বর্তমানে মানুষের চরম আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের আক্রমন থেকে বাচতে মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে। ইতিমধ্যে আখাউড়ায় ১৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। টানা লকডাউনে উপজেলার জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। মুদিমালের দোকান ছাড়া সব দোকানই বন্ধ। ব্যবসার সুযোগ পেয়েছে শুধু তারাই। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ি ফায়দা লুটছে। বিপদের সময় মানুষের সাথে করছে বাটপারী। দ্বিগুণ দামে বিক্রয় করছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। বিশেষ করে নানা বাহানায় ডাল থেকে শুরু করে আদা, মরিচ, ডাল, মুড়ি, জিরাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রয় করছে। গ্রামাঞ্চলে এর প্রভাব অনেক বেশি।
সরকার বলেছে নিত্য প্রয়োজনীয় সব মালামাল পর্যাপ্ত মজুত আছে। ‘তাহলে কেন সংকট তৈরি করে মালামালের দ্বিগুণ দাম নেয়া হচ্ছে’ এই কথা এখন মানুষের মুখে মুখে।
রাধানগরের বাসিন্দা রুমেল (৩৫), দুর্গাপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর (৩৮), মনিয়ন্ধ গ্রামের আজগর আলী (৪৪) মোগড়ার রতন পারভেজ(৫৫)সহ অনেকেই জানিয়েছে কিছুদিন আগেও মরিচ ক্রয় করেছি ২০০ টাকা কেজি, বর্তমানে তা কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দাম ৪০০ টাকা কেজি।
তারা আরো জানায়, আদার দাম আগে ছিল ১০০ টাকা, বর্তমানে ২৮০ টাকা, মশুরীর ডাল ছিল ৫৫ টাকা কেজি, বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা করে কেজি, জিরার দাম ২৬০ টাকা স্থলে হয়েছে ৪৫০ টাকা কেজি, চিরা ৪০ টাকার স্থলে ৬৫ টাকা ও মুড়ি ৫০ টাকার স্থলে ৭০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যও প্রায় দ্বিগুণ দামে ক্রয় করতে হচ্ছে।
বাজারে খোজ নেয়ার সময় কয়েকজন ভোক্তা বলেন, ভোক্তা অধিকারের ব্যাপারে প্রশাসনের ওপর আমরা নির্ভরশীল। প্রশাসন নিয়মিত মাঠে কাজ করছে. তা অস্বীকার করার কারণ নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অসাধু ব্যবসায়িরা প্রশাসনের সাথে চোর-পুলিশ খেলে।
অনেকটা এমন যে, প্রশাসন যখন মনিটরিংয়ে আসে, তখন পৃথিবীর সবচেয়ে ভদ্র ব্যবসায়ীর ভূমিকায় থাকেন অসাধুরা। আবার যখন প্রশাসন চলে যায়; তখন ভোক্তারা তাদের পুরোনো রূপ ঠিকই দেখতে পান।
এদিকে খবর নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের বাজার হাটের দোকানগুলোতে প্রতিটি দ্রব্যের দাম আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। মনিয়ন্ধের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম (৫২) জানায়, দামের ব্যাপারে ছোট দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলে তারা বড় দোকানদেরকে দেখিয়ে দেয়, আবার বড় দোকানীর নিকট জানতে চাইলে তারা আড়ৎদারদের দেখায়। এ যেন দেখাদেখির মহোৎসব চলছে গ্রামগঞ্জে।
আরেক ভোক্তা রবিউল মিয়া (৬৫) জানায়, অনেক সময় প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে হাতেনাতে ধরে জরিমানা করে কিন্তু কোটিপতি ব্যবসায়ীকে হাজার টাকা জরিমানা করলে তাদের কিছু যায় আসে না।
তিনি আরো বলেন, দুঃসময়ে যারা জাতির সাথে ঠাট্টা করে; তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। এদের জরিমানা না করে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হোক।
খবর নেয়ার সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন ভোক্তা জানায়, রমজান মাস শুরু হয়েছে। রমজানে ফায়দা লুটতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়াতে পুণ্য মজুত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিয়ান প্রয়োজন।
তিনি আরো জানান, হাতে গোনা কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী মিলে এই অপকর্ম করছে আর চাপ পড়ছে সাধারন মানুষের উপর। ছদ্মবেশে অভিযান চালালেই এদের চিহ্নিত করা সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে খারাপ লাগে তখন; যখন তারা আমাদেরকে বলেন, ‘নিলে নেন, না নিলে না নেন!’
আখাউড়া সড়ক বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ি জানায়, তারা মাল ক্রয় করছেন বেশী দামে তাই বিক্রয় করতে হয় বেশি দামে। এখানে তাদের কোন হাত নেই বলেও জানান।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা জানায়, ভোক্তার অধিকার আইনে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে হবে। কাউকে অবৈধ মুনাফা আদায়ের সুযোগ দেয়া হবে না।
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com