রোকেয়া বেগম। বয়স ৮৫ বছর। গত ৪৮ বছর আগে দুই কন্যা সন্তান রেখে তার স্বামী মারা যায়। বাড়িঘরও নেই। প্রায় পথে বসার জোগাড়। আত্মীয়স্বজনরাও পাশে থাকতে চায়নি। এই অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে রোকেয়া বিভিন্ন পতিত খেত খামার থেকে শাক সবজি তুলে মানুষের বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি করে সন্তানদের ভরণপোষণ শুরু করেন।
আখাউড়া চন্দনসার গ্রামে ১৫ টাকার ভাড়া বাসায় থেকে জীবন যুদ্ধ শুরু করেন। সংসার বাচিয়ে রাখতে তিনি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ত্রিপুরারাজ্যে গিয়েও শাক সবজি বিক্রি করতেন।
রোকেয়া আরো জানান, বর্তমানে তিনি আখাউড়া সড়ক বাজারে শাক সবজি বিক্রয় করছেন। এক কন্যা সন্তানের অকর্ম স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে ৬ জনের ভরণপোষণ করছেন তিনি। বর্তমানে মালদার পাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকলেও আগের চেয়ে অনেক রুচিশীল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বিল্ডিং বাসায় থাকছেন। এক বিবাহিত নাতিও বউ বাচ্চা তার সংসারে আছেন। টানা ৪৮ বছরের মধ্যে তিনি ব্যবসা করে দুই কন্যা সন্তানের বিবাহ দেয়া থেকে শুরু করে কয়েকজন নাতি-নাতিনীদেরও বিয়ে দেন নিজের টাকায়।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন শাক সবজি বিক্রি করে যা আয় হয় চলতে কষ্ট হয় না। তবে ইদানিং করোনা পরিস্থিতির জন্য ব্যবসায় মন্দভাব এসেগেছে। বয়স বাড়লেও তার মধ্যে কোন ক্লান্তি নেই, বড় রকমের কোন রোগ নেই বলেও জানিয়েছেন। মাঝে মধ্যে সামান্য জ্বর সর্দি বা গ্যাসের সমস্যা হলে দাতে দাত চেপে হলেও ব্যবসাটা চালিয়ে যান। এই পেশায় এসে স্বেচ্ছায় কখনো তিনি বিশ্রাম নিয়েছেন এমন কথা মনে নেই।
রোগেয়া বেগম জানান, একটি সংসারে নারী ও পুরুষ উভয়ের ভুমিকা থাকে কিন্তু তার সংসারে নারী পুরুষ উভয়ের ভুমিকায় তিনি নিজেই। ভোরে উঠে ঘর পরিস্কার করা, পানি এনে সকালের খাবার তৈরী করে খাওয়া দাওয়া শেষে বাজারে গিয়ে ব্যবসায় মন দেয়ার কাজও তিনি করেন। শুরুতে কন্যাদের জন্য করতেন এখন করছেন নাতি আর নাতনীদের জন্য। যতদিন বেচে আছেন ততদিন তিনি এই কাজ করে যাবেন বলেও তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, ৮৫ বছর বয়সে এসে ঘরের শক্ত কাজগুলো করতে পারছেন না তিনি। তবে মনের জোর রয়েছে ষোলআনা।
তিনি আরো জানান, মৃত্যর আগে নিজের একটি বাড়ি করার সখ ছিল কিন্তু সন্তান ও নাতি-নাতনিদের ভরণপোষণেই সব টাকা খরচ হয়ে যায়। বাড়ি কেনার মত টাকা হাতে থাকেনা। তারপরও বাড়ি কেনার স্বপ্নটা ছাড়তে চান না তিনি।
রোকেয়া বেগম আরো জানান, নারীরা কখনো অবলা হয় না, সাহস করে আমাদের মত ছোট ছোট পেশায় নেমে যেতে পারলেও দু:শ্চিন্তামুক্ত থাকা সম্ভব।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com