ব্রেকিং

x

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

অহেতুক কেউ হয়রানি হবেনা-আইনমন্ত্রী

বুধবার, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ | ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ

অহেতুক কেউ হয়রানি হবেনা-আইনমন্ত্রী

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, অতি গোপনীয় জিনিসটা যদি সঠিক হয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি অতি গোপনীয় রাখতে চায়, সেটা তো আপনাদের প্রকাশ করা ঠিক হবে না। কারণ এটা অপরাধ, আগেও ছিল, এখনও আছে। আমরা যদি কোনো ফাইলে ‘অতি গোপনীয়’ লিখে রাখি সেটা প্রকাশ করা ৩২ ধারা ছাড়াও কি উচিত?


তবে কেউ যদি চুরি করে থাকে, সেটা একটা অপরাধ। এসব তথ্য আপনারা (সাংবাদিক) প্রকাশ করতে পারবেন। এতে আইনে কোনো বাধা নেই। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। দুর্নীতির কোনো খবর প্রকাশ করলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে না বলেও সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছেন আইনমন্ত্রী।


সোমবার মন্ত্রিসভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর খসড়া পাস হওয়ার পর সাংবাদিক সমাজ আইনটির ৩২-সহ কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ আইন ৫৭ ধারার চেয়েও ভয়ংকর। তারা আইনটি সংসদে পাস হওয়ার আগে সংশোধনী আনার দাবি জানিয়েছেন। বিশেষ করে ৩২ ধারা বাতিলেরও দাবি করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা মঙ্গলবার আইনমন্ত্রীর কাছে নতুন আইনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তারা জানতে চান ৫৭ ধারার মতো ৩২ ধারা দিয়েও হয়রানি করা হবে কিনা, এ ধারাটি জামিন অযোগ্য করা হয়েছে এটা জামিনযোগ্য করা হবে কিনা। আইনমন্ত্রী এসব প্রশ্নের জবাব দেন। তথ্যপ্রযুক্তি আইন থেকে ৫৭ ধারা সরিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিশদ আকারে কয়েকটি ধারা যোগ করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী এদিন বলেন, বিতর্কিত ওই ধারাটি বাকস্বাধীনতা হরণ করার ‘একটি উপায়’ ছিল। তিনি দাবি করেন, ওই ধারার বিষয় প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুক্ত করা হলেও তাতে বাক বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়নি। ৫৭ ধারার যে ‘অপপ্রয়োগ’ হচ্ছিল, নতুন আইন হলে তা বন্ধ হবে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন ৫৭ ধারা যেটা ছিল, সেটার মধ্যে কোনো কিছু না করলেও আপনাকে আমি যদি পুলিশ হই আমি এটার মধ্যে ভরে দিতে পারব। (আইসিটি আইন) ২০০৬ সালে করা হয়েছিল, এটা কিছুটা হলেও বাকস্বাধীনতা হরণ করার একটা উপায় ছিল। এখানে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। বাকস্বাধীনতা হরণ করার চেষ্টাও (এখানে) করা হয়নি এবং এ আইন বাকস্বাধীনতা কারও হরণ হয়নি।

আইনমন্ত্রী দাবি করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিভিন্ন অপরাধ সংজ্ঞায়িত করে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল উপায়ে ধারণ, স্থানান্তর বা সংরক্ষণ করা এবং তাতে সহায়তাকে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া যাবে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মতোই এ আইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকরা। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা পড়ে শোনান।

সেখানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘এটা পড়লে মনে হয় পৃথিবীর যত অপরাধ সব একটার মধ্যে আনা হয়েছে। অস্পষ্টতা যেটা ছিল সেটার কথা আমি বলছি। আপনাদের যে শঙ্কা ছিল ৫৭ ধারাটা অস্পষ্ট এবং যে কোনো ছোটখাটো অপরাধ করলেও এটার মধ্যে এমনভাবে ভাষাটা করা হয়েছে যে, এটার মধ্যে এনে ন্যূনতম সাত বছর সাজা দেয়া যেতে পারে। এই আপত্তির আলোকেই আমরা আশ্বাস দিয়েছিলাম, আইসিটি আইন থেকে ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস হলেই আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হবে।

আনিসুল হক বলেন, কম্পিউটার দ্বারা যেসব অপরাধ আগে পেনাল কোডে ছিল, সেগুলো যদি যান্ত্রিকভাবে করা হয়, সেগুলোকে অপরাধ গণ্য করে আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি। ৫৭ ধারায় সাত বছরের নিচে কোনো সাজা ছিল না। এটার মধ্যে (নতুন আইন) আমরা তিন বছর করে দিয়েছি। আমাদের ইচ্ছা ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধ করা। আমাদের বিশ্বাস, এ আইনের স্পষ্টতার কারণে ৫৭ ধারার যে অপপ্রয়োগ হচ্ছিল সেটা বন্ধ হবে।

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, গুপ্তচরবৃত্তিকে আগে থেকেই আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। আমরা যেটা করেছি, ওই যে কম্পিউটার সিস্টেম বা ইনফর্মেশন টেকনোলজির মধ্যে কেউ যদি গুপ্তচরবৃত্তি করেন, তাহলে সেটাকে অপরাধ বলে ধরা হয়েছে। সেটার সঙ্গে সাংবাদিকতার কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। আমার মনে হয় এটা অহেতুক ভীতি আর সমালোচনার জন্য সমালোচনা করা।

আনিসুল হক বলেন, ‘অহেতুক, অযথা কারও হয়রানি হোক প্রধানমন্ত্রী তা চান না, সে জন্য কোনো আইনের মধ্যেও সে রকম কোনো ব্যবস্থা থাক, তিনি চান নাই। সেই কারণে স্পষ্ট করেই এ ধারাগুলো দেয়া হয়েছে। সম্প্রচার আইন পাস হওয়ার পর সাংবাদিকদের কেউ অহেতুক হয়রানি করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকদের কোন কোন কার্যক্রম গুপ্তচরবৃত্তির মধ্যে পড়বে না- সেই ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনি যদি ইলিগ্যাল কোনো জিনিসের কথা ছাপিয়ে দেন যে, কেউ চুরি করছে- সেটি অপরাধ হতে পারে না। কোনো বইতে নাই যে সেটা অপরাধ। কম্পিউটারের মধ্যে থাকলেও সেটা যদি ইলিগ্যাল হয়, আর আপনি যদি প্রকাশ করেন, সেটা অপরাধ হতে পারে না। তিনি বলেন, অপরাধ করার জন্য যদি গোপন কোনো ষড়যন্ত্র হয়, আর সাংবাদিকরা যদি তা প্রকাশ করে দেয়, সেটা অপরাধ হবে না। কোথাও কোনো অপরাধ হলে, সাংবাদিক

তা ধারণ করলে, প্রকাশ করলে এবং তার হাতে তথ্য-উপাত্ত থাকলে তা অপরাধ বিবেচিত হবে না। চলতি সংসদ অধিবেশনেই আইনটি উঠবে বলে তিনি আভাস দেন। সুত্র: যুগান্তর

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!