বিপদ থেকে মুক্তির আশায় এসেছিলেন বাংলাদেশের তীর্থস্থান ভ্রমণে। করোনা ভাইরাস নামে মহামারীর বিপদে এখন বিপদগ্রস্থ একটি ভারতীয় পরিবার। সোনা, রূপার গহনা বিক্রি করে কয়েকদিন চলার পর এখন তাঁদের ঠাঁয় হয়েছে আশ্রমে।
অবশ্য আপাতত থাকা-খাওয়ার খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। আশ্রম কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ-ভারতের ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভারতের প্রতি বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতাবোধের বিষয়টি মাথায় রেখে ওই পরিবারটিকে যথাসম্ভব আপ্যায়ন করে যাচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার লোকনাথ সেবাশ্রম শান্তিবন মহাশ্মশাণে গিয়ে দেখা মিলে ওই পরিবারটির। আশ্রমের পূর্ব দিকের একটি ঘরে গিয়ে দেখা যায় শিশু মেয়েকে নিয়ে রান্নায় ব্যস্ত মা। পাশেই চৌকিতে শুয়ে আছেন ছেলে।
কথা বলে জানা গেল, তাঁদের বাড়ি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার উষাবাজার নামক এলাকায়। পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে গৃহকর্তা ও দর্জি কারিগর খোকন বর্মণ রয়ে গেছেন ভারতেই। মানিক বর্মণের স্ত্রী দিনমজুর রিপা বর্মণ, গাড়ি চালক ছেলে মানিক বর্মণ ও অষ্টম শ্রেণি পড়–য়া মেয়ে রিপনা বর্মণ আশ্রমে আছেন গত ১৫ মে থেকে।
রিপা বর্মণ জানান, ছেলের ভালোর আশায় নারায়ণগঞ্জের বারদীর শ্রী শ্রী লোকনাথ আশ্রমে আসার মানতি করেছিলেন। গত ৯ মার্চ তাঁরা বাংলাদেশে আসেন। প্রথমে যান কক্সবাজার ভ্রমণে। সেখান থেকে ২৩ মার্চ যান বারদীতে। এরই মধ্যে খবর পান পরদিন থেকে ভারতে লকডাউন। ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশেও সরকারি ছুটি ঘোষণা দিয়ে চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
কাঁদতে কাঁদতে রিপা বর্মণ বলেন, ‘এসব খবরে আমরা ভীষণ চিন্তায় পড়ে যাই। বারদীতে আমরা একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। হাতে থাকা টাকা শেষ হয়ে যায়। সাড়ে ছয় আনার একটি স্বর্ণের চেইন, মেয়ের পায়ে থাকা পাঁচভরি ওজনের রুপার চেইন বিক্রি করে কয়েকটা দিন কাটাই। ওই টাকা শেষ হয়ে গেলে যেভাবেই হোক আখাউড়া এসে যাওয়ার চেষ্টার চিন্তা থেকেই চলে আসা।’
রিপা বর্মণ জানান, গত ১৫ মে আখাউড়ায় আসেন। স্থলবন্দরে গিয়ে অনেক চেষ্টা করেও যেতে পারেন নি। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানায় এখান থেকে যেতে দিলেও ভারতীয়রা ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় বন্দরে থাকা লোকজন ইউএনও’র সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা আশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। আশ্রম থেকেই খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকা-খাওয়ায় তাঁদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
রিপা বর্মণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়ের বয়স যখন এক বছর স্বর্ণের চেইনটি কিনেন। রাস্তা পরিস্কারের কাজ করে পাঁচশ-এক হাজার করে টাকা দিয়ে দাম পরিশোধ করেন। মেয়ে বড় হলে অনেক কষ্টে নুপুর বানিয়ে দেন। এসবই বিক্রি করতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। তবে তাঁর ছোট্ট মেয়েটার মন খারাপ।
রিপনা বর্মণ জানায়, স্থানীয় সুকুময় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে সে। বাধ্য হয়ে স্বর্ণ ও রূপার গহনা বিক্রি করতে লেগেছে বলে মন খারাপ। তবে যা কিছুই হয়েছে এখন তাঁরা যেভাবেই হোক নিজ দেশে চলে যেতে চায়।
রিপা বর্মণ জানায়, সবচেয়ে বড় চিন্তা হচ্ছে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে। স্বামী খোকন বর্মণের একটি কিডনী নেই। লকডাউনের কারণে এখন দর্জির কাজও বন্ধ। যে কারণে তাঁর চলাফেরায় খুব কষ্ট হচ্ছে। যেভাবেই হোক নিজ দেশে নেয়ার জন্য ভারতের সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি বিনীত অনুরোধ করেন।
আশ্রমের সেবক আশীষ মহারাজ বলেন, ‘ইউএনও আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেন। আশ্রম কমিটিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের থাকার বিষয়ে ব্যবস্থা করতে পারি নি। এছাড়া আমিও এখানে কেউ থাকার পক্ষে নই। কিন্তু পরে সার্বিক মানবিক দিক বিবেচনা করে ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্রাতৃত্ববোধের কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে যাই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করার কথা বলা হলেও আমি এতে রাজি হই নি। আপাতত আশ্রম থেকেই যতটুকু সম্ভব তাঁদের খাবার সামগ্রী দেয়া হচ্ছে।’
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com