ব্রেকিং

x

আখাউড়ায় বিএনপিতে সংকট বাড়ছে, বিভক্ত হয়ে পড়েছে দুইভাগে

শনিবার, ০৬ জুন ২০২০ | ৭:৪৭ অপরাহ্ণ

আখাউড়ায় বিএনপিতে সংকট বাড়ছে, বিভক্ত হয়ে পড়েছে দুইভাগে

বিগত জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে পারছে না আখাউড়া উপজেলা বিএনপি। নেতাদের নানা প্রকার দ্বিধাদন্ধে উপজেলা বিএনপিতে সংকট বাড়ছে। বিভক্ত হয়ে পড়েছে দুইভাগে।


করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ, নেতাদের শুভেচ্ছা বিনিময় আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুই ধরণের মতামত দলটির বিভক্ত হওয়ার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।


করোনায় স্বল্প আয়ের কর্মহীন মানুষের মধ্যে মুশফিকুর রহমানের ত্রাণ সহায়তা বিতরণ হয়েছে আবার ভুইয়া ফাউন্ডেশনের নামেও ত্রাণ বিতরণ করেছে বিএনপি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নেতাকর্মীরা একেঅপরের বিরুদ্ধে নানা মতামত প্রকাশ করছেন।

আরও পড়ুন: আখাউড়ায় কর্মহীন ৪০৫ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী দিলেন সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমান

স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী জানায়, উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবুল মুনসুর মিশন, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব খন্দকার মো: বিল্লাল হোসেন, আখাউড়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি বাহার মেম্বারসহ বিএনপির একটি অংশ বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানকে দলের কান্ডারী হিসাবে দেখছেন। বিগত সময়ের মত বর্তমানেও মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিকে তারা এগিয়ে নিতে চাইছেন।

এদিকে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ডা: খোরশেদ আলম, এম.এ রউফ চৌধুরী ও উপজেলা যুবদলের নেতৃবৃন্দসহ বিএনপির অপর একটি অংশ দলের কান্ডারী হিসাবে দেখছেন আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বিগত জাতীয় নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের বিএনপি মনোনিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিনকে।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডোর আঘাতে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি

মুশফিকুর রহমান সমর্থিত কয়েকজন জানায়, সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ কসবা-আখাউড়া আসনে দুইবার বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে একবার এমপি হয়েছেন। এমপি হওয়ার আগে দেশের সচিব ও বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের মত বড় কয়েকটি দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা হিসাবে চলমান দায়িত্বে রয়েছেন। ২০০০ সাল থেকে প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি আখাউড়া উপজেলা বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিগত সংসদ নির্বাচনে মুশফিকুর রহমানের প্রার্থীতা অবৈধ ঘোষণার পর দলের মনোনয়ন পায় ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিন। প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামার পর আদালতে মুসলিম উদ্দিনের প্রার্থীতাও অবৈধ ঘোষিত হয়। বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তখনই উপজেলা বিএনপি ভাগ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে ১লা সেপ্টেম্বর থেকে মুসলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ডা: খোরশেদ আলম ও এম.এ রউফ চৌধুরীসহ বিএনপির কয়েকজন আলাদা হয়ে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালন শুরু করে। হাতেগোনা কয়েকজন বাদে উপজেলা বিএনপির জনপ্রিয় নেতৃবৃন্দরা সবাই মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে দলীয় সকল কর্মসূচী পালন করছে বলে তারা জানান। এতে বিএনপিতে তেমন প্রভাব পড়বে না বলেও তারা মত প্রকাশ করেছেন।

মুসলিম উদ্দিনের সমর্থকরা জানিয়েছেন, আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম্ উদ্দিন বিগত জাতীয় নির্বাচনে অন্যান্য প্রার্থীদের পেছনে ফেলে দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনের মাঠে ছিলেন। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সকল প্রতিকুলতার মধ্যেও মুসলিম উদ্দিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। দলের দু:সময়ে মুসলিম্ উদ্দিন মাঠে থেকে দলকে পরিচালনা করলেও মুশফিকুর রহমান ছিলেন বিদেশে। এছাড়া বর্তমানে ভু্‌ইয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কবির আহাম্মদ ভুইয়া তাদের সাথে অংশগ্রহন করায় মুসলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে দলটিকে শক্ত অবস্থানে নিতে পারবে বলেও তারা ধারণা করছেন।

আরও পড়ুন: আখাউড়ায় ভুমিহীনরা পাচ্ছে বাসস্থান. ৪ হাজার আবেদন যাচাই করে তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে

উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবুল মুনসুর মিশন জানায়, বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা মুশফিকুর রহমান। নিয়মিত নেতাকর্মীদের খোজ রাখছেন। বিদেশে বসেও দলকে পরিচালনা করছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিন, ডা: খোরশেদ আলম ও এম.এ রউফ চৌধুরী উপজেলা বিএনপির সাথে দলীয় কর্মসূচীতে অংশগ্রহন না করে নিজেরা আলাদা হয়ে কর্মসূচী পালন করছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরাও অবগত রয়েছেন। বর্তমানে ভুইয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কবির আহাম্মদ ভুইয়াকে তারা সঙ্গে নিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি কবির আহাম্মদ ভুইয়ার বাড়িতে শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে তারা সামাজিক দুরত্ব অমান্য করেছে, অনেকের মুখে মাস্ক ছিলনা। এই সমস্ত বেআইনী কর্মকান্ডে আমরা বিশ্বাসী নয়।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন করে আরও ৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এম,এ রউফ চৌধুরী জানায়, বিগত নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তি হিসাবেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ কসবা-আখাউড়া আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছে ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিন। ২০১৩-১৪ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে একমাত্র ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিন মাঠে ছিলেন, তখন মুশফিকুর রহমান ছিলেন বিদেশে। বিগত ১৫ বছর ধরেই মুশফিকুর রহমান বিদেশে থাকছেন। বিগত নির্বাচনের আগে কয়েকদিনের জন্য তিনি দেশে এসেছিলেন।

তিনি আরো জানান, নিয়ম অনুযায়ী দলের সর্বশেষ মনোনিত প্রার্থী হয় দলের নেতা। তাই ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আমরা বিএনপির রাজনীতি করছি। সবাইকে বলেছি আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে। ভুইয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো: কবির আহাম্মদ ভুইয়াকে সঙ্গে নিয়ে করোনা পরিস্থিতিতেও আমরা মাঠে আছি।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা ভাইরাসের দাপট, তিনদিনে আক্রান্ত ৮৫ জন

উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব খন্দকার মো: বিল্লাল হোসেন জানান, বিএনপি বড় একটি দল। উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিএনপির কমিটি রয়েছে। এতো বড় দলে কিছু সমস্যা থাকবেই। দলের স্বার্থে এই সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!