রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ফেসবুকের অপব্যবহার হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়। ফেসবুকে ভুয়া আইডি থেকে উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নামে ছড়ানো হচ্ছে ‘বিব্রতকর তথ্য’। এ থেকে রেহায় পাননি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও তার ব্যক্তিগত সহকারী রাশেদুল কায়ছার ভূইয়াও। তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ এনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ সদর দফতর ৫টি মামলা তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে।
দলীয় নেতা-অনুসারীদের দায়ের করা এসব মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. শাহ আলম এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শ্যামল কুমার রায়সহ তাদের অনুসারী এবং অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ‘ক্রস ফায়ার’, ‘জাগ্রত জনতা’, ‘জয় হাসান’ ও ‘সৈয়দ মহসিন’ সহ বেশ কয়েকটি আইডি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য আনিসুল হক ও তার ব্যক্তিগত সহকারী রাশেদুল কায়ছার ভূইয়া সম্পর্কে নানা অপপ্রচার চালানো হয়। এ অভিযোগে তিনদিনের ব্যবধানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭/২ ধারায় ৫টি মামলা রেকর্ড করে কসবা থানা পুলিশ।
এর মধ্যে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান স্বপনের দায়ের করা মামলাটি গত ২৪ এপ্রিল, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. রবিউল্লার দায়ের করা মামলাটি ২৫ এপ্রিল এবং সাবেক সংসদ সদস্য শাহ আলম ও যুবলীগ নেতা শ্যামল কুমার রায়ের বিরুদ্ধে করা যুব মহিলা লীগ নেত্রী শিউলি আক্তার রত্না মামলাটি ২৬ এপ্রিল রেকর্ড করা হয়। এছাড়ও উপজেলা যুবলীগ নেতা এম এইচ মানিক ও মাহবুবুর রহমানের মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
একটি মামলার বাদী ও কসবা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সালমা আক্তার বলেন, আমি ‘কসবা থানা যুব মহিলা লীগ’ নামে নিজে একটি আইডি পরিচলানা করতাম। এ আইডি থেকে আমি দলীয় নানা কর্মকাণ্ড ও আইনমন্ত্রী এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী সম্পর্কে পোস্ট দিতাম। এসব পোস্টে তাদের সম্পর্কে ‘জয় হাসান’ ও ‘সৈয়দ মহসিন’ সহ আরও কয়েকটি একটি আইডি থেকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হতো। পরবর্তীতে আমি বাধ্য হয়ে আইডিটি বন্ধ করে দেই। আইডিগুলোতে শুধুমাত্র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ আলম ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শ্যামল কুমার রায় সম্পর্কিত পোস্ট দেয়া হতো। তাই আমার সন্দেহ আইডিগুলো হয়তো শাহ আলম ও শ্যামল কুমার রায়ের অনুসারীরা পরিচালনা করেন।
আইনমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী রাশেদুল কায়ছার বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা নিজেদের অপকর্মের কারণে এলাকায় আসতে পারেন না। আমি বাদীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেনো শাহ আলম ও শ্যামলকে আসামি করা হয়েছে। বাদী জানিয়েছে যেসব আইডিগুলো থেকে অপপ্রচার চালানো হয় সেই আইডিগুলোতে প্রতিনিয়ত শাহ আলম ও শ্যামলের ছবি পোস্ট করা হয়।
মন্ত্রী ও তার ব্যক্তিগত সহকারীর সম্পর্কে ফেসবুকে অপপ্রচার চালানোর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানায়, ফেসবুকের মতো একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে এক শ্রেণির মানুষ রাজনীতিকদের চরিত্র হরণ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলের চেষ্টা করছে, যেটি দুঃখজনক ও অরুচিকর। আইনমন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকা কসবা-আখাউড়ার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন। প্রায় ১০০০ বেকার যুবক-যুবতীকে সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মন্ত্রী ব্যক্তিগত সহকারী রাশেদুল কায়ছার ভূইয়াও পরিশ্রম করছেন। যে ধরণের অপচর্চা চলছে তাতে করে ভদ্রলোকরা আর রাজনীতিতে আসবেন না।
তবে এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহ আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি তিনি। কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শ্যামল কুমার রায়ের নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
মামলাগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কসবা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুল করিম বলেন, মামলাগুলো পুলিশ সদর দফতর থেকে অনুমোদন দেয়ার পর আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করি। যে আইডিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সিআইডির মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের মতামত পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জাগো নিউজ
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com