সাংস্কৃতির পীঠস্থান রূপে খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় ঝিমিয়ে পড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গন আবার জেগে উঠেছে। আশির দশকের মতই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর নাটক পরিবেশনসহ শিল্প সাংস্কৃতির নানা আয়োজন চোখে পড়ছে এখন নিয়মিত। আর এই সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টি করেছে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি আখাউড়া। মাত্র ১১ মাস আগে নতুনভাবে যাত্রা শুরু হলেও এই অল্প সময়ের ব্যবধানে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি অনেক সুনাম অর্জন করেছে। এখানকার শিল্পীরা তাদের যোগ্যতা বলে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করছে। আর এর উদ্যোক্তা আখাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুজ্জামান। আখাউড়া উপজেলায় যোগদানের পর এই শিল্পকলা একাডেমিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে আখাউড়ায় সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি।
শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষার্থীদের গলায় ডিজিটাল আইডি কার্ড পড়িয়ে দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুজ্জামান
উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুজ্জামানের হাত ধরে গত পহেলা বৈশাখ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে। আখাউড়া উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বর্তমানে উপজেলা পরিষদ ভবন ও মিলনায়তনে চলছে। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা পরিষদ ভবনের দুইটি রোম আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সপ্তাহে দুইদিন বৃহস্প্রতিবার ও শুক্রবার শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়। সঙ্গীত, নৃত্য, চিত্রাঙ্কন, আবৃতি ও অভিনয় এই ৫টি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। অন্তত ৪০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এখানে শিক্ষার্থীদের শুদ্ধ উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গির প্রশিক্ষণও দেয়া হয় বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
চিত্রাঙ্কন করছে এক শিক্ষার্থী
সরেজমিন খোজ নেয়ার সময় উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত প্রশিক্ষক দ্বিলীপ দেবনাথ জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে এই একাডেমির মনামী রায় কৃতিত্ব দেখিয়েছে, সুনাম অর্জন হয়েছে আখাউড়াবাসীর। নৃত্যে মনামী, আদিবা, তানহা,পুনম, অঙ্কিতা ও লোপা নামের ৬জনের একটি টিম বাংলাদেশে টেলিভিশনে অংশগ্রহনে করছে, সঙ্গীতের আর একটি টিম অংশগ্রহন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে আখাউড়া উপজেলার সংস্কৃতি উন্নয়ন এবং বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি আখাউড়া। জাতীয় দিবস, বিজয় দিবস, অমর একুশে ফেব্রুয়ারীসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান গুলোতে এই শিল্পকলা একাডেমির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, স্বাধীনতা দিবসেও তা অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানান।
উপজেলার শিল্পকলা একাডেমির ৬জন নৃত্য শিল্পী বাংলাদেশ টেলিভিশনে অংশগ্রহন করতে এখন ঢাকায়।
উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল বাবু জানান, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির জন্য ভবন ও মুক্তমঞ্চ নির্মান হচ্ছে। ৬০ শতক খাস ভূমিতে তা নির্মানের প্রক্রিয়া চলছে।
শিল্পকলা একাডেমির সদস্য সাংবাদিক জুটন বনিক জানান, দেশের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ কক্ষ আধুনিকায়নে অর্থ বরাদ্ধ দিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বরাও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির উন্নয়নে এগিয়ে আসছেন।
সঙ্গীত প্রশিক্ষন চলছে
খোজ নেয়ার সময় স্থানীয় সঙ্গীত ব্যক্তিত্বরা জানায়, আশির দশকের পর থেকে আখাউড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গন বিলুপ্তির পথে ছিল। এবার নতুন ভাবে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি চালুর পর হঠাৎ করেই যেন জেগে উঠেছে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
শিল্পকলা একাডেমির সদস্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি দ্রুত এগিয়ে চলছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে একের পর এক সাফল্য আসছে।
এ ব্যপারে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুজ্জামান বলেছেন, আখাউড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করতেই শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মূলত একটি টিমওয়ার্কের কারণেই আমরা ভালোভাবে এগুতে পারছি। দ্রুত সাফল্যও আসছে।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com