এ যেন হৃদয়ের টান। মানুষ মানুষের জন্য। একেবারেই আপন। বিভিন্ন সময়ে ধর্ম নিয়ে, ধর্মের জন্য কতই না কিছু ঘটছে দেশে, পুরো দুনিয়াই। এরই সঙ্গে হিংসা কিংবা ধর্মান্তকরণের যতসব খবরতো আছেই! সোমবার আখাউড়া পৌর শহরের প্রাণ কেন্দ্র রাধানগর শীল পাড়ায় সম্প্রীতি আর সম্মানের নজির গড়েছেন কিছু বন্ধু, বড় ভাই আর ছোট বোনরা।
সুবিধাবঞ্চিত এক পরিবারের কন্যার বিয়েতে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন হৃদয়বান’ এসব মানুষরা। কন্যার বাবা কানু শীল আর তার স্ত্রী লক্মী শীলের একমাত্র কন্যা সন্তান ঝুমা শীল। বিয়ে ঝুমা শীলের। সোমবার ভোর থেকেই বিয়ে বাড়িতে চলছিল নানান অনুষ্ঠান। তবে কিছুই জমজমাট হয়ে উঠছিল না। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্য আকাশে সূর্য আসতেই ঐ বিয়েকে রাঙিয়ে দিতে আখাউড়ার বেশ কয়েকজন বন্ধু কাজ শুরু করেন। সুদূর ঢাকা থেকে দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার আখাউড়ার সন্তান শিপন হাবীব আখাউড়ায় আসেন। পরপর ফোন করতে থাকেন তার প্রিয় বন্ধু আখাউড়া প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও এশিয়ান টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি নুরুন্নবী ভু্ইয়া, বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ি নাজিরুল হক, ছোট বোন সমাজকর্মী সিনথিয়া ঘোষ মৌকে। মুর্হুতেই সবাই জড়ো হয় আখাউড়া থানার সামনে।
তখন দুপুর ১২টা। দলবলে যাওয়া হয় আখাউড়া থানার অফিসার ইনর্চাজ রসুল আহমদ নিজামীর অফিসে। বিয়ের পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন’ আপনাদের নিকট থেকে এ বিয়ের কথাগুলো শুনে খুবই ভালো লাগল, এমন একটি অসাধারন উদ্যোগে আমিও থাকতে চাই। কন্যার বাড়ি আমার থানা থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে। ঐ কন্যা আমার প্রতিবেশী, স্বজন। তার পরিচিতজনদের কাছ থেকেও সহায়তা গ্রহন করেন। তারপর এক এক করে কেনা হয় কন্যার গহনা, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও শাড়ী কাপড়। পাঠানো হয় কন্যার বাড়িতে। আনন্দে ভরে উঠে বিয়ে বাড়ি। বাজতে থাকে বিয়ের বাদ্যযন্ত্র।
রাতে মাগরিব নামাজ শেষে সবাই উপস্থিত হন কনের বাড়িতে। শুরু হয় বিয়ের বাজনা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে পুরো পরিবেশ যেন ভরে উঠে আনন্দে-উল্লাসে। কারও কপালে সিদুর কারও মাথায় টুপি, কারও গায়ে পাঞ্জাবী, কারও গায়ে ধূতি। সবাই মানুষ। ওটাই সবচেয়ে বড় পরিচয় হয়ে দাড়ায় বিয়ে বাড়িটিতে। এ সময় কনের বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয়া হয় স্বণালংকার, নগদ টাকাসহ বিয়ের প্রয়োজীয় দ্রব্যাদি।
কন্যাকে আর্শিবাদ জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা রসুল আহমদ নিজামী বলেন, অসাধারণ পরিবেশ। সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের কন্যার বিয়ে নয়, এ যেন আমারই এক কন্যার বিয়ে। আখাউড়ার মানুষ খুব ভাল। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অসাধারণ মিল রয়েছে। এ কন্যার বিয়েতে শুধু আমরাই সহযোগিতা করিনি, এলাকাবাসীও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সমাজের মানুষ যদি একে অপরের মধ্যে এমন সম্প্রীতি আর ভালবাসার বন্ধন তৈরি করে, তাহলে সমাজ আরও আলোকিত হবে। অপরাধ মুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে। মানুষে মানুষে ভ্রাত্রিত্ব বাড়বে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে এসে সিনিয়র সাংবাদিক শিপন হাবীব যে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, তা জীবনবর মনে থাকবে। তার এবং তার বন্ধুদের দায়িত্বশীয় ভূমিকায়, সমাজে আরও দায়িত্বশীল মানুষের সৃষ্টি হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক শিপন হাবীব বলেন, তারও একটি ছোট্ট কন্যা শিশু রয়েছে। কন্যা শিশু সৃষ্টিকর্তার বিশেষ দান। যখনই শুনতে পান অপর এক কন্যার বিয়ে দিতে সহযোগিতার প্রয়োজন- তখনই ঢাকা থেকে তিনি আখাউড়ায় ছূটে আসেন। বললেন, আখাউড়ার মানুষ খুবই ভাল। ভালবাসায় ভরা মানুষগুলো ভাল কিছু করতে চায়। রক্তদান থেকে শুরু করে নানান সামাজিক কর্মকান্ডে আখাউড়ার মানুষ কাজ করছে। যুব সমাজ নানা ধরণের উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। কন্যাদানে যাদের সহযোগিতা তিনি পেয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, । আখাউড়া থানার অফিসার ইনর্চাজ রসুল আহমদ নিজামী অসাধারণ মানুষ। বিনয়ী-ভদ্র মানুষ। বন্ধু নূরুন্নবী ভূইয়া, নাজিরুল ইসলাম ও ছোট বোন সিনথিয়া ঘোষ মৌ’র প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি জানান, ভাল কিছু করতে পারলে, নারী শিশুর প্রতি সহায়তার হাত বাড়াতে পারলে খুবই ভাল লাগে। দুনিয়ার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে যে আনন্দ পান, তা অন্য কিছু করে পান না। এ যেন এ প্রকার নেশা।
বিয়ে আনুষ্ঠানিকতায় আরও ছিলেন আখাউড়া পৌরসভা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আবু কাউছার ভুইয়া, আখাউড়া টেলিভিশন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম, সাংবাদিক মহিউদ্দিন মিশু, পৌর কাউন্সিলর আতিকুল ইসলাম, সাবেক মেম্বার ইকবাল হোসেন প্রমুখ।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com