আখাউড়ায় নতুন ডিজিএম যোগদানের পর বলেছেন ‘আখাউড়ায় বিদ্যুতের কোন লোডসেডিং নেই’ কিন্তু তার মুখের কথার সঙ্গে বাস্তবের যে কোন মিল নেই তা ভালই টের পাচ্ছেন আখাউড়াবাসী।
গরম নেই,ঝড় নেই, তুফান নেই,লোডসেডিং নেই তারপরও সমগ্র আখাউড়া উপজেলায় বিদ্যুৎ থাকছে না ঘন্টার পর ঘন্টা। আর এ বিষয়ে জানতে চাইলেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রীড লাইনে কাজের অজুহাত তুলে ধরেন ডিজিএম সাহেব। এসএসসি পরীক্ষার সময় বিদ্যুতের এমন তেলেসমাতিতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
এটা কি ‘সিস্টেম লস্ট, লোডশেডিং না বিদ্যুৎ বিভ্রাট’ এ বিষয়টি সম্পর্কেও অন্ধকারে গ্রাহকরা। এ অবস্থা আখাউড়ার সর্বত্র। লক্ষ্য করা গেছে, গত এক মাস ধরে চরম হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায়। ঘন ঘন ঘটছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজী।
জানা গেছে, চলতি বছর শুরুতেই টানা ১০ দিন বিদ্যুতের মুখ দেখা যায়নি। জানতেই চাইলেই পল্লী বিদ্যুত সমিতি আখাউড়া জোনাল অফিসের নতুন ডিজিএমের একই উত্তর ৩৩ হাজার কেভি লাইনে ত্রুটি। বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছের ডাল পড়েছে, নতুন সাব-স্টেশনে কাজের অজুহাতে প্রতিদিন দীর্ঘসময় পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন রাখা হচ্ছে আখাউড়াবাসীকে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে চিত্র এর চেয়ে ভয়াবহ বলে জানা গেছে।
নতুন ডিজিএম যোগদানের পর থেকেই নাজুক অবস্থায় আছে আখাউড়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা। দেশে চাহিদার চেয়ে বেশী উৎপাদন হলেও নিয়মিত বিদ্যুৎবিভ্রাটের শিকার হতে হচ্ছে আখাউড়াবাসীকে। ঝড়বৃষ্টির মৌসুমে তা অসহনীয় আকার ধারণ করতে পারে বলে অনেক গ্রাহকের অভিমত।
এদিকে, শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অবস্থা আরো নাজুক বলে জানা গেছে। দিনের বেলা কিংরা রাতে বেশিরভাগ গ্রামেই বিদ্যুতের বেলকিভাজি আর তেলেসমাতিতে অতিষ্ঠ সাধারন মানুষ। এনিয়ে গ্রাহকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
গ্রাহকরা অভিযোগ করেন দিনের বেলা ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকলে কিছুটা মেনে নেয়া যায়, কিন্তু রাতের বেলা যখন বিদ্যুতের তেলেসমাতি শুরু হয় তখন আর গ্রাহকরা বিরক্ত হয়ে পড়ে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
আখাউড়া পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি মনির খান, ভয়াবহ বিদ্যুত বিভ্রাটের জন্য গত ৯ই ফেব্রুয়ারী তার ফেসবুক সময়ক্রমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতির আখাউড়া জোনাল অফিসের নতুন ডিজিএম আবুল বাশারের অপসারণ চেয়ে একটি লেখা পোষ্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন নতুন ডিজিএম যোগদানের পর প্রতিদিন গড়ে ১২/১৪ ঘন্টা বিদ্যুতের লোডসেডিং হচ্ছে এবং সাথে কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুতের আসা যাওয়ায় চলছে যা আগে কখনো ছিলনা। ঘনঘন এই লোডসেডিং এর জন্য এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখার চরম ক্ষতিসহ ইলেকট্রিক সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। লেখার শেষে তিনি আইনমন্ত্রী মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে স্টাটাস দেখে পরের দিন ১০ ফেব্রুয়ারী তিনি মনির খানের সাথে দেখা করতে তার অফিসে চলে আসেন। তিনি মনির খানকে অবগত করেন-নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত দেওয়ার জন্য উন্নয়ন কাজ চলছে তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিদ্যুত লাইন বন্ধ রাখা হয়। সাময়িক বিদ্যুত সমস্যার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। এক সপ্তাহ পর আর কোন সমস্যা থাকবে না বলেও তিনি বলেছেন কিন্তু সপ্তাহ পার হলেও বিদ্যুতের কোন উন্নতি নেই।
আখাউড়া দেবগ্রামের বাসিন্দা মো: আলী আফজাল খান নামে একজন গ্রাহক তার ফেসবুক সময়ক্রমে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী লিখেছেন, অব্যাহত লোডশেডিং এর জন্য ডিজিএমের প্রত্যাহার চাই। আফজাল খান শিমুল ১১ ফেব্রুয়ারী ফেসবুক সময়ক্রমে লিখেছেন নতুন ডিজিএমের প্রত্যাহারের দাবীতে ফুসে উঠেছে আখাউড়াবাসী। নতুন ডিজিএম দায়িত্ব নেয়ার পর চরম স্বেচ্ছাচারীতা, দুর্নীতি ও ঠুনকো অজুহাতে বিদ্যুত লাইন কেটে সোজা বাইসপাস রোড ধরিয়ে দেন বলেও তিনি উল্লেখ্য করেছেন তার লেখায়।
এ ব্যাপারে ডিজিএম আবুল বাশার বলেছেন, আলী আফজাল খানের নিকট ১৪ মাসের ৫৭ হাজার টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে। এই বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে বলায় তার উপর ক্ষেপেছেন।
একই গ্রামের গ্রাহক সাংবাদিক বাদল আহমদ খান বলেছেন, বিদ্যুত সমস্যায় শুরু থেকে তিনিও বিরক্ত ছিলেন কিন্তু পরে সমস্যাটি বুঝতে পেরে চুপ রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন পরই গরম আসছে। গরমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য আখাউড়া মোগড়া ও তিনলাখপীর এলাকায় সাব-স্টেশনের কাজ চলছে। কাজ চলাকালীন বিদ্যুত বন্ধ রাখা হয়। নতুন লাইন নির্মান ও পুরাতন লাইন পরিবর্তনের সময় লাইন বন্ধ রাখতে হয় বলে তিনি জেনেছেন।
পৌর শহরের কয়েকজন গ্রাহক আরো জানায়, বিদ্যুৎ নিয়ে আমরা বড় সমস্যায় আছি। আমাদের প্রতি কারো খেয়াল নেই। অফিসেও যোগাযোগ করে কোন সুরাহা মিলেনা। বললেই জানানো হয় অপেক্ষা করেন সময় হলেই পাবেন।
তারা আরো বলেন, বর্তমান সরকার আমলে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই তারপরও বিদ্যুতের এতো তামাশা চলছে। সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এইসব তামাশা শুরু হয়েছে কি না সেটাও দেখার বিষয়। তবে এ বিষয়ে ডিজিএম আবুল বাশার বলেছেন, বিদ্যুত নিয়ে কোন তামাশা হয়না, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সরবরাহের জন্য উন্নয়ন কাজ চলছে মাত্র। এগুলো সাময়িক। গরমে গ্রাহকরা নিরববিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করবে।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা জানায়, বিদ্যুতের কোন লোডসেডিং নেই। উন্নয়ন কাজের জন্য অনেক সময় ব্রাহ্মণবাড়িযা থেকে বিদ্যুত বন্ধ রাখা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, নিরববিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য সমস্ত পুরাতন লাইন পরিবর্তন করে নতুন লাইনে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হচ্ছে তাই বিদ্যুতের আসা যাওয়া বেড়েছে। এটি সাময়িক অসুবিধা।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com