেশের ১০ কিলোমিটার মিটার গেজ নির্মাণের কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে ডুয়েল গেজ নির্মাণের পরিকল্পনা চুড়ান্ত হয়। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ পুরো অংশ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮০ কোটি রুপি। এর মধ্যে ভারতের ৫ কিলোমিটার অংশের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮০ কোটি রুপি । আর বাংলাদেশ অংশের ১০ কিলোমিটারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি রুপি (৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ)। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশের ভুমি অধিগ্রহন, পুনর্বাসন ও অন্য রাজস্ব খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। আর ১০ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা অনুদান হিসেবে দেবে ভারত।
উল্লেখ্য, আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ হচ্ছে বাংলাদেশ সাথে ভারতের ৬ষ্ট রেলসংযোগ রুট। ভারতের সঙ্গে বেনাপোল-পেট্রাপোল, দর্শনা-গেদে ও রোহানপুর-সিঙ্গাবাদ রুট দুই দেশের মধ্যে চালু আছে। বিরল-রাধিকাপুর সংযোগ স্থাপন কাজ চলছে। এছাড়া শাহবাজপুর-মহিষাশন রেল সংযোগ স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। খুব তারাতারি এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এছাড়া বাইরে চিলাহাটি-হলিদাবাড়ি এবং ফেনী-বেলুনিয়া রেল রুটও চালুর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com