ব্রেকিং

x

আখাউড়ায় বিদ্যুতের ‘সামাজিক দূরত্ব’!

শুক্রবার, ২৯ মে ২০২০ | ১১:০৪ অপরাহ্ণ

আখাউড়ায় বিদ্যুতের ‘সামাজিক দূরত্ব’!

‘মনে হয় করোনা ধরছে। ২৪ ঘন্টায় ৩০-৩৫ বার যাওয়া আসা করেছে। বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে যায় না আসে। শীতকালে দিনের পর দিন বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে তাহলে উন্নয়নের কি কাজ করা হলো। বিদ্যুতের এই পরিস্থিতিতে ইলেকট্রনিকস পণ্যের ক্ষতির তালিকা নিয়ে রিপোর্ট করলে পত্রিকায় তিন কলাম পাঁচ ইঞ্চি জায়গা লাগবে।’


একেকটি বাক্য আখাউড়ার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে একেকজনের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য। আখাউড়ার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কোন এলাকায় কেমন সেটা জানতে চেয়ে এ প্রতিবেদকের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিপরীতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসব লিখেছেন। পাশাপাশি কয়েক মাস ধরে তাঁরা বিদ্যুত থাকা না থাকার ভেল্কিবাজির চিত্র তুলে ধরেছেন।


আরও পড়ুন: একজন মানবিক ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা

সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে বুঝা যায় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে আখাউড়ায় যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছে চলেছে বিদ্যুৎ! বেশ নিয়ম করেই পাশে নেই জনগণের। পাশে থাকলেও সেটা খুবই কম সময়। এর মধ্যে তো গ্রাহকদের ‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিলের যন্ত্রণা আছেই। তবে করোনা প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ থাকলেও বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে সংশ্লিষ্টদের যেন কোনো নজরই নেই। সমস্যা সমাধানে গাফিলতির পাশাপাশি কর্তা ব্যক্তিদেরকে ফোন করলে বিরক্ত হয়ে নানা কটু কথা শুনিয়ে দেয়ার নজিরও আছে।

এশিয়ান টেলিভিশনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি মো. নুরুন্নবী ভূঁইয়া বললেন, ‘বর্তমান ডিজিএম সাহেব আজ কল ধরার পর মনে হলো আমি বিশ্ব জয় করলাম। তবে বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতি নিয়ে ওনার কাছ থেকে তেমন সদুত্তর আমি পাইনি।’অবশ্য শুক্রবার বেলা পৌণে ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে কথা হলে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো. আবুল বাশার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঝড়ে তার ছিড়ে যাওয়া, গাছ ভেঙ্গে পড়ায় বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দেয়। পৌর এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে আর বিদ্যুৎ যায়নি।’ যদিও ওনি কথা বলার পর থেকে সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ পৌর এলাকায় তিন-চারবার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করে। নানা সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়টি সবাইকে বুঝতে হবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন। তাঁর মতে পরিস্থিতি ভালো আছে।

আরও পড়ুন: ‘এ লড়াইয়ে মরতে পারব, হারতে পারব না’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মাস তিনেক ধরেই আখাউড়ায় বিদুতের বেহাল অবস্থা। পৌর এলাকায় প্রতিদিন গড়ে দুই-তিন ঘন্টা লোডশেডিং থাকছে। এছাড়া কোনো কোনো দিন ৩০-৪০ বার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করছে। তবে গ্রাম পর্যায়ে চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সামান্য কোনো ত্রুটির কথা বলে কোথাও কোথাও দুই তিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। অভিযোগ কেন্দ্রের ফোন নম্বরে কল করলেও কেউ রিসিভ করেন না। আবার ডিজিএমকে ফোন করলে তিনি বিরক্ত হন। এজিএমকে ফোন দিলে তিনি বিরক্ত না হলেও সমস্যা সমাধানে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারছেন না। নতুন ডিজিএম যোগদানের পর থেকেই এ অবস্থা শুরু হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

উপজেলার মনিয়ন্দ গ্রামের রিয়াদ চৌধুরী বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে ডিজিএম’র সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের অডিও রেকর্ড শুনান। ফোন করার ডিজিএমকে বেশ বিরক্ত হতে শুনা যায় ওই রেকর্ডে। হাসান মাহমুদ পারভেজ জানান, নুরপুর এলাকায় ট্রান্সফরমারে সমস্যা দেখা দিলে ডিজিএমকে জানানোর পর তিনি বিরক্ত হয়ে বিদ্যুত বিলের কাগজে থাকা ফোন নম্বরে কল করতে বলেন। মনিয়ন্দের হৃদয় খন্দকার নামে এক যুবক জানান, সন্ধ্যা ছয়টা ১৯ মিনিটের সময় তার এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। মসজিদ পাড়ার যুবলীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন স্বপন জানান, ঈদের পর কতবার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করেছে সেটার হিসেব রাখতে একজন বেতনধারী কর্মচারি প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের দুইটি বিভাগ লকডাউন

মৌসুমী আক্তার নামে এক শিক্ষক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মনে হয় ফ্রি চালাই। দিলে দিলো না দিলে নাই। কিন্তু মাস শেষে গড় বিলের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে জোঁকের মতো টাকা শুষে নিচ্ছে।’ শিক্ষক প্রভাতী বণিক লিখেছেন, ‘পরিস্থিতি ভালো হোক আর খারাপ হোক। বিলের বাহার কিন্তু দেখার মতো, তিন মাসে তিন গুন।’

ধরখারের সীমান্ত চৌধুরী নামে একজন জানান, গত পাঁচ বছরে বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতি হয়নি। সামান্য ঝড় বৃষ্টি হলেই মনিয়ন্দে বিদ্যুৎ পেতে দুইদিন সময় লাগে বলে জানিয়েছেন কাউছার মোল্লা। গঙ্গানগরের সৈকত আহসান জানান, ঈদের পর থেকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। দেবগ্রাম পূর্বপাড়ার শিপন দেওয়ান জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার বিদ্যুৎ গিয়ে ১২টা ১০ নাগাদ আসেনি। একই সময়ে সাতপাড়ায় বিদ্যুৎ যায় বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার রুবেল আহমেদ।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!